সিআইএ হেডকোয়ার্টার লোগো
বইপত্র,  বিশ্ব রাজনীতি,  স্পাই স্টোরি

যে বোকামিতে ধরা পড়তে বসেছিল সিআইএর সেরা অফিসার!

পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকের ঘটনা। সিআইএ তাদের ইন্টালিজেন্স অফিসার জ্যাক ও’কনেলকে ডীপ আন্ডারকভার এজেন্ট হিসেবে মিসরে প্রেরণ করেছে।

ও’কনেল যখন মিসরের কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছেন, তখন গভীর রাত। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে তিনি কায়রোর একটি হোটেলে গিয়ে ওঠেন।

রিজার্ভেশন চেক করার জন্য হোটেলের ক্লার্কের দিকে যখন তিনি তার পাসপোর্ট এগিয়ে দেন, তখন তাকে হতভম্ব করে দিয়ে ক্লার্ক জিজ্ঞেস করে, did you come from CIA? অর্থাৎ, “আপনি কি CIA থেকে এসেছেন?”

ক্লার্কের প্রশ্ন শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ও কনেল – তার পরিচয় কি তাহলে ফাঁস হয়ে গেছে?

আর্টিকেলটির ভিডিও দেখুন মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও রাজনীতির ইউটিউব চ্যানেলের এই লিঙ্ক থেকে। ভালো লাগলে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।

জ্যাক ও কনেল ছিলেন তুখোড় অফিসার। তার প্রমাণ তিনি পরবর্তী জীবনে অনেকবার দিয়েছেন। নিজের যোগ্যতাবলে তিনি দীর্ঘ আট বছর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সিআইএর স্টেশন চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

কিন্তু সেদিন হোটেলের ক্লার্ক যখন জিজ্ঞেস করে – তিনি সিআইএ থেকে এসেছেন কিনা, তরুণ ও কনেল তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। নিজের কানকে তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সিআইএর অফিসারদের পরিচয় সাধারণ মানুষের জানার কথা না। বিশেষ করে শত্রুরাষ্ট্রের কোনো হোটেলের ক্লার্কের তো অবশ্যই না।

ও কনেলের মাথা ঠিক মতো কাজ করছিল না। একের পর এক অজানা আশঙ্কায় তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল। তার কভার কি কোনোভাবে ফাঁস হয়ে গেছে? নিজের জ্যাকেটের বুক পকেটের দিকে তাকালেন তিনি – ভুলে কি এজেন্সির ব্যাজটা বুকে লাগিয়ে রেখেই চলে এসেছেন? নাহ, ঠিকই তো আছে সবই। তাহলে?

মিসরের মুখাবারাত কি কোনোভাবে তার পরিচয় জেনে ফেলেছে? তারাই কি হোটেল কর্তৃপক্ষকে তার আগমন সম্পর্কে অগ্রীম জানিয়ে দিয়েছে? কিন্তু তাহলে তারা কোথায়? আশেপাশে কোথাও লুকিয়ে আছে?

ও’কনেল একবার ভাবলেন, ব্যাগ হাতে নিয়ে দৌড়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে যাবেন কিনা। কিন্তু পরিচয় ফাঁস হওয়ার আতঙ্ক তাকে এমনভাবে গ্রাস করে রেখেছিল যে নড়ার শক্তিটুকুও তিনি জোগাড় করতে পারছিলেন না।

ক্লার্ক ততক্ষণে অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে। সে আবারও জিজ্ঞেস করল, “স্যার? আপনি কি CIA থেকে এসেছেন?”

ও’কনেল এবারও কোনো উত্তর দিতে পারলেন না। নিজের ক্যারিয়ারের চিন্তাতেই তিনি তখন বেহুঁশ। তার সিআইএর ক্যারিয়ার সম্ভবত পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আন্ডারকভার কোনো এজেন্টের পরিচয় যদি শত্রুপক্ষ জেনে ফেলে, তাহলে অবসরে যাওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় থাকে না।

ও কনেল ভাবতে লাগলেন তার এখন কী করা উচিত? মিশন চালিয়ে যাওয়া উচিত? নাকি ইমার্জেন্সি কন্টাক্টের সাথে যোগাযোগ করা উচিত? কিন্তু তার পরিচয় যদি ফাঁসই হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ইমার্জেন্সি কন্টাক্টের সাথে যোগাযোগ করে তাকেও বিপদে ফেলাটা কি উচিত হবে?

ওদিকে দুইবার প্রশ্ন করার পরেও কোনো উত্তর না পেয়ে ক্লার্ক তার বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে। চড়া গলায় সে শেষবারের মতো জানতে চাইলো, “স্যার, আপনি কোথা থেকে এসেছেন? CIA? Cairo International Airport?”

টুইস্ট হজম করতে না পেরে আরেকটু হলেই ও’কনেল জ্ঞান হারাতে যাচ্ছিলেন। এতক্ষণে ব্যাপারটা তার কাছে পরিষ্কার হলো। CIA বলতে ক্লার্ক সেন্ট্রাল ইন্টালিজেন্স এজেন্সি বোঝায়নি। সে বুঝিয়েছে কায়রো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ও কনেল উত্তর দিলেন, “অবশ্যই! আর কোথা থেকে আসব?”

মজার এ ঘটনাটি উঠে এসেছে জ্যাক ও’কনেলের আত্মজীবনীমূলক বই “King’s Counsel: A Memoir of War, Espionage, and Diplomacy“-তে।

বইটিতে অনেকগুলো ইন্টারেস্টিং কাহিনী আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, সিআইএর জর্ডানের বাদশাহকে হত্যার ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার কাহিনী। শীঘ্রই আসছে সেই কাহিনী।

আর একই জাতীয় অন্য একটি কাহিনী – সিআইএ কীভাবে গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়ে সবকিছু ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছিল, সেটা পড়ুন এখান থেকে আর সেটার ভিডিও দেখুন এখান থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published.