ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস: আরব বিশ্বের ভেঙে পড়ার গল্প

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে, আরব স্বৈরাচারদের উত্থান-পতন নিয়ে, রাষ্ট্রগুলোর ভাঙ্গাগড়া নিয়ে গত কয়েক বছরে অনেক বই লেখা হয়েছে। এর মধ্যে জটিল তাত্ত্বিক বই যেমন আছে, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদদের লেখা বই যেমন আছে, তেমনি আছে সংবাদ সংগ্রহ করতে মধ্যপ্রাচের দেশে দেশে, যুদ্ধের ময়দানে ময়দানে ঘুরে বেড়ানো সাংবাদিকদের লেখা, যারা সঙ্কটগুলো দেখেছেন খুবই কাছ থেকে, যারা কথা বলেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সাথে, প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের সুখ-দুঃখ।

সেরকমই একজন সাংবাদিক স্কট অ্যান্ডারসন (Scott Anderson) এবং সেরকমই একটি বই ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্স (Fractured Lands: How the Arab World Came Apart)। বইটিতে কোনো জটিল তত্ত্ব নেই, দীর্ঘ ইতিহাস নেই, আছে শুধু ছয় জন ভুক্তভোগীর কাহিনী – দুজন ইরাকের, একজন ইরাকি কুর্দিস্তানের, একজন সিরিয়ার, একজন মিশরের এবং একজন লিবিয়ার। এবং তাদের কাহিনীর মধ্য দিয়েই লেখক তার পাঠকদেরকে আরব বিশ্বে ঘটে যাওয়া গত এক-দেড় দশকের ঘটনাবলি সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে চেষ্টা করেছেন।

স্কট অ্যান্ডারসন প্রায় দেড় যুগ মধ্যপ্রাচ্যে সমর-প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু এই বইটি লেখার পূর্বে তিনি এবং চিত্র সাংবাদিক পাওলো পেলেগ্রিন নতুন করে দেড় বছর সময় নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন লিবিয়া থেকে সিরিয়া পর্যন্ত। এ সময়ে তারা শতশত মানুষের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। শুধুমাত্র সাবেক আইএস সদস্যদের মধ্য থেকেই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অন্তত বিশ জনের। আর সেসব সাক্ষাৎকার থেকেই অ্যান্ডারসন এমন ছয়জনের গল্প বেছে নিয়েছেন, যাদের কাহিনীর মধ্য দিয়ে সংক্ষেপে আরব বিশ্বের বর্তমানে পরিস্থিতির একটি প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র ফুটিয়ে তোলা যায়।

তবে একইসাথে এটিকে ঋণাত্মকভাবেও দেখা যায়, যেহেতু অত্যন্ত জটিল রাজনৈতিক সঙ্কটকে এখানে মাত্র ছয়টি কাহিনীর মধ্যে সরলীকরণ করে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস বইটির আরেকটি ত্রুটি হচ্ছে, এখানে গল্পগুলো চরিত্র অনুযায়ী এগোয়নি, সময় অনুযায়ী এগিয়েছে। চরিত্রগুলো যদি পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত হতো, তাহলে এটি অর্থবহ হতো। কিন্তু তা না হওয়ায় কিছুক্ষণ পরপর এক চরিত্রের কাহিনী থেকে অন্য চরিত্রের কাহিনীতে চলে যাওয়ার কারণে পড়তে একটু কষ্ট হয়।

ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস বইটি আকারে খুব বেশি বড় না, মাত্র ২৪০ পৃষ্ঠা। এত অল্প পরিসরের একটি বই থেকে আরব বিশ্বের সংকট সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানার আশা করা যায় না। যারা নিয়মিত পত্রপত্রিকায় মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাপ্রবাহ অনুসরণ করেন, ছয়টি গল্প জানার বাইরে তাদের এ বই থেকে নতুন কিছু শেখার নেই। কিন্তু যারা এ বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না, তারা সংক্ষেপে মোটামুটি একটি ধারণা পাওয়ার জন্য বইটি পড়তে পারেন।

বই আকারে প্রকাশিত হওয়ার আগে এটি নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের সম্পূর্ণ একটি সংখ্যা জুড়ে প্রকাশিত হয়েছিল। কাজেই বইটি কেনার প্রয়োজন নেই, অনলাইনেই নিউ ইয়র্ক টাইমসের ওয়েবসাইট থেকে সম্পূর্ণ বইটি বিনামূল্যে পড়া যাবে।

কাহিনী সংক্ষেপ এবং আরো কিছু ডিটেইলসহ সম্পূর্ণ রিভিউটা লিখেছি Roar বাংলায়। এ অংশটুকু সেখানকার সৌজন্যে। সম্পূর্ণ রিভিউ পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে। আর বইপত্র বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *