ম্যারি কোলভিনের প্রাইভেট ওয়ার

নিচের ছবি গাদ্দাফির সাথে ম্যারি কোলভিনের যে দৃশ্যটা দেখা যাচ্ছে, সেটা বাস্তবের না, A Private War সিনেমার। এবং এখানে যে গাদ্দাফিকে দেখা যাচ্ছে, তিনিও আসল গাদ্দাফি নন; সিনেমার অভিনেতা। তবে বাস্তবেও সানডে টাইমসের সাংবাদিক ম্যারি কোলভিন গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। একবার না, একাধিক বার।

১৯৮৬ সালে রিগ্যান প্রশাসন যখন লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাসভবনের উপর বিমান হামলা (অপারেশন এল-ডোরাডো ক্যানিয়ন) পরিচালনা করে, তখন ম্যারি কোলভিনই ছিলেন প্রথম সাংবাদিক, যিনি গাদ্দাফির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

এ প্রাইভেট ওয়ার মুভিতে গাদ্দাফির সাথে সাংবাদিক ম্যারি কোলভিন

পরবর্তীতে ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পরেও গাদ্দাফির প্রথম সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি। ইনফ্যাক্ট গাদ্দাফি প্রশাসন ম্যারি কোলভিনের রিকোয়েস্টে সাড়া দিয়ে মোট তিনজন সাংবাদিককে গাদ্দাফির সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেয়। বাকি দুইজন সাংবাদিক কারা হবেন, সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তারা ম্যারির উপরেই ছেড়ে দেয়।

ম্যারি কোলভিন বিবিসির জেরেমি বাওয়েন এবং এবিসির ক্রিস্টিয়ান আমানপুরকে সাথে নিয়ে গাদ্দাফির সাক্ষাৎ নেন। এই সেই ভাইরাল সাক্ষাৎকার, যেভাবে গাদ্দাফি জেরেমি বাওয়েনের প্রশ্ন বুঝতে না পেরে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন, “আ … ওয়াত ইজ দ্য কোশ্চেন?” এই সাক্ষাৎকারেই গাদ্দাফি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে “দিস ইজ কায়েদা” বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে ম্যারি কোলভিন হোমসের ভেতর থেকে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে বিবিসি সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে সাক্ষাৎকার দিয়ে বেসামরিক জনগণের উপর আসাদ বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের সংবাদ তুলে ধরেন। তিনিই ছিলেন সে সময় অবরুদ্ধ হোমসের ভেতরে থাকা একমাত্র বিদেশী সাংবাদিক।

গাদ্দাফির মৃত্যুর পর ম্যারি কোলভিন তার রিপোর্টে লেখেন, “হি কল্‌ড হিজ এনিমিজ র‌্যাটস। হি টার্গেটেড উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন। ইয়েট ইট ওয়াজ কর্ণেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি, হু ওয়াজ কর্নার্ড ইন এ সুয়ার পাইপ।”

চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা একত্রে পাবেন এখানে। আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি রাজনীতি বিষয়ক সবগুলো লেখা পাবেন এখানে।

লিবিয়ার পর ম্যারি কোলভিন নিউজ কভার করার জন্য গিয়েছিলেন সিরিয়াতে। সরকারি চেকপয়েন্ট এড়িয়ে গোপনে তিনি হাজির হন অবরুদ্ধ হোমস শহরে, যেখানে তার ফটোগ্রাফারের হিসেব অনুযায়ী কখনও কখনও মিনিটে ৪৫টি করে মিসাইল নিক্ষেপ করছিল আসাদ বাহিনী।

সাংবাদিকের লেখনী যে কতটা শক্তিশালী, সেটা আসাদ বাহিনী ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল। তারা যে শুধু “সন্ত্রাসীদের” উপরেই হামলা করছিল না, বরং নির্বিচারে বিদ্রোহীদের এলাকার সাধারণ মানুষের উপরেও হামলা করছিল, সেটা এক ম্যারি কোলভিনের কারণেই জেনে যাচ্ছিল বিশ্ববাসী।

যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু ঘনিয়ে আসতে পারে জেনেও আরো রিপোর্ট করার জন্য হোমসে রয়ে গিয়েছিলেন ম্যারি কোলভিন। অবশেষে ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে আসাদ বাহিনীর রকেট হামলায় নিহত হন তিনি এবং তার এক সহকর্মী। ধারনা করা হয়, তার স্যাটেলাইট ফোনের সিগন্যাল ট্রেস করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই টার্গেটেড হামলা করেছিল আসাদ বাহিনী।

“এ প্রাইভেট ওয়ার” সিনেমাটি ম্যারি কোলভিনের সাংবাদিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনার সমন্বয়ের তৈরি। ম্যারি চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন গন গার্ল খ্যাত অভিনেত্রী রোজামুন্ড পাইক। মুভিটার উপর বিস্তারিত রিভিউ লিখেছি রোর বাংলায়। লিংক এখানে

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *