রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি: একটি প্রতীক্ষিত সিকুয়েল

পড়লাম মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের জনপ্রিয় থ্রিলার “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি”-এর সিকুয়েল “রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি”। কাহিনী সংক্ষেপে না গিয়ে অন্য কয়েকটা পয়েন্ট বলি।

প্রথম খণ্ডের তুলনায় দ্বিতীয় খণ্ডটিকে কিছুটা ধীর গতির মনে হতে পারে। প্রথম খণ্ডটি একেবারে প্রথম অধ্যায় থেকেই পাঠককে চুম্বকের মতো বইয়ের পাতায় আটকে রাখতে পারে, প্রতিটি অধ্যায় শেষ হওয়ামাত্রই পাঠক পরে কী হয়েছে জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।

সে তুলনায় সিকুয়েলটি প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত কাহিনী পাঠককে আকৃষ্ট করতে কিছুটা ব্যর্থ। কাহিনী এগিয়ে যায় অনেকটা দায়সারাভাবে, অনেক ক্ষেত্রে বর্ণনাগুলোকে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। ৩৬৬ পৃষ্ঠার (কলকাতা সংস্করণ, বাংলাদেশ সংস্করণে মোট পৃষ্ঠা ৪৩২) বইটির ১৮১ পৃষ্ঠা পার হওয়ার পর ছফা যখন কলকাতায় যায়, তখন থেকেই কেবল কাহিনী জমে উঠতে শুরু করে, এবং পাঠক প্রথম খণ্ড পড়ার সময়ের মতো অনুভূতি ফিরে পায়।

… প্রথম খণ্ডে একটা উল্লেখযোগ্য ত্রুটি ছিল বারবার মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া। কাহিনীতে কিছু কিছু জায়গায় যেখানে রহস্য তৈরি করা দরকার ছিল, কিন্তু মোবাইল ফোনে যোগাযোগ স্থাপিত হলে সে রহস্য আর জমতে পারত না, সেরকম একাধিক জায়গায় লেখক মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার অজুহাত তৈরি করেছিলেন, যা রীতিমতো অযৌক্তিক ঠেকেছিল।

কিন্তু এবার লেখক এক্ষেত্রে সৃজনশীলতার আশ্রয় নিয়েছেন। চার্জ শেষ না হয়ে এবারের অজুহাতগুলো ছিল কখনও ছফার প্লেনে থাকার কারণে নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাওয়া, আবার কখনও পিএসের প্রধানমন্ত্রীর সাথে জরুরী মিটিংয়ে থাকার কারণে ফোন বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়া।

৩৬৬ পৃষ্ঠার (বাংলাদেশ সংস্করণে ৪৩২ পৃষ্ঠা) একটা উপন্যাসকে মোটামুটি বড়সড় উপন্যাসই ধরা যায়। কিন্তু তারপরেও বইয়ের দ্বিতীয় অর্ধেকে কাহিনী এত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যায়, শেষ পর্যন্ত বইটিকে খুব একটা বড় বলে মনে হয় না। বরং ৯৭তম অধ্যায়ে যেখানে ফ্ল্যাশব্যাকে গিয়ে মুশকান জুবেরির কলকাতা পর্বের বিবরণ দেওয়া হয়, মনে হয় সেখানে যেন লেখক বিশাল ঘটনাকে খুব দ্রুত বলে শেষ করে দিতে চাইছেন।

এই অংশটুকু এভাবে ফ্ল্যাশব্যাকে না বলে আরো বিস্তারিতভাবে কাহিনীর ভেতরে ভেতরে কয়েকটা অধ্যায়জুড়ে বললেই হয়তো আরো ভালো হতো। কারণ এমনিতেও উপন্যাসে যেসব টুইস্ট ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো সেই অর্থে খুব চমকপ্রদ না। মনোযোগী পাঠকের পক্ষে সেগুলো আগেভাগেই অনুমান করা সম্ভব।

সব মিলিয়ে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’ একটি মোটামুটি আকর্ষণীয় থ্রিলার। যদিও সিকুয়েল, তবুও কাহিনী এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কেউ চাইলে প্রথমটি না পড়েও এটি পড়তে পারবে। বইটি বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে। গুডরিডসে এর রেটিং ৩.৪৯/৫ (প্রথম খণ্ডের রেটিং ছিল ৩.৯৮/৫)।

পার্সোনাল রেটিং ৪/৫। প্রথমটাকে ৫/৫ দিয়েছিলাম।

কাহিনী সংক্ষেপ এবং আরো কিছু পয়েন্টসহ ৯৫০+ ওয়ার্ডের সম্পূর্ণ রিভিউটা লিখেছি রোর বাংলায়। পড়তে পারেন এখান থেকে। আর বইপত্র সংক্রান্ত আমার সবগুলো লেখা এবং সবগুলো বই রিভিউ পড়তে পারেন এখান থেকে

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *