কর্দোভার খ্রিস্টান শহিদরা: ডঃ ইয়াসির ক্বাদি

বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ডঃ ইয়াসির ক্বাদি আজকে অদ্ভুত এবং চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন – “ক্রিশ্চিয়ান মার্টায়ার্স অফ কর্দোভা”। এই লেখাটা তারই অনুবাদ।

৮৫০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকশো বছর পর্যন্ত আন্দালুসে এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছিল। খ্রিস্ট ধর্মগুরুদের অনেকে সে সময় শহরের কেন্দ্রে অথবা মসজিদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হতো, এরপর আল্লাহ্‌কে বা মুহাম্মাদ (সা)-কে প্রকাশ্যে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করত।

তারা জানত এই ধরনের গালাগালির শাস্তি কারাগার অথবা মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু তারপরেও তারা এই কাজ করত। ধারণা করা হয় সে সময় এরকম কাজের জন্য প্রায় ৫০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, বা তাদের ভাষায় এরকম ৫০ জন খ্রিস্টান ধর্মগুরু “শহিদ” হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনিতে যারা সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সম্মানিত (তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে) হিসেবে বিবেচিত, কেন তারা এরকম অদ্ভুত আচরণ করত?

আরো পড়ুন: শেখ ইয়াসির ক্বাদির চমৎকার একটা লেকচার অবলম্বনে আমার লেখা এই আর্টিকেলটি: কাগজ, মুদ্রণশিল্প এবং মুসলিম সভ্যতার উত্থান-পতনের ইতিহাস
এছাড়া আমার লেখা বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ, বই থেকে লেখা অনুবাদ আর্টিকেল পড়তে হলে ভিজিট করুন এই পাতা

পরবর্তীতে স্কলাররা দেখিয়েছেন, যখন কোনো একটা গ্রুপ তাদের সকল ক্ষমতা হারাতে শুরু করে, তখন তাদের মানসিক অবস্থায় ভয়াবহ রকমের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ক্ষমতা হারাতে থাকা মুভমেন্টের নেতারা তখন অযৌক্তিক আচরণ করতে থাকে। তাদের দিকে এবং তাদের আন্দোলনের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য, যেকোনোভাবেই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তারা ব্যাখ্যাতীত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকে।

সে সময় আন্দালুসিয়ার অধিবাসীরা গণহারে ইসলাম গ্রহণ করছিল। দলে দলে মানুষ খ্রিস্টধর্ম ছেড়ে ইসলামের নতুন ধর্মবিশ্বাসের দিকে ঝুঁকে পড়ছিল। নিজেদের পুরাতন ধর্মবিশ্বাসকে রক্ষা করার জন্য এবং নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তিক কাঠামোকে ধ্বসে পড়তে দেখে এই “শহিদ”রা এতোই হতাশ এবং বেদনাহত হয়ে পড়েছিল যে, তারা এই মনস্তাত্ত্বিক অবস্থায় উপনীত হয়ে একের পর এক অযৌক্তিক আক্রমণ করতে শুরু করেছিল, যার ফলাফল ছিল তাদের জন্য আরো ভয়াবহ।

প্রকাশ্যে এই উন্মত্ততার প্রকাশ ব্যক্তিগতভাবেও তাদের কোনো উপকার করতে পারেনি, কিংবা তাদের ধর্মীয় উদ্দেশ্যকেও কোনো সাহায্য করতে পারেনি। ইসলাম ঐ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সেখানকার অধিকাংশ মানুষই শেষপর্যন্ত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল।

আমরা ইসলামের জন্য, আমাদের বুদ্ধিমত্তা এবং কাণ্ডজ্ঞানের জন্য আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞ। এবং আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই হতাশা এবং তিক্ততা থেকে, যা মানুষকে অযৌক্তিকতা, মূর্খতা এবং জড়তার দিকে ধাবিত করে।

যারা এই ঘটনা নিয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য ডঃ ইয়াসির ক্বাদি Jessica Coope-এর লেখা ‘The Martyrs of Cordoba’ বইটি রেকমেন্ড করেছেন। তিনি লিখেছেন, অবশ্যই এই লেখিকা মুসলিম না, কিন্তু তার এই বইয়ে বর্ণিত ঘটনাগুলো ঐতিহাসিক এবং তথ্যসমৃদ্ধ।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *