দ্য মৌরিতানিয়ান: গুয়ান্তানামো বের এক নির্দোষ বন্দীর গল্প

গুয়ান্তানামো বে কারাগারের এক বন্দীর উপর চমৎকার একটা মুভি দেখলাম – দ্য মৌরিতানিয়ান – The Mauritanian (2021)। ড্রামা, তার উপর বেজড অন ট্রু স্টোরি, সো ডোন্ট বদার উইদ স্পয়লার অ্যালার্ট।

নাইন ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার কয়েকমাস পর আমেরিকার চাপে মৌরিতানিয়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে মোহাম্মাদু ওয়েল্দ স্লাহি নামের এক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে নিয়ে যায় দেশটির নিরাপত্তাবাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা তাকে তুলে দেয় আমেরিকানদের হাতে।

পরবর্তী ছয় বছর পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিখোঁজ থাকে স্লাহি। কেউ তার কোনো সংবাদ দিতে পারে না। শেষ পর্যন্ত এক মার্কিন ডিফেন্স লয়্যার, ন্যান্সি হল্যান্ডার তার খোঁজ পায় কিউবার গুয়ান্তানামো বে কারাগারে।

জানা যায়, প্রথম ছয়মাস ধরে আমেরিকানরা স্লাহিকে টর্চার এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে জর্ডানের একটি গোপন কারাগারে। এরপর সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আফগানিস্তানের আরেকটি গোপন সাইটে। সবশেষে তার স্থান হয় গুয়ান্তানামোয়।

ন্যান্সি হল্যান্ডার তার প্রায় সারা জীবনই আইনী লড়াই করেছে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে। স্লাহির কেসটা নিয়েও সে আগ্রহী হয় এবং তার মুক্তির আবেদন জানিয়ে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে।
গুয়ান্তানামো কারাগারে বসেই স্লাহি গার্ডদের মুখ থেকে শুনে শুনে ইংরেজি ভাষা শিখেছিল। সেই নতুন শেখা ইংরেজি দিয়েই সে ন্যান্সির কাছে দীর্ঘ অনেকগুলো চিঠি লেখে। সেই চিঠিগুলোতেই সে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে।

জানা যায়, স্লাহির বিরুদ্ধে আমেরিকার হাতে তেমন কোনো প্রমাণ ছিল না। সে নব্বইয়ের দশকে আফগান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল এবং তার এক কাজিন ছিল বিন লাদেনের ঘনিষ্ঠ, যে একবার তাকে ফোন করেছিল – এটুকুই ছিল তার দোষ।

কিন্তু গুয়ান্তানামো কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে তার মুখ থেকে শুধু ৯/১১ এর হামবুর্গ সেলের হাইজ্যাকারদেরকে রিক্রুট করাই না, এর আগের মিলেনিয়াম অ্যাটাকসহ আল-কায়েদার অন্যান্য হামলার দায়ের স্বীকারোক্তিও আদায় করা হয়।

ন্যান্সির করা রিটের বিরুদ্ধে সাড়া দিয়ে সরকার স্টুয়ার্ট কাউচ নামের মেরিন কোরের এক লয়্যারকে চীফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেয়। কারণ হামবুর্গ সেলের হামলায় যেই প্লেনটা ক্র্যাশ হয়েছিল, সেখানে এই স্টুয়ার্ট কাউচের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধু মারা গিয়েছিল। সরকারের আশা ছিল, বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হলেও কাউচ সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে স্লাহির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে।

কিন্তু বাস্তবে ঘটে সম্পূর্ণ বিপরীত ঘটনা। প্রথমে খুব আগ্রহ নিয়ে কেসটা শুরু করলেও পরবর্তীতে যখন স্লাহির উপর অবর্ণনীয় নির্যাতনের বিবরণের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায়ের প্রমাণ পায়, তখন কাউচ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পদত্যাগ করে।

মার্কিন আদালত শেষ পর্যন্ত স্লাহিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু ওবামা প্রশাসন এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাকে বন্দী থাকতে হয় আরও ৬ বছর। শেষপর্যন্ত ১৪ বছর গুয়ান্তানামো বে কারাগারে আটক থাকার পর ২০১৬ সালে স্লাহি মুক্তি পেয়ে মৌরিতানিয়ায় ফিরে যায়।

আমার লেখা সবগুলো মুভি রিভিউ পড়তে ক্লিক করুন এখানে

সিনেমাটাতে চমৎকার কিছু ডায়লোগ আছে। কাউচ শুরুতে ন্যান্সিকে জিজ্ঞেস করে, কীভাবে সে একজন টেরোরিস্টকে ডিফেন্ড করছে? তার বিবেকে বাধে না? উত্তরে ন্যান্সি পাল্টা প্রশ্ন করে, যদি লোকটা টেরোরিস্ট না হয়? সে জিজ্ঞেস করে – You built this place, and you abandoned all of your principles, all of your laws, and [what if] you’re wrong?

একই অভিযোগ যখন সাংবাদিকরা ন্যান্সির প্রতি তোলে, সে কীভাবে একজন সন্ত্রাসীকে ডিফেন্ড করছে? ন্যান্সি উত্তর দেয়, সে সন্ত্রাসীকে ডিফেন্ড করছে না। সে ডিফেন্ড করছে নিজেকে এবং নিজের দেশের সংবিধানকে। সে নিশ্চিত করছে যেন সংবিধান অনুযায়ী ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়। সে বলে –

when I defended someone charged with rape, nobody called me a rapist. When I defended someone charged with murder, nobody dug around my backyard. But when someone’s accused of terrorism, people like you seem to think that that’s different. It’s not.

When I stand by my client and I insist that he gets a fair hearing, I’m not just defending him. I’m defending you and me. The constitution doesn’t have an asterisk at the end that says, “Terms and conditions apply.”

দ্য মৌরিতানিয়ান মুভিটাতে স্লাহি চরিত্রে অভিনয় করেছে তাহার রাহিম (লুমিং টাওয়ার সিরিয়ালে এজেন্ট সুফান চরিত্রে ছিল)। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে আছে জুডি ফস্টার, বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, শেইলিন উডলি। পরিচালক কেভিন ম্যাকডোনাল্ড, যিনি এর আগে দ্য লাস্ট কিংডম অব স্কটল্যান্ডের মতো মুভি বানিয়েছেন।

মুভিটার আইএমডিবি রেটিং ৭.৩। মুভিতে অভিনয়ের জন্য জুডি ফস্টার গোল্ডেন গ্লোব পেয়েছিল। তাহার রাহিম নমিনেশন পেয়েছিল। এই বছর এখন পর্যন্ত বেশি মুভি দেখিনি। যে কয়েকটা দেখেছি, এটা এখন পর্যন্ত বেস্ট। হাইলি রেকমেন্ডেড।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *