দ্য অ্যাভেঞ্জার: লকারবি বম্বমেকারের সন্ধানে

লকারবি ইনভেস্টিগেশন নিয়ে নিউইয়র্কারের একটা ফ্যাসিনেটিং লংফর্ম আর্টিকেল পড়লাম – The Avenger। এফবিআই যা পারেনি, নিহত এক ব্যক্তির ভাই নিজস্ব অবসেশন থেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কীভাবে তা সম্ভব করে দেখিয়েছে, অর্থাৎ লকারবির বম্ব মেকারকে খুঁজে বের করেছে, সেই কাহিনী। মাইন্ডব্লোয়িং একটা পিস।

লকারবি বম্বিংয়ের ঘটনাটা ১৯৮৮ সালের। সে বছর স্কটল্যান্ডের লকারবি শহরের আকাশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্যান অ্যাম ফ্লাইট ১০৩-এর লাগেজ কম্পার্টমেন্টে রাখা একটি টাইম বোমা বিস্ফোরিত হয়। ফলে ২৫৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল মার্কিন নাগরিক। এই ঘটনাটাই লকারবি বম্বিং নামে পরিচিত। এবং এটা ছিল তখন পর্যন্ত মার্কিন বেসামরিক নাগরিকদেরকে লক্ষ্য করে সংঘটিত সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলাগুলোর মধ্যে একটা।

প্রাথমিকভাবে ঐ ঘটনার পেছনে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরানসহ বিভিন্ন দেশকে এবং সেসব দেশের বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে দায়ী বলে সন্দেহ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তদন্ত কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এটা আসলে লিবিয়ার কাজ।

এই ঘটনার জের ধরে লিবিয়ার উপর কঠোর অবরোধ আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে লিবিয়া অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য হস্তান্তর করলে অবরোধ শিথিল করা হয়। আরও পরে গাদ্দাফির সরকার নিহতদের প্রত্যেককে ১ মিলিয়ন ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হওয়ার পর লিবিয়ার উপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয় এবং পশ্চিমা বিশ্বের সাথে লিবিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।

আন্তর্জাতিক আদালত ঐ ঘটনার জন্য দুইজনের বিচার করে। এর মধ্যে একজনকে তারা খালাস দেয়। কিন্তু অপরজন, আব্দুল বাসেত আল-মেগরাহিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। তবে অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার শর্ত হিসেবে তাদেরকে হস্তান্তর করলেও এবং পরবর্তীতে নিহতদেরকে ক্ষতিপূরণ দিলেও আনুষ্ঠানিকভাবে গাদ্দাফি কখনোই লকারবি বম্বিংয়ের জন্য দায় স্বীকার করেনি।

আব্দুল বাসেত আল-মেগরাহির বিচারের ব্যাপারটা কিছুটা বিতর্কিত ছিল, কারণ তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো সাক্ষী-প্রমাণ বা স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়নি। সব প্রমাণ ছিল সার্কামস্ট্যানশিয়াল। বম্বিংয়ের পরপরই এফবিআইর তদন্ত কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলের অদূরে বোমার একটা অংশ খুঁজে পেয়েছিল, যার সাথে একটা শার্টের ছেঁড়া কলারের টুকরা গেঁথে ছিল। এ থেকেই তাদের সন্দেহ হয়, এই শার্টটা দিয়েই বোমাটা পেঁচানো ছিল।

শার্টের কলারের লেবেল থেকে তার মাল্টার একটা দোকানের খোঁজ পায়। খোঁজ নিতে গিয়ে তারা জানতে পারে, লিবিয়ান গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেগরাহি এর আগের দিন মাল্টায় অবস্থান করছিল। সন্দেহ থেকে তারা ঐ দোকানে গিয়ে মেগরাহির ছবি দেখালে দোকানদার শনাক্ত করতে সক্ষম হয় যে, মেগরাহিই তার কাছ থেকে ঐ শার্ট কিনেছিল। এছাড়াও বোমার সার্কিট ডিজাইনের সাথেও এর আগের কিছু সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত বোমার ডিজাইনের মিল পাওয়া গিয়েছিল, যেগুলোর সাথে লিবিয়ার সম্পৃক্ততা ছিল। এ থেকেও লিবিয়ানদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে সন্দেহ জোরালো হয়।

কিন্তু বিতর্কটা সৃষ্টি হয়, যখন ঐ বোমার ইলেক্ট্রনিক্স পার্টগুলো যার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল, সুইস নাগরিক এডউইন বলিয়ের, সে কোর্টে উঠে তার ভূমিকা অস্বীকার করে। তার হওয়ার কথা ছিল এফবিআইর প্রধান সাক্ষী। কিন্তু কোর্টে গিয়ে সে দাবি করে, এফবিআই তাকে ফ্রেম করার জন্য এভিডেন্স ইমপ্ল্যান্ট করেছে। তার সাক্ষ্য ভেস্তে যাওয়ার কারণেই দ্বিতীয় অভিযুক্ত লিবিয়ান, আল-আমিন খালিফা এফহেইমাকে আদালত বেকসুর খালাস দিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

মেগরাহির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও সারকামস্ট্যানশিয়াল বিভিন্ন প্রুফের কারণে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু এই বিচারে অনেকেই কনভিন্সড ছিল না। উদাহরণ হিসেবে ব্রিটিশ নাগরিক জিম সয়্যারের কথা বলা যায়। তার মেয়ে লকারবি বম্বিংয়ে নিহত হয়েছিল। এবং এরফলে সে ছিল এই মামলা নিয়ে ভীষণ রকমের অবসেসড। শুরু থেকে সে প্রতিটা ডিটেইলস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ করে আসছিল। নেদারল্যান্ডসের আদালতেও শুনানির প্রতিটা দিন সে উপস্থিত ছিল।

কিন্তু মামলা যত এগোতে থাকে, ততই তার সন্দেহ হতে থাকে, মেগরাহি হয়তো আসলে নির্দোষ। হামলাটা হয়তো অন্য কেউ করেছে, মাঝখান থেকে রাজনৈতিক কারণে লিবিয়াকে এবং তার অংশ হিসেবে মেগরাহিকে ফাঁসানো হয়েছে। এবং মামলা শেষ পর্যায়ে যেতে যেতে মেগরাহির সাথে তার খুব ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। এমনকি ২০১০ সালে ক্যান্সারের কারণে মেগরাহিকে স্কটিশ সরকার মুক্তি দেওয়ার পরেও সয়্যার একাধিকবার লিবিয়াতে এসে তার সাথে সাক্ষাৎ করে।

সত্যিকার গুপ্তচরদের কাহিনী নিয়ে আমার লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ” এখন আপনি পড়তে পারবেন অনলাইনেই। অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে। এই লিঙ্কে গিয়ে ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে এরপর বিকাশ, রকেট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মাত্র ৯৯ টাকা পরিশোধ করলেই আপনি পেয়ে যাবেন পুরো বইটি। পড়তে পারবেন মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্রাউজার উভয় প্লাটফর্ম থেকেই। আর হার্ডকপি কিনতে চাইলে রকমারি তো আছেই।

নিউইয়র্কারের আর্টিকেলটাতে লকারবির পটভূমি, মেগরাহির বিরুদ্ধে প্রমাণ, জিম সয়্যারের সাথে তার বন্ধুত্ব – সব কিছুর কথাই এসেছে। কিন্তু আর্টিকেলটার মূল নায়ক অন্য একজন – কেন ডর্নস্টাইন। সয়্যারের মতোই সেও ছিল এই ঘটনা নিয়ে প্রচণ্ড রকমের অবসেসড। কারণ তার ভাই ডেভিড ডর্নস্টাইন এই হামলায় নিহত হয়েছিল।

এফবিআইর তদন্তের বাইরে গিয়ে কেন সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করতে থাকে। তার বাসায় বিশাল একটা রুমকে সে সম্পূর্ণ আলাদা করে রাখে এ সম্পর্কিত তদন্তের জন্য। সিনেমাতে যেরকম দেখানো হয় তদন্ত কর্মকর্তারা দেয়ালের গায়ে সন্দেহভাজনদের ছবি, পত্রিকার ক্লিপিংস সেঁটে রাখে, বাস্তব জীবনে কেন নিজেও ঠিক সেরকম করেই তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকে। তার রুম ভরে ওঠে শুধু পত্রিকার ক্লিপিংসে না, মার্কিন এবং ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন ডিক্লাসিফাইড ডকুমেন্ট থেকে পাওয়া এই মামলা সংক্রান্ত নতুন নতুন তথ্যেও।

২০১০ সালে ক্যান্সারের কারণে মেগরাহি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই কেনের ইচ্ছা ছিল লিবিয়ায় গিয়ে তার সাথে দেখা করার, তার মুখ থেকে সরাসরি তার ভাষ্য জানার চেষ্টা করার। কিন্তু গাদ্দাফির লিবিয়াতে সেটা ছিল অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেই সুযোগটা কেন পেয়ে যায় ২০১১ সালে, গাদ্দাফীর পতনের পর। সে বছর যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগেই সে লিবিয়ায় গিয়ে উপস্থিত হয়।

অফিশিয়ালি এই মামলায় দুইজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হলেও বাস্তবে সন্দেহভাজন ছিল প্রায় এক ডজন, যাদের অধিকাংশই ছিল লিবিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। কেন ডর্নস্টাইন লিবিয়াতে গিয়ে এক এক করে তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। অধিকাংশই অবশ্য ততদিনে পলাতক বা মৃত, কিন্তু তারপরেও মেগরাহিসহ বেশ কয়েকজনের আত্মীয়-স্বজনের সাথে সে দেখা করতে সক্ষম হয়। এদের মধ্যে একজন ছিল এয়ারলাইন্স অফিসার বাদরি হাসান। সে ততদিনে মৃত্যুবরণ করেছিল, কিন্তু তার স্ত্রী সোয়াদ কেনের কাছে স্বীকার করে, যদিও তার স্বামী কখনোই সরাসরি বলেনি, কিন্তু তার বিশ্বাস তার স্বামী এতে জড়িত ছিল।

সোয়াদ এবং তার ভাইদের কাছ থেকেই কেন জানতে পারে, লকারবি বম্বিংয়ের আগে বাদরি হাসান প্রায় এক বছর পর্যন্ত জুরিখে ছিল। এবং সে সময় সে এবং মেগরাহি একই অফিসে চাকরি করত। আর তাদের সাথে এক সুইস নাগরিক, এডউইন বলিয়েরের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কেন যদি আরও কিছু জানতে চায়, তাহলে সে যেন বলিয়েরের সাথে যোগাযোগ করে।

এই বলিয়েরই ছিল এফবিআইর সেই সাক্ষী, যে পরবর্তীতে কোর্টে গিয়ে নিজের সম্পৃ্ক্ততা অস্বীকার করেছিল। তারপরেও কেন সুইজারল্যান্ডে গিয়ে তাকে খুঁজে বের করে। বলিয়ের দাবি করে, তার সাথে মেগরাহি এবং হাসানের সম্পর্ক ছিল সত্য, সে অতীতেও বিভিন্ন সময় তাদের কাছে বোমা তৈরির ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বিক্রি করেছিল, এটাও সত্য। এমনকি সে তাদের সাথে লিবিয়াতেও গিয়েছিল। কিন্তু লকারবির সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নাই।

তবে বলিয়েরের কাছ থেকে কেন আরেকজন সন্দেহভাজনের নাম জানতে পারে – আবু আগিলা মাসউদ। লিবিয়ান সেনাবাহিনীর একজন কর্ণেল। বোমা বিশেষজ্ঞ। বলিয়ের যখন লিবিয়ায় গিয়েছিল, তখন এই কর্ণেলের সাথেই তার যোগাযোগ হয়েছিল বোমা তৈরির ব্যাপারে। বলিয়েরের বিবরণ অনুযায়ী, সেই কর্ণেল ছিল অত্যন্ত কৃষ্ণ বর্ণের।

আবু আগিলা মাসউদ নামটা কেন আগেও দেখেছিল। আশির দশকে পশ্চিম জার্মানির একটা ক্লাব, লা বেল ডিস্কোতে বোমা হামলায় দুই মার্কিন সেনাকে হত্যার ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা ছিল। ঐ ঘটনার পর এক লিবিয়ান কর্মকর্তা, মেসবাহ ইতার স্বীকারোক্তি দিয়েছিল, যে ব্যক্তি বোমাটা তৈরি করেছিল, সে হচ্ছে লিবিয়ান এক কৃষ্ণাঙ্গ কর্ণেল। এবং তার নাম আবু আগিলা।

কিন্তু কে এই আবু আগিলা? কেন এফবিআইর সাথে যোগাযোগ করে। তারাও এই নাম শুনেছিল, কিন্তু তাদেরও পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। তাদের ধারণা ছিল এটা হয়তো আসল নাম না, ছদ্মনাম। তাছাড়া লকারবির ঘটনার রায় হয়ে যাওয়ার পর তাদের এ ব্যাপারে আর কোনো আগ্রহও ছিল না। কিন্তু কেন তার নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকে।

পড়ুন এরকম আরেকটি লং রিড আর্টিকেলের রিভিউ: আবু মোহাম্মদ আল-মাসরির প্রোফাইল: ২০২০ বেস্ট আর্টিকেলস

লিবিয়ায় গিয়ে কেন লিবিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার আর্কাইভ থেকে পুরানো কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছিল। সেখানে একটা ভিডিও ক্লিপ ছিল মেগরাহিকে মুক্তি দেওয়ার পর সে যখন ত্রিপোলি এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছেছিল, তখন তাকে স্বাগত জানানোর দৃশ্যের। সেই ভিডিওতে গাদ্দাফির ছেলে সাইফ, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান আব্দুল্লাহ সেনুসিসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল। এবং উপস্থিত ছিল লকারবি কেসে সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকা আরো কিছু ব্যক্তিও।

কেন লক্ষ্য করে, সেখানে মাত্র এক সেকেন্ডের জন্য এক ব্যক্তিকে দেখা যায়, যে মেগরাহি গাড়িতে উঠে বসার পর তার কাছে গিয়ে তার কপালে চুম্বন করে। লোকটার গায়ের রং ঘন কৃষ্ণবর্ণ। এবং দূর থেকে করা ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা না গেলেও তার চেহারার সাথে আবু আগিলার ফাইল ফটোর কিছুটা মিল লক্ষ্য করা যায়। কেন লিবিয়াতে তার পরিচিতদের কাছে স্ক্রিনশটগুলো পাঠায়, কিন্তু তারা কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না।

অন্য কোনো সূত্র না পাওয়ায় কেনের তদন্ত শ্লথ হয়ে যায়। কিন্তু এরপর ২০১৫ সালের গ্রীষ্মকালে হঠাৎ করেই তার ইমেইলে মোবাইল ফোনে ধারণ করা একটা ছবি এসে উপস্থিত হয়। ছবিটা তাকে পাঠিয়েছে মেসবাহ ইতারের আইনজীবি। সেই মেসবাহ ইতার, যে বার্লিনের লা বেল ডিস্কো বম্বিংয়ে লিবিয়ার সম্পৃক্ততার স্বীকৃতি দিয়েছিল, এবং যে প্রথম আবু আগিলার নাম উল্লেখ করেছিল।

ছবিটা ছিল লিবিয়ার আদালতে হাজির একদল আসামীর। লিবিয়ার মিসরাতা শহরের কোনো এক কোর্টরুমে নীল রংয়ের পোশাক পরিয়ে কিছু ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হয়েছিল বিচারকার্যের জন্য। এবং সেখানে পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে ছিল এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। কেন ছবিটা সম্পর্কে আরো খোঁজ খবর নিতে শুরু করে। অবশেষে সে গেটি ইমেজে হাই রেজুল্যুশনের একটা ছবি পায়, এবং দেখতে পায় কৃষ্ণাঙ্গ লোকটার চেহারা প্রায় অনেকটাই আবু আগিলার ফাইল ফটোর সাথে মিলে যায়।

কেন খোঁজ নিতে শুরু করে লোকগুলোর অপরাধ কী? সে যোগাযোগ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক গবেষক হানান সালাহ’র সাথে, যে লিবিয়ার বিচারগুলো নিয়ে কাজ করছিল। হানানের কাছে সে জানতে চায়, এই অভিযুক্তদের মধ্যে আবু আগিলা মাসউদ নামে কেউ আছে কিনা। তাকে হতাশ করে হানান উত্তর দেয়, না, এই নামে কেউ নেই।

ফোন রেখে দেওয়ার পূর্ব মূহুর্তে হানান তাকে ডেকে বসে – এক মিনিট! একটা নাম আছে, একটু ভিন্ন, কিন্তু খুব সম্ভবত একই ব্যক্তি। মাসউদ বু’জেলা!

কেন ডর্নস্টাইনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। এত বছর পর সে অবশেষে এমন একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে পেরেছে, যে সম্ভবত লকারবির বোমা তৈরির সাথে সম্পৃক্ত ছিল, কিন্তু যার সংবাদ খোদ মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারাও জানত না!

সে হানানকে জিজ্ঞেস করে, বু’জেলার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? কী অপরাধে তার বিচার করা হচ্ছে?

হানান জানায়, তার অপরাধ বোমা তৈরির!!! তবে লকারবি না, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, লিবিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য হিসেবে ২০১১ সালে সে বোমা তৈরি করে বিদ্রোহী নেতাদেরকে হত্যার চেষ্টা করেছিল!

বু’জেলার শেষ পর্যন্ত ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। আর কেন ডর্নস্টাইন তার পাওয়া তথ্যগুলো তুলে দিয়েছিল এফবিআইর হাতে। এবং এত বছর পর সেগুলো আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে, কারণ প্রধানত কেনের এই ইনভেস্টিগেশনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই এই সপ্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লকারবি কেস রি-ওপেন করেছে এবং ঐ লিবিয়ান বম্ব মেকার, মাসউদ বুজেলার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

The Avenger শিরোনামের এই আর্টিকেলটা নিউ ইয়র্কারে প্রকাশিত হয়েছিল। লেখক Patrick Radden Keefe। লংফর্ম আর্টিকেল। পড়তে সময় লাগবে মোটামুটি ৪৫-৫০ মিনিট।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *