-
বাদশাহ ফয়সাল কেন পেট্রোডলার চালু করেছিলেন?
১৯৭৩ সালটা ছিল মুসলমানদের জন্য, বা অ্যাকচুয়ালি আরবদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বছর। এই বছর একইসাথে দুইটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটে। এর একটা অবশ্য আরেকটার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
প্রথমত, ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দীর্ঘ ২৫ বছর পর এই বছরই প্রথমবারের মতো আরবরা তাদের বিরুদ্ধে প্রথম সীমিত আকারে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়।
আর দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার সাহায্যের প্রতিবাদে তেল উৎপাদনকারী আরব রাষ্ট্রগুলো একত্রিত হয়ে তেলের উৎপাদন কমিয়ে দেয়, দাম বাড়িয়ে দেয়, এবং আমেরিকার কাছে তেল বিক্রি করা বন্ধ করে দেয়।
সিদ্ধান্তটা সবগুলো আরব দেশ মিলেই নিয়েছিল। ইনফ্যাক্ট লিবিয়া এবং ইরাক ওপেকের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের একদিন আগে নিজেদের উদ্যোগেই আমেরিকার উপর তেল অবরোধ দিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সৌদি আরবই যেহেতু বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশ, এবং ওপেকের মধ্যে সৌদি আরবের প্রভাবই যেহেতু সবচেয়ে বেশি, তাই ওপেকের সম্মিলিত সিদ্ধান্তটি সৌদি আরবের নেতৃত্বেই গৃহীত হয়।
বিস্তারিত দেখুন ইউটিউব ভিডিওতে:
-
ফিলিস্তিনের গল্প: দ্য স্টোরি অফ দ্য ল্যান্ড
মূল: সারাহ আলি, ভাষান্তর: মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা
আমি তার অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকালাম, এবং সেখানে সুখের মতো কিছু একটার দেখা পেয়ে আমি হাসলাম। যে মানুষটাকে আমি সব সময় বাবা হিসেবে জেনে এসেছি, আজ তিনি ফিরে এসেছেন।
আজ তাকে আর সেই অপরিচিত লোকটার মতো দেখাচ্ছে না, যাকে গত তিন বছর ধরে আমি পুরোপুরি চিনতে পারিনি। তাকে আর সেই ভুলোমনের স্থির মূর্তির মতো মনে হচ্ছে না, যিনি সব সময় দেয়ালের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন এবং বাড়ির কেউ যখন তাকে সম্বোধন করত, তখন অনাগ্রহের সাথে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেন।
তিনি এখন এখানেই আছেন। তিনি এখানেই উপস্থিত আছেন। এবং আমি যখন আমার ভালো ফলাফল নিয়ে বড়াই করতে লাগলাম, তখন তিনি সত্যি সত্যিই সেটা শুনতে লাগলেন।
-
অপারেশন অলিম্পিয়া: যেদিন সম্পূর্ণ পিএলও নেতৃত্বকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল ইসরায়েল!
আজকের দিনটায় (১ জানুয়ারি) ঘটতে যাচ্ছিল অপারেশন অলিম্পিয়া – বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম বর্বোরিত একটা সন্ত্রাসী হামলা। আর সেটা ঘটাতে যাচ্ছিল ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের পিএলও নেতাদের উপর।
১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি পিএলওর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লেবাননের বৈরুত স্টেডিয়ামে একটা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পিএলওর চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত, তার ঘনিষ্ঠ সহকারী আবু আইয়্যাদ, আবু জিহাদসহ পিএলওর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
-
মিউনিখ ম্যাসাকার: অপারেশন ইক্রিত ওয়া বিরাম
১৯৭২ সালের আজকের এই দিনে (৫ সেপ্টেম্বর) সংঘটিত হয়েছিল অপারেশন “ইক্রিত ওয়া বিরাম”। নামটি এসেছে ফিলিস্তিনের দুটি খ্রিস্টান-প্রধান গ্রাম “ইক্রিত” এবং “বিরাম” থেকে, যাদের অধিবাসীদেরকে জায়নিস্টরা ১৯৪৮ সালে উচ্ছেদ করেছিল।
অপারেশনের অধীনে “ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর” নামে একটি ফিলিস্তিনি গেরিলা সংগঠন জার্মানির মিউনিখের অলিম্পিক ভিলেজে ঢুকে পড়ে এবং ১১ জন ইসরায়েলি খেলোয়াড় ও কোচকে জিম্মি করে।
তাদের মুক্তিপণ হিসেবে তারা ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ২৩৪ জন ফিলিস্তিনির এবং জার্মানির কারাগারে বন্দী বামপন্থী গেরিলা সংগঠন “রেড আর্মি ফ্যাকশন” তথা “বাদর-মেইনহফ” এর বন্দীদের মুক্তির দাবি জানায়।
কিন্তু ইসরায়েল আলোচনায় বসতে রাজি না হওয়ায় এবং জার্মানির পুলিশের অদক্ষতায় জিম্মি নাটক শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষে রূপ নেয়। বন্দী ১১ জন ইসরায়েলির সবাই, এক জার্মান পুলিশ অফিসার এবং ৫ জন ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্য নিহত হয়।
তাদের বাকি তিন জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়, কিন্তু পরবর্তীতে ব্ল্যাক সেপ্টেম্বরের প্রতিশোধের ভয়ে জার্মানি তাদেরকে মুক্তি দেয়। লিবিয়া তাদেরকে বীরের বেশে বিপুল সংবর্ধনা দিয়ে এয়ারপোর্টে স্বাগত জানায়।
মিউনিখে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি প্রচলিতভাবে মিউনিখ ম্যাসাকার নামে পরিচিত।
-
ডোভিড ওয়েইজ: ইসরায়েলের ধ্বংস চান যে ইহুদী ধর্মগুরু!
এই ভদ্রলোকের নাম ইসরোয়েল ডোভিড ওয়েইজ (Yisroel Dovid Weiss)। তিনি একজন ইহুদী ধর্মগুরু। ওয়েইজ হচ্ছেন বিশ্বের হাজার হাজার ইহুদীদের মধ্যে একজন, যাদের অবস্থান ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জায়নিজমের বিরুদ্ধে।
ওয়েইজের মা পোলিশ। এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নাৎসিদের হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিল। তারপরেও ওয়েইজ মনে করেন, ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একটা ভয়াবহ ধরনের অন্যায়।
এবং এর জন্য তিনি শুধু ওয়ান স্টেট বা টু স্টেট সল্যুশন চান না। তিনি চান ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের বিলুপ্তি। তিনি চান রাষ্ট্রটা থাকবে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে, ইহুদীরা তাদের পাশাপাশি, তাদের অধীনে শান্তিতে বসবাস করবে।
তার বক্তব্যে পক্ষে তিনি তাওরাত থেকেই যুক্তি দেন। তার দাবি, ইসরায়েলেও যারা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, ধর্মগুরু, তারা নিজেদের বাড়িতে ইসরায়েলের পতাকা ওড়ায় না, নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে সেনাবাহিনীতে দেয় না। কারণ তারা জানে ইহুদী ধর্মের দিক থেকেও এটা বড় ধরনের অন্যায়।
অথচ আমাদের মুসলমানদের রাষ্ট্রগুলোর নেতারাও সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের পক্ষে সাফাই গাইছে!
আল-জাজিরার সাথে তার একটি সাক্ষাৎকার আছে। দেখতে পারেন এখান থেকে।
ফিলস্তিন-ইসরায়েল বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়ুন এখান থেকে।
-
যেদিন ইসরায়েল নিজেদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল!
২০০৫ সালের আজকের এই দিনটি (২২ আগস্ট) ছিল ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য আনন্দের একটি দিন। দীর্ঘ ৩৮ বছরের দখলদারিত্বের পর এদিন গাজা থেকে সর্বশেষ ইসরায়েলি সেটেলমেন্ট উচ্ছেদ করা হয়।
এই “ডিসএনগেজমেন্ট”-এর ঘটনা ঘটে ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পরিপ্রেক্ষিতে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইসরায়েল গাজা থেকে নিজেদের অবৈধ বসতিগুলো এবং সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেসব ইহুদী সেটলার যেতে চায়নি, তাদেরকে সৈন্যরা জোর করে উচ্ছেদ করে।
গাজার মোট ২১টি সেটেলমেন্টের প্রায় ৮,০০০ সেটলারকে সে সময় উচ্ছেদ করা হয়। যাওয়ার সময় সৈন্যরা বুলডোজার দিয়ে সেটলারদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় যেন ফিলিস্তিনিরা সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে।
যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি, গাজা পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত কারাগারে, তারপরেও ইসরায়েলিদেরকে উচ্ছেদ করতে পারাটা ছিল বড় একটা অর্জন।
-
গাদ্দাফির লিবিয়ায় ফিলিস্তিন (ফটোব্লগ)
আমাদের পুরো শৈশব-কৈশোরে আমরা টিভিতে “ইসরায়েল” নামটা শুনিনি। শুনেছি শুধু “ফিলিস্তিন” বা “দখলকৃত ফিলিস্তিক”।
ছোটকালে আমরা শুধু লিবিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-জামাহিরিয়াই দেখতে পারতাম। বিটিভি দেখার সৌভাগ্য হয় নাই, বাট ধারণা করছি জামাহিরিয়া ছিল বিটিভিরই লিবিয়ান ভার্সন। সারাদিন শুধু গাদ্দাফিকেই দেখানো হতো।
সংবাদেও কোনো বৈচিত্র্য ছিল না। গাদ্দাফি কোথায় গিয়েছে, কী করেছে, কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে – শুধু সেগুলোরই ম্যারাথন বিবরণ।
-
ঘাসান কানাফানি: এক বলিষ্ঠ কণ্ঠের বিপ্লবী
৭২ বছর আগের এই দিনে (১৫ই মে) ইসরায়েল তার অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়, আর সেদিন জায়নিস্টরা দল বেঁধে আক্রমণ করে ফিলিস্তিনের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামগুলোতে। ৭ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়। তাদেরই একজন ছিলেন ১২ বছর বয়সী বালক গাসসান কানাফানি।
পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে তার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল প্রথমে লেবাননে, পরে সিরিয়ায়। দামেস্ক ইউনিভার্সিটি পড়াশোনা করেছেন সাহিত্য নিয়ে। নিজেও বেড়ে উঠেছেন সাহিত্যিক হিসেবেই। কিন্তু ভুলে যাননি তার আত্মপরিচয়ের কথা।