Views: 993
যুদ্ধ যখন শেষ হবে, বাশার আল-আসাদ যখন টিকে যাবে, তখন তার প্রধান মিত্র হবে আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব (এবং সেই সাথে ব্র্যাকেটে ইসরায়েল)।
যতই অদ্ভুত শোনাক, এটাই সত্য। এবং এই কথা আজই প্রথম বলছি না, আরো বছর দেড়েক আগে পুরাতন আইডি থেকেও বলেছিলাম। তখন সেটা ছিল জাস্ট একটা অনুমান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যা এই অনুমানকে আরো বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।
ক্ষমতার রাজনীতিকে যারা শুধুই শিয়া-সুন্নি দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে, এই পর্যায়ে এসে তারা দাবি করবে – এ তো আমরা অনেক আগে থেকেই জানতাম। বাশার এবং তার বাবা হাফেজ তো চিরকালই ইসরায়েলপন্থী, সুন্নিবিরোধী ছিল। তারা সুন্নিদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে, কিন্তু ইসরায়েলের দিকে একটা গুলিও ছোঁড়েনি।
কিন্তু বাস্তবে আসাদ পরিবারের সকল ব্রুটালিটি সত্ত্বেও তারা যে ইসরায়েলের পাপেট, এটা এখনও পর্যন্ত কন্সপিরেসি থিওরির বাইরে কিছু না। এরকম দাবির কোনো শক্ত ভিত্তি নাই। হাফেজের ৬৭’র যুদ্ধে হারার, কিংবা পরবর্তীতে গোলানে যুদ্ধ না করার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ ছিল।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করাটা কোনো সিক্রেট অ্যালায়েন্সের নির্দেশক না। ৭৩-এর পর থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কেউই যুদ্ধ করেনি, হামাস এবং হেজবুল্লাহ ছাড়া। এবং সেই হামাস এবং হেজবুল্লাহরও প্রধান ব্যাকার ছিল ইরান এবং সিরিয়া।
হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া যে কাসেম সোলায়মানির জানাজায় গেছে এবং সোলায়মানিকে শহিদ বলে আখ্যা দিয়েছে, সেটা তো এমনি এমনি না! ইসরায়েল যে সিরিয়ার গোপন নিউক্লিয়ার সাইট উড়িয়ে দিয়েছিল, সেটাও এমনি এমনি না।
ব্যাক টু দ্য প্রেজেন্ট সিচুয়েশন। বাশার আল-আসাদকে প্রায় সবাই সরাতে চেয়েছিল। তবে এই প্রচেষ্টায় অগ্রগামী ছিল প্রধানত কাতার (আল-জাজিরা, আল-জাজিরা এবং আল-জাজিরা) এবং সৌদি আরব। আরব আমিরাতও চেয়েছিল, কিন্তু তারা সিরিয়াতে সেভাবে ইনভলভড হয়নি।
কিন্তু কাতার যখন বিদ্রোহীদের অনেকগুলো গ্রুপের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের পেছনে বেশি ইনভেস্ট করতে শুরু করে, ফিল্ডে ব্রাদারহুডের উপস্থিতি নগণ্য হওয়া সত্ত্বেও বিদ্রোহীদের প্রতিটা কাউন্সিলে অনেক বেশি অনুপাতে ব্রাদারহুডের মেম্বারদেরকে রাখার চেষ্টা করতে থাকে, তখনই সৌদি আরবের ভুল ভাঙ্গে। তারা বুঝতে পারে, বাশার ক্ষমতা থেকে সরলে, পরিস্থিতি যেদিকে যাবে, সেটা তারা চায় না। এরমধ্যে তুরস্কও যখন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন সৌদি এবং ইমারাতের এই বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হয়।
মোটামুটি লক্ষ্য করলে দেখবেন, কয়েক বছর আগে থেকেই সৌদি আরব সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে সরে গেছে। তাদের ওয়ার মঙ্গার শেখরা, তাদের স্যাটেলাইট টিভিগুলো এখন আর বাশারের বিরুদ্ধে জিহাদি বক্তব্য দেয় না। উল্টো নরম সুরে কথা বলে, শান্তির কথা বলে।
আর আরব আমিরাত তো আরো এক ধাপ অগ্রগামী। তারা গত অন্তত এক-দেড় বছর ধরেই গোপনে বাশারের সাথে যোগাযোগ করছে। তারা সিরিয়াতে নতুন করে দূতাবাস খুলেছে, আরব লীগে সিরিয়াকে আবার আমন্ত্রণ জানানোর ব্যবস্থা করেছে, এবং পূর্বের ভূমিকার ১৮০ ডিগ্রী বিপরীতে গিয়ে অফিশিয়ালি যুদ্ধে জেতার জন্য বাশারকে সমর্থন দেওয়া শুরু করেছে।
সত্যিকারের গুপ্তচরদের কাহিনী নিয়ে লেখা আমার নন-ফিকশন থ্রিলার বই। প্রকাশিত হয়েছে স্বরে অ প্রকাশনী থেকে। ঘরে বসে অর্ডার করতে পারেন রকমারির এই লিঙ্ক থেকে। মুদ্রিত মূল্য ২৭০ টাকা মাত্র। আর পড়ার পর রেটিং এবং রিভিউ দিতে পারবেন গুডরিডসের এই লিঙ্কে।
বাশারের এখন প্রধান শত্রু কে? তুরস্ক। তুরস্ক শুরু থেকেই বাশারের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে সাহায্য করেছে। সিআইএ যেসব সো কলড মডারেট বিদ্রোহীদেরকে ট্রেনিং দিয়ে সিরিয়াতে ঢুকিয়েছিল, তাতে প্রধানত দুইটা দেশ সাহায্য করেছিল। জর্ডান এবং তুরস্ক। এই দুই দেশে এদের গোয়েন্দাসংস্থার সহযোগিতায় সিআইএ বিদ্রোহীদেরকে ট্রেনিং দিয়েছে।
এবং অন্য অনেকে সরে গেলেও এখনও তুরস্কই সিরিয়াতে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। বিদ্রোহীদেরকে সাহায্য করে যাচ্ছে। এই বিদ্রোহীদের মধ্যে অনেকেই আছে জিহাদি চরিত্রের। কিছু আছে আল-কায়েদা লিঙ্কড। বিশেষত ইদলিবে। সাধারণ বিদ্রোহীরা পরাজয় স্বীকার করে নিলেও এরা বাশারকে দীর্ঘদিন ভোগাবে। এরা না মরা পর্যন্ত হাল ছাড়বে না।
সো বাশারকে টিকে থাকতে হলে এখন কী করতে হবে? এই অঞ্চলে তুরস্ক-বিরোধী বা ইসলামিস্ট-বিরোধী, বা জিহাদিস্ট-বিরোধী যেটাই বলেন, সেই পক্ষের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে হবে। এই অঞ্চলে যারা গণতন্ত্র চায় না, বরং স্বৈরশাসকদেরকে ক্ষমতায় দেখতে চায়, তাদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করতে হবে। তারা যে মাত্র তিন-চার বছর আগেও বাশারের প্রধান শত্রু ছিল, সেটা এখন বাশারকে ভুলে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্থায়ী শত্রু-মিত্র বলতে কিছু নাই।
আরো পড়ুন: আরব আমিরাত: মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ইসরায়েল
এবং বাশার ঠিক সেই কাজটাই করছে। গত এক-দেড় বছরে আরব আমিরাতের সাথে বাশারের সম্পর্কের উন্নয়নে সেই ইঙ্গিতই মিলছে। গত মাসে বাশারের পার্লামেন্ট তুরস্কের আর্মেনিয়ান জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ আর কিছুই না। তুরস্কের বিরোধিতা।
এবং যদিও প্রমাণিত না, জাস্ট অনুমান, কেউ কেউ সন্দেহ করছে, তুরস্ক যে লিবিয়াতে প্রায় সাড়ে চার হাজার সিরিয়ান মার্সেনারি পাঠিয়েছে, তার বিপরীতে আরব আমিরাত বাশারের পক্ষের কয়েকশো যোদ্ধাকে হাফতারের পক্ষে পাঠিয়ে থাকতে পারে। বাশার কেন এতে রাজি হবে? জাস্ট আরব আমিরাতকে খুশি রাখার জন্য।
সর্বশেষ ইদলিবে তুরস্কের সাথে বাশারের নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, আরব আমিরাত বাশারের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। ইতোমধ্যেই আমিরাতের প্রতি অনুগত লিবিয়ার হাফতারের পক্ষের এক প্রতিনিধি দল সিরিয়াতে গিয়ে সিরিয়ান সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছে কীভাবে তুরস্কের বিরুদ্ধে একত্রে কাজ করা যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা করতে।
যুদ্ধ যখন শেষ হবে, তখন লিবিয়ার হাফতার হবে সেকেন্ড সিসি, আর সিরিয়ার বাশার হবে সেকেন্ড হাফতার। এর কোনো বিকল্প নাই।
ফিচার ইমেজের ছবিটা পুরানো, ২০০৮ সালের।