ইরান ক্যাবল: ইরাকে ইরানি গোয়েন্দাদের গোপন কার্যক্রমের তথ্য

এ বছরের মাঝ-অক্টোবরে বাগদাদজুড়ে যখন অস্থিরতার উত্তাল হাওয়া বইছিল, তখন সবার অলক্ষ্যে নীরবে শহরে প্রবেশ করেন এক পরিচিত ব্যক্তি। সে সময় কয়েক সপ্তাহ ধরেই ইরাকের রাজধানী বাগদাদ ছিল অবরুদ্ধ। আন্দোলনকারীরা রাস্তা দখল করে মিছিল করছিল দুর্নীতির অবসান আর প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল মাহদির পদত্যাগের দাবিতে। বিশেষত তারা নিন্দা জানাচ্ছিল ইরাকি রাজনীতিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরানের অস্বাভাবিক মাত্রার হস্তক্ষেপের। ইরানের বিরুদ্ধে তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছিল ইরানি পতাকা পোড়ানো এবং ইরানি কন্সুলেট আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে।

পরিচিত ব্যক্তিটি সেখানে গিয়েছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। কিন্তু সেখানে তার উপস্থিতিই ছিল আন্দোলনকারীদের প্রধান ক্ষোভের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কারণ তিনি ছিলেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানি, ইরানের প্রভাবশালী কুদস ফোর্সের প্রধান। এবং তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ইরাকি পার্লামেন্টের এক মিত্রের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আব্দুল মাহদিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে কাজ করতে।

ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য বাগদাদে যাওয়ার ঘটনা সোলায়মানির এটাই প্রথম ছিল না। আব্দুল মাহদিকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার তেহরানের এই প্রচেষ্টা ছিল ইরাককে নিজেদের ক্লায়েন্ট স্টেট হিসেবে ধরে রাখার তাদের সুদীর্ঘ তৎপরতারই একটা অংশ, যে তৎপরতার প্রমাণ উঠে এসেছে সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ৭০০ পৃষ্ঠার ইরানের সরকারি গোপন ডকুমেন্টে। ডকুমেন্টগুলো থেকে ইরাককে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ইরানের আক্রমণাত্মক বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং এ ব্যাপারে কাসেম সোলায়মানির বিশেষ ভূমিকার একটা পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়।

ইরান ক্যাবল, ইরানের গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ফাঁস হওয়া ডকুমেন্ট
ইরান ক্যাবল, ইরানের গোয়েন্দা অধিদপ্তরের ফাঁস হওয়া ডকুমেন্ট

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো, যা ইরান ক্যাবল নামে পরিচিতি পেয়েছে, তা হচ্ছে মূলত ইরানের গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর আর্কাইভে থাকা বিভিন্ন বার্তা এবং প্রতিবেদনের সমষ্টি, যেগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনো এক বা একাধিক কর্মকর্তা প্রথমে সংবাদমাধ্যম ইন্টারসেপ্টের কাছে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে ইন্টারসেপ্ট এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস সেগুলো নিয়ে যৌথভাবে দীর্ঘদিন তদন্ত করে, এবং অবশেষে গত ১৮ নভেম্বর একযোগে সেগুলোর উপর ভিত্তি করে সুদীর্ঘ একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

পাঁচ পর্বে প্রকাশিত এই ধারাবাহিকটিত উঠে এসেছে ইরাকে ইরানি গোয়েন্দাদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবিশ্বাস্য সব তথ্য – কীভাবে আমেরিকান আগ্রাসনের ফলে ইরানি গোয়েন্দারা ইরাককে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছে, কীভাবে তারা ইরাকের মাটিতে আমেরিকানদের উপরে গোয়েন্দাগিরি করেছে, কীভাবে একে একে তারা ইরাকের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হাত করে নিয়েছে, কীভাবে আইএসবিরোধী যুদ্ধে তারা আমেরিকার সাথে মিলে একসাথে কাজ করেছে, কীভাবে তারা আইএসের উপরেও গোয়েন্দাগিরি করেছে প্রভৃতি।

মূল ইরান ক্যাবল প্রতিবেদনটি পাঁচ পর্বে বিভক্ত হলেও রোর বাংলার জন্য আমি এটাকে অনুবাদ করেছি আটটা পর্বে। নিচে পর্বগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিচ্ছি। সেখানে গিয়ে সবগুলো পর্ব ধারাবাহিকভাবে পড়তে পারবেন। আর এখানে প্রতিটি পর্ব থেকে সংক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ কোট করে দিচ্ছি। প্রতিটি পর্বের দৈর্ঘ্য গড়ে দেড় হাজার শব্দের মতো। এখানে শুধু নমুনা হিসেবে ক্ষুদ্র একটা অংশই দেওয়া হলো।

ইরান ক্যাবল ১ম পর্ব: কী আছে লিক হওয়া ইরানি গোপন ডকুমেন্টে?

ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলোতে মূলত ইরাকের উপর ইরানের বিশাল প্রভাবের চিত্রই ফুটে উঠেছে – কীভাবে ইরানি গোয়েন্দারা বছরের পর বছর ধরে ইরাকি নেতাদেরকে হাত করার জন্য কাজ করে এসেছে, কীভাবে তারা আমেরিকানদের হয়ে কাজ করা ইরাকি গোয়েন্দাদেরকে অর্থ দিয়ে নিজেদের দলে টেনে নিয়েছে, এবং কীভাবে তারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় অঙ্গনসহ ইরাকের জনজীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ করেছে।

ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোপন ডকুমেন্টগুলোর অনেকগুলোতেই সত্যিকার গোয়েন্দাগিরির কথা এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে, মনে হয় সেগুলো যেন কোনো স্পাই থ্রিলারের পাতা থেকে হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে। এসব ডকুমেন্টে স্থান পেয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন গলির ভেতরে, শপিং মলে, শিকার অভিযানের কিংবা জন্মদিনের পার্টির কভারে আয়োজিত গোপন মিটিংয়ের কথা।

স্থান পেয়েছে বাগদাদ এয়ারপোর্টের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা ইরানি গোয়েন্দাদের কথা, গোপন ক্যামেরা দিয়ে আমেরিকান সৈন্যদের ছবি তুলে ফেলার কথা, আমেরিকার সামরিক প্লেনগুলোর ওঠানামার সময়সূচী নোটবুকে টুকে রাখার কথা, নজরদারি এড়ানোর জন্য মিটিংয়ে যাওয়ার সময় এজেন্টদের ঘুরপথে গাড়ি চালানোর কথা।

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ২য় পর্ব: ইরাকের মাটিতে ইরানি গোয়েন্দাদের অজানা অপারেশনগুলো

মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের গোপন ডকুমেন্ট অনুযায়ী, ইরান দীর্ঘদিন ধরেই ইরাকের মাটিতে আমেরিকানদের তৈরি করা বিভিন্ন সুযোগের সদ্ব্যবহার করে এসেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১১ সালে সেনা প্রত্যাহারের পর থেকে ইরাকে আমেরিকানদের কার্যক্রম যখন ক্রমেই হ্রাস পেতে শুরু করে, ইরান তখন আমেরিকানদের ইনফর্মারদেরকে হাত করে নেয়।

ইরাক ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় সিআইএ দীর্ঘদিন ধরে তাদের হয়ে কাজ করা ইরাকি এজেন্টদেরকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যায়। চাকরিবিহীন, নিঃসম্বল এই এজেন্টদের সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, আমেরিকানদের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে তাদের উপর উপর হয়তো প্রতিশোধমূলক হামলা হতে পারে। তাই তাদের অনেকে নিজেরাই ইরানের সাথে যোগাযোগ করে তাদের হাতে সিআইএর সকল তথ্য তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

এই এজেন্টদের একজন ছিল এক ইরাকি, সিআইএর ফাইলে যার ছদ্মনাম ছিল “ডনি ব্রাস্কো”, আর ইরানি ডকুমেন্টে তার পরিচয় ছিল শুধুমাত্র “সোর্স ১৩৪৯৯২” হিসেবে। ডকুমেন্ট থেকে জানা যায়, ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৮ মাস পর্যন্ত সোর্স ১৩৪৯৯২ সিআইএর হয়ে কাজ করে। তাকে নিয়োগ করা হয়েছিল আল-কায়েদা সদস্যদেরকে টার্গেট করার একটা প্রোগ্রামে। এই কাজের জন্য তাকে প্রতি মাসে ৩,০০০ ডলার বেতন দেওয়া হতো। সেই সাথে একবার তাকে এককালীন ২০,০০০ ডলার পুরস্কার এবং একটা গাড়ি উপহার দেওয়া হয়েছিল।

আমেরিকানরা চলে যাওয়ার পর ২০১৪ সালের নভেম্বরে সোর্স ১৩৪৯৯২ পক্ষ ত্যাগ করে ইরানের সাথে যোগাযোগ করে। ডকুমেন্ট অনুযায়ী, সোর্স ১৩৪৯৯২ কুরআন শপথ করে ঘোষণা করে, সিআইএর সাথে তার সব সম্পর্ক শেষ। সে ইরানের হাতে সিআইএর সকল গোপন তথ্য তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। সিআইএর সেফ হাউজগুলোর ঠিকানা, যে হোটেলগুলোতে সিআইএ তাদের এজেন্টদের সাথে মিটিং করত সেগুলোর নাম, সিআইএর এজেন্টদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র এবং তাদের নজরদারির প্রশিক্ষণের বিবরণ, আমেরিকানদের হয়ে কাজ করা অন্যান্য এজেন্টদের পরিচয়, সব।

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ৩য় পর্ব: ইরাকের মন্ত্রীরা সবাই যখন ইরানের পকেটে

ইরান যদিও শুরুর দিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির আনুগত্য নিয়ে সন্দিহান ছিল, কিন্তু তার দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাস পরেই ইরাক থেকে ইরানে পাঠানো একটি রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, তিনি ইরানি গোয়েন্দাসংস্থার সাথে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে রাজি হয়েছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আবাদি তার অফিসে বুরুজারদি নামে ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের এক কর্মকর্তার সাথে রুদ্ধদ্বার গোপন বৈঠক করেছিলেন, যে বৈঠকে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিল না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কোনো সেক্রেটারিও না।

রিপোর্ট অনুযায়ী, মিটিংয়ে বুরুজারদি ইরাকের রাজনীতির সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়, ইরাকের শিয়া-সুন্নি বিভাজন সম্পর্কে আলাপ তুলেছিলেন এই ব্যাপারে আবাদির মনোভাব বোঝার জন্য। তিনি বলেছিলেন, “ইরাকের সুন্নিরা আজ সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। তারা তাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তাদের অবস্থা হয়েছে যাযাবরদের মতো। তাদের শহরগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের সামনে আছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অন্যদিকে শিয়ারা তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে।”

বুরুজারদি আরো বলেন, ইরাকের শিয়ারা এই মুহূর্তে “ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে” অবস্থান করছে। তিনি মন্তব্য করেন, ইরাকি সরকার এবং ইরান “এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।”
রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি বুরুজারদির বক্তব্যের সাথে “সম্পূর্ণ ঐক্যমত্য” প্রকাশ করেছিলেন।

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ৪র্থ পর্ব: ইরাকে কাসেম সোলায়মানির সুন্নিবিরোধী কঠোর নীতি

২০১৪ সালের শেষের দিকে ইরান সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা যখন জুরফ আল-সাখার থেকে আইএসদেরকে পরাজিত করে বিতাড়িত করে, তখন সেটা ছিল আইএসের বিরুদ্ধে কোনো বাহিনীর প্রথম বড় ধরনের বিজয়। কিন্তু যুদ্ধের পর শহরটা পরিণত হয় ভূতুড়ে শহরে। আইএসদের পরাজয়ের পর এলাকাটা হাজার হাজার শিয়া তীর্থযাত্রীর জন্য আর কোনো হুমকি ছিল না, কিন্তু তারপরেও শহরটার সুন্নি অধিবাসীদেরকে কঠোর মূল্য দিতে হয়। হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়, এবং একজন স্থানীয় রাজনীতিবিদ, যিনি ছিলেন প্রাদেশিক কাউন্সিলের একমাত্র সুন্নি সদস্য, তাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়।

জুরফ আল-সাখারের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্সের একটা রিপোর্টে যে ভাষা ব্যবহার করা হয়, সেটা বাইবেলের প্রতিশোধমূলক বর্ণনাগুলোর সাথেই তুলনীয়। ইরাক থেকে পাঠানো ঐ রিপোর্টে ইরানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা বর্ণনা করেন, “এই অপারেশনগুলোর মাধ্যমে জুরফ আল-সাখারের আশেপাশের এলাকাগুলো থেকে সন্ত্রাসীদের দালালদেরকে নির্মূল করা হয়েছে। তাদের পরিবারদেরকে বাড়িগুলো থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ বাড়ি সামরিক বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে, বাকিগুলোও ধ্বংস করা হবে। কিছু কিছু স্থানে খেজুর গাছগুলো সমূলে উপড়ে ফেলা হয়েছে। সেগুলোকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন সন্ত্রাসীরা গাছগুলোর নিচে আশ্রয় নিতে না পারে। মানুষের গবাদি পশুগুলো (গরু এবং ভেড়া) তাদের মালিকদেরকে ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে চরে বেড়াচ্ছে।”

রিপোর্টে বলা হয়, জুরফ আল-সাখারের অপারেশন এবং তেহরানের নির্দেশে ইরানের প্রক্সিদের দ্বারা সংঘটিত এই জাতীয় অন্যান্য রক্তাক্ত পদক্ষেপ ইরানের সুন্নি জনগণকে আরো শত্রুভাবাপন্ন করে তুলছে। সেখানে বলা হয়, “গ্রাম এবং বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়া, সুন্নিদের ধন-সম্পত্তি ও গবাদি পশু লুট করার ঘটনাগুলো আইএসবিরোধী যুদ্ধে সাফল্যের মাধুর্য নষ্ট করে সেটাকে তিক্ততায় রূপান্তরিত করছে।”

জুরফ আল-সাখার থেকে পাঠানো একটা রিপোর্টে সুনির্দিষ্টভাবে শিয়া মিলিশিয়াদের কর্মকাণ্ডের প্রভাব উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়, “প্রতিটা এলাকায় যেখানে (ইরানের দ্বারা পরিচালিত প্রধান শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী) পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স অভিযান চালাতে গিয়েছে, সেখানকার সুন্নিরা তাদের বাড়িঘর এবং ধন-সম্পত্তি ফেলে পালিয়ে গিয়ে তাঁবুতে অথবা শরণার্থী শিবিরে বসবাস করাকে বেছে নিয়েছে।”

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ৫ম পর্ব: ইরানি গুপ্তচরদের আইএসবিরোধী তৎপরতা

শুরুর দিকে আইসিসের বিরুদ্ধে কুর্দিদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে ইরান ক্ষিপ্রতার সাথে পদক্ষেপ নিয়েছিল। ঐ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক কুর্দি বিশ্লেষকের মতে, “ইরানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়িত করতে পারে। সেই তুলনায় আমেরিকানদের আমলাতন্ত্র অনেক জটিল।” তিনি জানান, আইসিস যখন মাখমুর আক্রমণ করে, তখন ইরানিরাই সর্বপ্রথম কুর্দিদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেও আমেরিকানদের সাহায্য আসতে আরো দুই-এক দিন সময় লেগে গিয়েছিল।

মাখমুরে কুর্দি পেশমার্গাদের জয়ের পেছনে আমেরিকানদের বিমান হামলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ববর্তী সপ্তাহ এবং মাসগুলোতে এই পেশমার্গাদের অনেকেই ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স, MOIS-এর উপদেষ্টাদের কাছ থেকে সাহায্য এবং পরামর্শ পেয়ে আসছিল। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, একেবারে শুরু থেকেই ইরানি এবং কুর্দি গুপ্তচররা আইসিসের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল।

ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র বাইরে থেকেই আইসিসের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করেনি। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, তারা সংগঠনটির নেতৃত্বের ভেতরেও নিজেদের গুপ্তচরদেরকে অনুপ্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছিল। মসুলে অবস্থিত একজন এজেন্টের পক্ষ থেকে MOIS-এর কাছে পাঠানো একটা রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, সে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে আইসিসের খিলাফতের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের একটা মিটিংয়ে যোগ দিয়েছিল, যে মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেছিল স্বয়ং বাগদাদি! ঐ মিটিংয়ে আইসিস নেতারা ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিল যে, আমেরিকা এবং ইরানের সহযোগিতায় ইরাকি সেনাবাহিনী, শিয়া মিলিশিয়ারা এবং কুর্দি পেশমার্গারা শীঘ্রই ইরাকের নিনাওয়া প্রদেশে তাদের উপর আক্রমণ শুরু করতে যাচ্ছে।

রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, একইসাথে বহুমুখী শত্রুর মুখোমুখি হয়ে আইসিস নেতারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে এই ভয়ও কাজ করছিল, যেসব আইসিস নেতার অতীতে সাদ্দাম হুসেনের সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিল, তারা হয়তো তাদের শত্রুদেরকে গোপনে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারে, কিংবা পদত্যাগ করে বসতে পারে। রিপোর্টে দাবি করা হয়, আইসিসের কেন্দ্রীয় নেতারা সন্দেহ করছিল, বাথ পার্টি থেকে আসা কিছু আইসিস নেতা ইরাকি সেনাবাহিনী কিংবা শিয়া মিলিশিয়াদের হাতে পড়ার ভয়ে কুর্দিশ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে এই উদ্দেশ্যে, যেন বিপদে পড়লে কুর্দি এলাকায় পালিয়ে যেতে পারে।

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ৬ষ্ঠ পর্ব: ইরাকে ইরানের আমেরিকাপন্থী নীতি

ইরাকের কুর্দিদের উপর প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ইরান কুর্দিশ রেজিওনাল গভর্নমেন্টের পাশাপাশি ছোটো ছোটো কুর্দি গ্রুপগুলোর সাথেও যোগাযোগ শুরু করে, যাদের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। এরকমই একটা গ্রুপ ছিল হালাবজা শহরের কুর্দিস্তান সোশ্যালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, কেএসডিপি। দলটির নেতা মোহাম্মদ হাজি মাহমুদ, যিনি “কাকা হামা” নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তী কুর্দি জাতীয়তাবাদী। কয়েক দশকজুড়ে তিনি পাহাড়ে থেকে সাদ্দাম হুসেনের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে আইসিস যখন কুর্দিস্তানে আক্রমণ করে, মাহমুদ ছিলেন তখন সবার আগে আইসিসবিরোধী যুদ্ধে যোগ দেওয়া যোদ্ধাদের মধ্যে একজন।

সে বছরের নভেম্বর মাসে কিরকুক শহরের কাছে আইসিসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে মাহমুদের ছেলে নিহত হয়। দশ দিন পর, ডিসেম্বরের ৭ তারিখে ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স, MOIS-এর গোয়েন্দারা হাজির হয় কেএসডিপির হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত মাহমুদের অফিসে। তারা তার শহিদ ছেলের বীরত্বের প্রশংসা করে, তার জন্য দোয়া করে এবং মাহমুদকে ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়।

দেড় মাস পর, জানুয়ারির শেষের দিকে MOIS-এর কর্মকর্তারা পুনরায় সাক্ষাৎ করে মাহমুদের সাথে। ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টের বিবরণ থেকে দেখা যায়, মাহমুদ এবার ইরানি কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানান তার অধীনস্থ পেশমার্গা বাহিনীর ৩০জন সদস্যকে “স্পেশাল মিলিটারি এবং সিকিউরিটি ট্রেনিং” দেওয়ানোর জন্য। রিপোর্ট অনুযায়ী এই ট্রেনিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল মাহমুদের ছেলের সম্মানে। ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা মাখমুর শহরের ফ্রন্টলাইনে গিয়ে কুর্দি যোদ্ধাদেরকে ট্রেনিং দিয়েছিল। তাদের এই প্রশিক্ষণ মাখমুরে আইসিসকে পরাজিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ৭ম পর্ব: সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কুদস ফোর্স এবং ব্রাদারহুডের গোপন মিটিং!

যে ব্যাপারটা দুই পক্ষের কেউই জানত না, ঐ মিটিংয়ে সবার অলক্ষ্যে উপস্থিত ছিল একজন গুপ্তচর – কুদস ফোর্সের প্রতিদ্বন্দ্বী, ইরানের মিনিস্ট্রি অফ ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি MOIS-এর গুপ্তচর। ডকুমেন্টগুলো থেকে জানা যায়, রেভোল্যুশনারি গার্ডদের অতিরিক্ত ক্ষমতার ব্যাপারে ভীত এবং সন্দিহান MOIS সব সময়ই তাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করে এসেছে। তাদের কমান্ডাররা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, কী আলোচনা করছে, সেটা জানার জন্য MOIS ঐ মিটিংয়ে নিজেদের একজন এজেন্টকে প্রেরণ করে। ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, ঐ এজেন্ট শুধু মিটিংয়ে উপস্থিতই ছিল না, সে কুদস ফোর্সের হয়ে ঐ মিটিংয়ের কোর্ডিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিল। কিন্তু মিটিং শেষে সে প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছিল MOIS-এর হেড কোয়ার্টারে।

রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মিটিংয়ের স্থান হিসেবে তুরস্ককে বাছাই করা হয়েছিল, কারণ তুরস্কই ছিল একমাত্র রাষ্ট্র যাদের সাথে উভয় পক্ষের সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু তারপরেও তুরস্কের সরকার নিজেদের দেশে ইরানি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। ফলে তারা কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে ভিসা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সোলায়মানির অনুপস্থিতিতে বৈঠকে ইরানি দলের নেতৃত্ব দেন তার একজন ডেপুটি, আবু হুসাইন। অন্যদিকে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধিত্ব করেন এর তিনজন বিখ্যাত মিসরীয় নেতা: ইবরাহিম মুনির মুস্তাফা, মাহমুদ আল-আবিয়ারি এবং ইউসেফ মুস্তাফা নাদা। নাদা অবশ্য পরবর্তীতে ইন্টারসেপ্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তার উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেন।

MOIS-এর গুপ্তচরের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী, মিটিংয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য শুরু করেছিলেন নিজেদের সংগঠনের অর্জন নিয়ে গর্ব করার মধ্য দিয়ে। তারা উল্লেখ করেন, বিশ্বের ৮৫টা দেশে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালু আছে। তারা বলেন, শিয়া বিশ্বের প্রতিনিধি হিসেবে ইরানের এবং সুন্নি বিশ্বের প্রতিনিধি হিসেবে মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যকার পার্থক্য পরিষ্কার। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতির বিবেচনায় দুই পক্ষের মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আছে।

যে বিষয়টাতে ব্রাদারহুডের প্রতিনিধিরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেন, সেটা ছিল তাদের উভয়ের মধ্যেই তাদের “সাধারণ শত্রু” সৌদি আরবের প্রতি বিদ্বেষ আছে। তারা প্রস্তাব করেন, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে দুই পক্ষ একত্রে কাজ শুরু করতে পারে। এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হতে পারে ইয়েমেন, যেখানে ইরান সমর্থিত হুথিদের সাথে সৌদি সমর্থিত ইয়েমেনের সরকারি বাহিনীর মধ্যে তীব্র যুদ্ধ চলছে। ব্রাদারহুডের নেতারা বলেন, “ইয়েমেনে হুথিদের উপর ইরানের প্রভাব এবং সশস্ত্র সুন্নি গোত্রগুলোর উপর ব্রাদারহুডের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে সম্মিলিত শক্তি প্রয়োগ করা উচিত।”

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

ইরান ক্যাবল ৮ম পর্ব: প্রভুদের পরিবর্তন: আমেরিকান আগ্রাসন যেভাবে ইরাককে ইরানের হাতে তুলে দিয়েছে!

২০০৩ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার ইরাক আক্রমণের প্রায় এক মাস আগে সাদ্দাম হুসেনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের একজন, তারেক আজিজ, তার বাগদাদের অফিসে বসেছিলেন। তার পরনে ছিল জলপাই রঙের ইউনিফর্ম, পায়ে ছিল চপ্পল আর হাতে ছিল একটা সিগার। কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ইরাকি কূটনীতির সম্মুখভাগে দায়িত্ব পালন করা তারেক আজিজ সেদিন ইরাকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ জানিয়েছিলেন। এই বিশ্লেষণই হয়তো পরবর্তীতে তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

“আমেরিকা সাদ্দাম হুসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে,” বলেছিলেন তারেক আজিজ, এক ইরাকি খ্রিস্টান এবং সাদ্দাম হুসেনের সরকারের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। “আপনারা বাথ পার্টিকে এবং সেক্যুলার আরব জাতীয়তাবাদকে ধ্বংস করে দিতে পারেন।” কিন্তু সেই সাথে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন, সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্য দিয়ে “আমেরিকা একটা প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দিবে, যা তারা আর কখনোই বন্ধ করতে পারবে না।” তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, আরব জাতীয়তাবাদের আড়ালে সাদ্দামের বজ্রমুষ্টির শাসনব্যবস্থাই কেবল পারে আল-কায়েদার মতো শক্তিগুলোকে কিংবা ইরানের প্রভাবকে মোকাবেলা করতে।

এক মাস পর আমেরিকা যখন ইরাক আক্রমণ করে, তখন তারেক আজিজ ছিলেন আমেরিকার মোস্ট ওয়ান্টেড টার্গেটদের ছবি প্রচার করার জন্য পেন্টাগনের তৈরি তাসের ডেকের ইশকাপনের আট। শেষপর্যন্ত তিনি যখন ধরা পড়েন, তখন তাকে রাখা হয় বাগদাদ এয়ারপোর্টে অবস্থিত অস্থায়ী একটা কারাগারে। তাকে বাধ্য করা হয় শৌচাগার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নিজের হাতে মাটিতে একটা গর্ত খুঁড়তে। বন্দী অবস্থাতেই ২০১৫ সালের জুন মাসে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু মৃত্যুর আগেই তিনি দেখে যেতে পেরেছিলেন কীভাবে তার প্রতিটা ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল। মৃত্যুর পূর্বে তিনি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে “ইরাককে নেকড়ের হাতে ছেড়ে দিয়ে যাওয়ার” অভিযোগ করেছিলেন।

আরো পড়ুন: লিবিয়ার রাজনীতি, লিবিয়ার ইতিহাস এবং গাদ্দাফি সম্পর্কিত আমার সবগুলো লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে

ডিবাথিফিকেশনের নামে ইরাকি সৈন্যদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে আমেরিকা ইরাককে পরিপূর্ণভাবে ধ্বংসের বন্দ্যোবস্ত করেছিল। পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী পরলোকগত সাংবাদিক অ্যান্থনি শাদিদ ইরাক যুদ্ধের উপর রচিত তার বই “Night Draws Near”-এ লিখেছিলেন, “এই সিদ্ধান্তের ফলাফল ছিল, তা সাড়ে তিন লাখ ইরাকি অফিসার এবং সৈন্যকে রাস্তায় বসিয়ে দেয়। এই লোকগুলোর প্রত্যেকের কিছু না কিছু সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল। ফলে মুহূর্তের মধ্যে গেরিলা যুদ্ধের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীর এক বিশাল ভাণ্ডার তৈরি হয়ে যায়। (তাদের দখলে এবং নাগালের মধ্যে ছিল প্রায় এক মিলিয়ন টন অস্ত্র এবং সব ধরনের গোলাবারুদ।)” সে সময় নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বলেছিলেন, “সেই সপ্তাহেই আমরা ইরাকের মাটিতে সাড়ে চার লাখ নতুন শত্রু সৃষ্টি করেছিলাম।”

ব্রেমারের সিদ্ধান্তের প্রভাব উপলব্ধি করা যায় এক দশকেরও পরে লেখা এবং পরবর্তীতে ফাঁস হওয়া ইরানি ডকুমেন্টগুলো থেকে। ২০১৩ সালে ইরাকের নুরি আল-মালিকি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেওয়া অধিকাংশ সুন্নি বিদ্রোহীকেই ডকুমেন্টগুলোতে “বাথিস্ট” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বাথিস্ট বলতে সেখানে সেই গ্রুপগুলোকে বোঝানো হয়েছে, যাদের নেতৃত্ব ছিল সাবেক ইরাকি সেনা কর্মকর্তাদের হাতে, যারা ২০০৩ সালের পূর্ববর্তী ইরাকি ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী ছিল।

ডকুমেন্টগুলো থেকে দেখা যায়, মার্কিন আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে ইরাকে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছিল, তা কখনোই শেষ হয়নি। বাথ পার্টির আদর্শে বিশ্বাসী অনেকেই শেষপর্যন্ত আইসিসে যোগ দিয়েছিল, যে সংগঠনটির সামরিক নেতৃত্বে সাদ্দামের সেনাবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

বিস্তারিত পড়ুন রোর বাংলায় গিয়ে …

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *