-
নেটফ্লিক্সের গাদ্দাফি এপিসোড: কতটুকু সত্য? কতটুকু প্রপাগান্ডা?
নেটফ্লিক্সের How to Become a Tyrant এর পঞ্চম পর্বটা সাবেক লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে নিয়ে – কীভাবে গাদ্দাফি পুরো সমাজব্যবস্থাকেই নতুন করে গড়ে তুলেছিল।
এপিসোডটা মোটের উপর ভালো। এটার শুরুটাও ভালো ছিল। এখানে স্বীকার করা হয়েছে, গাদ্দাফি শুরুতে জেনুইনলিই মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটা রাষ্ট্রের জনগণকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে নিজেই নিজেকে দেশের জন্য অপরিহার্য্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল।
গাদ্দাফির যে সমালোচনাগুলো করা হয়েছে, তার অনেকগুলোই জেনুইন। গাদ্দাফি আসলেই সব ধরনের প্রেস ফ্রিডম, ট্রেড ইউনিয়ন, স্টুডেন্ট ইউনিয়ন – সোজা কথায় সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সব ধরনের উপায়কে নিষিদ্ধ করেছিল। এবং ৭৬ সালের ৭ই এপ্রিল সত্যিসত্যিই ছাত্র আন্দোলনের আয়োজকদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।
-
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির শাসনামল
১৯৬৯ সালের এই দিনে (১লা সেপ্টেম্বর) মাত্র ২৭ বছর বয়সী এক যুবক লিবিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলেন। সেই যুবক, ক্যাপ্টেন মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির শাসনামল স্থায়ী হয় পরবর্তী ৪২ বছর পর্যন্ত।
টেকনিক্যালি গাদ্দাফি নিজে সেদিন ফিল্ডে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি আগে থেকে সবকিছুর আয়োজন করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু অভ্যুত্থানের দিন তিনি বাকি সবাইকে দায়িত্ব দিয়ে বিশ্রাম নিতে চলে গিয়েছিলেন। সকালবেলা তিনি যখন ঘুম থেকে ওঠেন, ততক্ষণে অভ্যুত্থান ঘটে গেছে।
-
গাদ্দাফির দৃষ্টিতে ইরাক আক্রমণের ফলাফল
২০০২ সালের অক্টোবরে, ইরাক যুদ্ধের ছয় মাস আগে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক স্কট অ্যান্ডারসন (Scott Anderson) লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণের জন্য সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ততা, গণবিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদনসহ একের পর এক নানা অজুহাত তৈরি করছিল।
স্কট অ্যান্ডারসন ঐ সাক্ষাৎকারে গাদ্দাফিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমেরিকা যদি আসলেই ইরাক আক্রমণ করে, তাহলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে?”
দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে গাদ্দাফি তার স্বভাবসুলভ নাটকীয় ভঙ্গিতে দীর্ঘ বিরতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তর যেন তার তৈরিই ছিল। বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “বিন লাদেন।”
গাদ্দাফি বলেছিলেন,
কোনো সন্দেহ নেই ইরাক আক্রমণ করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আল-কায়েদা। ইরাক হয়ে উঠবে আল-কায়েদার আক্রমণের স্টেজিং গ্রাউন্ড। কারণ সাদ্দামের সরকার যদি ধ্বসে পড়ে, ইরাকে অরাজকতা নেমে আসবে। যদি সেটা ঘটে, তাহলে আমেরিকার উপর আক্রমণ জিহাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সে সময় কেউ গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু এখন অনেক বিশ্লেষকই এ ব্যাপারে একমত যে, আফগানিস্তান যুদ্ধের পর যে আল-কায়েদা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, বা অন্তত আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল, ইরাক যুদ্ধই তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে গত এক দশকের যে সঙ্কট, দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ, আল-কায়েদা ও আইসিসের উত্থান, তার সব কিছুর মূলে আছে ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমণ।
স্কট অ্যান্ডারসনের লেখা বই “ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস” থেকে। বইটির রিভিউ পড়তে পারেন এখান থেকে।
-
গাদ্দাফি এখনও বেঁচে আছেন – জনপ্রিয় থ্রিলার লেখকের ১৫টি পয়েন্ট
জেমস মরকান (James Morcan) একজন হরর, থ্রিলার, ক্রাইম বিষয়ক লেখক। কিন্তু এটাই তার একমাত্র পরিচয় না। তিনি একাধারে একজন চিত্রনাট্যকার, অভিনেতা, পরিচালক এবং চলচ্চিত্র প্রযোজকও। তার চলচ্চিত্রগুলোর কোনোটাই অবশ্য বিখ্যাত না, কিন্তু লেখক হিসেবে তার মোটামুটি ভালোই পরিচিতি আছে।
তার গুডরিডস অথর প্রোফাইলে মোট ২৯টা বইয়ের নাম পাওয়া যায়, ৪ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে যেগুলো গড়ে ৩.৯৯ রেটিং অর্জন করেছে। প্রোফাইলে থাকা বর্ণনা অনুযায়ী তার দুইটা বই নাকি বেস্ট সেলার, যেগুলো মোট আটটা ভাষায় অনুদিত হয়েছে। অবশ্য বেস্ট সেলার লিস্টগুলোতে যে বিভিন্ন ধরনের ধোঁকাবাজি সম্ভব, সেটা তো জানা কথা।
-
গাদ্দাফির শাসনামলের ১০টি অবিশ্বাস্য সুবিধা: কতটুকু বাস্তব, কতটুকু প্রপাগান্ডা?
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির গুণগান সম্বলিত একটি ভাইরাল লিস্ট পাওয়া যায় ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে, যেখানে গাদ্দাফির শাসনামলে লিবিয়ানরা কত সুখে-শান্তিতে ছিল, সেটি বোঝানোর জন্য ১০টি বা ১২টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়।
লিস্টটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, দুদিন পরপরই কেউ না কেউ এটি শেয়ার করে, এবং অবধারিতভাবে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ না কেউ আমাকে সেখানে ট্যাগ করে এর সত্যতা জানতে চায়। অনেক দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত এর সত্যতা যাচাইমূলক একটি লেখা লিখেই ফেললাম।
-
গাদ্দাফির লিবিয়ায় ফিলিস্তিন (ফটোব্লগ)
আমাদের পুরো শৈশব-কৈশোরে আমরা টিভিতে “ইসরায়েল” নামটা শুনিনি। শুনেছি শুধু “ফিলিস্তিন” বা “দখলকৃত ফিলিস্তিক”।
ছোটকালে আমরা শুধু লিবিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-জামাহিরিয়াই দেখতে পারতাম। বিটিভি দেখার সৌভাগ্য হয় নাই, বাট ধারণা করছি জামাহিরিয়া ছিল বিটিভিরই লিবিয়ান ভার্সন। সারাদিন শুধু গাদ্দাফিকেই দেখানো হতো।
সংবাদেও কোনো বৈচিত্র্য ছিল না। গাদ্দাফি কোথায় গিয়েছে, কী করেছে, কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে – শুধু সেগুলোরই ম্যারাথন বিবরণ।
-
গাদ্দাফি যেভাবে আমেরিকার উপর বাটপারি করে ক্যু করেছিলেন
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফি ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসির বিরুদ্ধে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসিকে হাতে রাখার জন্য সিআইএ তাকে টাকা দিত। কিন্তু ইদ্রিস বৃদ্ধ হয়ে পড়ে পড়েছিলেন। দক্ষতার সাথে নিজের প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারছিলেন না। আমেরিকার কথামতো কাজ করতে পারছিলেন না। ফলে ১৯৬৯ সালে সিআইএ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।
কিন্তু সিআইএর জানা ছিল না, একই সময়ে এক তরুণ আর্মি ক্যাপ্টেন, মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিও অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এবং সিআইএর ক্যুয়ের শিডিউলের কয়েকদিন আগেই গাদ্দাফি ইদ্রিসের বিরুদ্ধে ক্যু করে বসেন।
কত অজানা রে 🙂
তথ্যসূত্র: Joseph J. Trento এর লেখা বই Prelude to Terror
লিবিয়া এবং গাদ্দাফি বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়তে পারেন এখান থেকে। আর বিভিন্ন বইপত্র থেকে পাওয়া আকর্ষণীয় বিভিন্ন তথ্য অবলম্বনে আমার বিভিন্ন লেখা পাবেন এই লিঙ্কে।
-
দ্য ম্যাসেজ: গাদ্দাফির কল্যাণে যেভাবে আলোর মুখ দেখেছিল সিনেমাটি
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর জীবনী নিয়ে নির্মিত দ্য ম্যাসেজ (The Message) তথা আর-রিসালাহ মুভিতে বদরের যুদ্ধের একটা সিন আছে। সেখানে যুদ্ধের পূর্বে মুসলমানদেরকে একটা কুয়া থেকে পানি তুলতে দেখা যায়। বিখ্যাত লিবিয়ান পর্যটক ওসামা থিনির পোস্ট অনুযায়ী, ফিচার ইমেজের ছবির এই জিনিসটাই হচ্ছে সেই কুয়াটা। জায়গাটা লিবিয়ার দক্ষিণে ওবারি শহরের নিকটে, সাহারা মরুভূমিতে।