লিবিয়া যুদ্ধের ডায়েরি (৭ম পর্ব): বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে

উদ্ধার হওয়ার পর আমাদেরকে বেশিক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করতে হলো না। সেই দাড়ি-টুপি এবং চশমাওয়ালা বৃদ্ধ আমাদেরকে এক যোদ্ধার গাড়িতে তুলে দিয়ে নিজে পেছন পেছন আসতে লাগলো। সেই যোদ্ধা গাড়িতে উঠেই প্রথমে আমাদেরকে বলল, গুল গাদ্দাফি ক্যাল্‌ব। অর্থাৎ, বল গাদ্দাফি কুত্তা।

আমরা সবাই-ই সম্মতিসূচক একটা হাসি দিলাম, কিন্তু প্রথমে কেউই উচ্চারণ করলাম না। গাদ্দাফির এই মুহূর্তের নীতি খারাপ, কিন্তু জন্মের পর থেকে তো তার দেশেই খেয়ে পরে বড় হচ্ছি, এত সহজে তাকে এভাবে গালি দেই কীভাবে?

যোদ্ধাটা বলল, ও তার মানে তোমরা গাদ্দাফির সৈন্য? দিলাম কিন্তু নামিয়ে! অগত্যা আমরা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে স্বীকার করলাম, সাহ্‌, গাদ্দাফি মোশ কইয়েস। কাতির ন্যাস ম্যাত। হারাম হ্যাদা! অর্থাৎ, ঠিক, গাদ্দাফি ভালো না। প্রচুর মানুষ মরেছে। এটা হারাম!

গাড়িতে উঠেই আব্বু নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছিল। এবার আমাকে বলল, চেক এবং ব্যাংকের কাগজপত্রগুলো কোথায়? আমার মনে পড়ল সেগুলো তো খাটের উপরেই রয়ে গেছে, আনা হয়নি। আব্বুর মন আবার খারাপ হয়ে গেল, কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।

মিনিট বিশেক চলার পরে জীপটা সাবাতাশের অস্থায়ী হসপিটালে (সিরতের সতেরো কিলোমিটার পশ্চিমে) এসে পৌঁছল। দেখলাম সেখানে মুক্তারা এবং হিরণ ভাইরাও আছে। আমাদের গাড়ি থামার সাথে সাথেই দুইজন সাংবাদিক এসে আমাদেরকে ঘিরে ধরল। একজন এএফপির, অন্যজন জার্মান একটা ডকুমেন্টারি মেকার, সে ভিডিও করছে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে লাগলো, আর আমিও যতদূর সম্ভব উত্তর দিতে লাগলাম।

কিছুক্ষণ পরেই মুক্তাদেরকে এবং হিরণ ভাইদেরকেসহ আমাদের সবাইকে আবার গাড়িতে তোলা হলো। এবার নাকি আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে বাওয়াবাত খামসিনে (গেট অফ ফিফটি, সিরত থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার পশ্চিমে) অবস্থিত আরেকটি অস্থায়ী হাসপাতালে।

যেতে যেতে শুনলাম কীভাবে মুক্তাদেরকে এবং হিরণ ভাইদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিদ্রোহীরা তাদের লোহার দরজার সামনে এসে গুলি করা শুরু করতেই খান আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার শুরু করে। খানের আল্লাহু আকবার শুনেই হোক আর ভেতরে নারী-শিশুদের চেঁচামেচিতেই হোক, বিদ্রোহীরা সাথে সাথে থেমে যায় এবং ভদ্রভাবে দরজা খুলতে বলে।

হিরণ ভাই আর ভাবী আগেই ভয়ে আধমরা হয়েছিল, দরজা খোলার সাথে সাথেই হিরণ ভাই দৌড়ে গিয়ে এক যোদ্ধার পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয়। যোদ্ধাটা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ফ্যামিলি বলেই বোধহয় আমাদের চেয়ে হিরণ ভাই এবং মুক্তাদেরকে বিদ্রোহীরা আরো বেশি সময় দিয়েছিল জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য। কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি, মুক্তারা তেমন কিছুই নিতে পারে নি। শাহীন তো মোটে লুঙ্গি পরেই চলে এসেছে। যা কিছু নেওয়ার কান্নাকাটির মধ্যে দিয়েও হিরণ ভাই-ই নিয়েছে।

আমাদের মতোই তাদেরকেও বিদ্রোহীরা একইভাবে কভারিং ফায়ার দিয়ে রাস্তা পার করিয়েছে। ঘর থেকে বেরোনোর সময়ই দুইজন যোদ্ধা মুক্তা এবং হিরণ ভাইর মেয়েকে কোলে নিয়ে নেয়। তাদের বাবা-মায়েরা অবশ্য বাচ্চাগুলোকে হাতছাড়া করতে চাইছিল না, গাদ্দাফি-বাহিনীর প্রচার করা বিদ্রোহীদের অমানবিকতার কাহিনী, মানুষকে ধরে ধরে জবাই করার কাহিনী কেউই ভোলেনি।

তবে বিদ্রোহীরা অনেকটা জোর করেই বাচ্চাগুলোকে কোলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে। আমিনুর আংকেলরা নিজেরাই দৌড়াতে পারছিল, কিন্তু হিরণ ভাই এবং ভাবী দুজনেই কান্নাকাটির জন্য দৌড়াতে পারছিল না। তাদেরকে দুজন করে যোদ্ধা দুপাশ থেকে ধরে ধরে রাস্তা পার করে নিয়ে গেছে।

বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্য দিয়ে বাচ্চাদুটোকে রাস্তা পার করানোর যে বর্ণনা খান দিল, সেটা যেকোনো ঐতিহাসিক বীরত্বের কাহিনীকে হার মানায়। পরবর্তীতে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এএফপির ফটোগ্রাফারের তোলা যে ছবিটি পাওয়া গেছে, সেটাও যেকোনো যুদ্ধের ফিল্মের ম্যাগনেট অংশকে হার মানায়। হিরণ ভাইর মেয়েকে নিয়ে দৌড়ানো যোদ্ধাটি এক পর্যায়ে বুলেটের খোসায় পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তখনও সে বাচ্চাটিকে কোল থেকে ছাড়েনি।

রাস্তা পার হওয়ার পর এক বিদ্রোহীর কোলে হিরণ ভাইর মেয়ে মীম

রাস্তার ওপারে যাওয়ার পর হিরণ ভাই আর ভাবী পুনরায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। বিদ্রোহীরা তাদের মাথা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুইয়ে দেয়। ভেজা জামা-কাপড়ে তারা দুজন কাঁদছে আর সেই টুপি-দাড়ি এবং চশমাওয়ালা বৃদ্ধ তাদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছে – এএফপির বরাত দিয়ে এই ছবি এবং সংক্ষিপ্ত ফুটনোট পরদিন ১৮ ই অক্টোবর, ২০১১ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো এবং দৈনিক যুগান্তরে ছাপা হয়। ফেসবুকের কল্যাণে সেই ছবি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে হিরণ ভাইদের দেশের বাড়িতে চরম উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে এসব কিছুই আমরা জানতে পেরেছি যুদ্ধ শেষ হওয়ার আরও অনেক পরে।

আরো আধ ঘণ্টা চলার পর আমরা খামসিনে এসে পৌঁছলাম। পুরো রাস্তাজুড়ে সাধারণ গাড়ি একটাও চোখে পড়েনি, চোখে পড়েছে শুধু যুদ্ধের গাড়ি, বিদ্রোহীদের পতাকাবাহী, অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট, মেশিনগান ফিট করা হাজার হাজার গাড়ি, মেইন রোড ধরে শুধু তাদের মিছিল আসছে আর যাচ্ছে। যেই পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে, তাদের তো শুধু দেশের ভেতরে না, বাইরের শক্তির সাথেও যুদ্ধ করার সামর্থ্য থাকার কথা! অথচ তারা কি না সিরতের মতো ছোট একটা শহরই দখল করতে পারছে না!

তবে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য লাগলো পুরো পঞ্চাশ কিলোমিটার রাস্তায় কিছুদূর পরপর শুধু তিন রং-এর চাঁদ-তারা খচিত পতাকা, গাদ্দাফির সবুজ পতাকার কোন চিহ্নও নেই! বিদ্রোহীরা মাত্র কয়েকশত, সব এলাকা গাদ্দাফির দখলে, বিদ্রোহীরা শুধু সাহারা দিয়ে বাইপাস করে একেকটা এলাকায় অল্প কিছুক্ষণের জন্য ঢুকে ভিডিও করে নিয়ে আল-জাজিরাতে প্রচার করে – গাদ্দাফির মিডিয়ার এইসব অপপ্রচারের সারশূন্যতা আজ নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করলাম।

চশমাওয়ালা সেই বৃদ্ধ আমাদেরকে বলে গেল, ঐ যে ওখানে হেলিকপ্টার আছে, তোমরা যদি চাও হেলিকপ্টারে করে তোমাদেরকে মিসরাতায় নিয়ে যাওয়া হবে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থোওয়াররাই (বিপ্লবী যোদ্ধারা) করবে। এছাড়া যদি দেশে যেতে চাও তাহলে ঐ যে রেডক্রসের অফিস, ওদের সাথে যোগাযোগ করলে বিনা খরচে দেশে পাঠিয়ে দিবে। আমাদের দেশে বা মিসরাতায় যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই। আম্মু আর তিথি কোথায় আছে এখনও জানি না, সিরতের যত কাছাকাছি থাকতে পারি, ততই তাদেরকে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

খামসিনে আমরা প্রথমদিন অনেকটা উদ্বাস্তুর মতোই কাটালাম। খাবার-দাবারের কোনো অভাব হলো না, যত খুশি তত খাও – এরকম অবস্থা, তবে থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা। হসপিটালের দায়িত্বে থাকা ডাঃ আব্দুর রহমান বলল, এটা হসপিটাল, সিভিলিয়ানদের আশ্রয়কেন্দ্র না, তোমরা ফ্রন্টলাইন থেকে কোনো রিকোয়েস্ট লেটার ছাড়া এখানে কীভাবে এলে সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না। সে কয়েক জায়গায় ওয়্যারলেস দিয়ে যোগাযোগ করল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

তার কথাবার্তায় ফ্রন্টলাইনের কমান্ডারদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ পেতে লাগলো। সে বলতে লাগলো, “বিলিভ মি, দেয়ার ইজ নো সিস্টেম, নো প্রি-প্ল্যান্‌ড অ্যারেঞ্জমেন্ট ইন দিস রেভোল্যুশন। ওনলি উই আর ইন দ্য রাইট পাথ, সো ইভরিথিং ইজ হ্যাপেনিং বাই গড’স উইল।”

“ইউ নো, হাউ ত্রিপোলি ওয়াজ ক্যাপচার্ড? দ্য এনটিসি অফিশিয়ালস হ্যাড এ কম্বাইন্ড প্ল্যান টু অ্যাটাক ত্রিপোলি ইন এ সিসটেম্যাটিক ওয়ে। বাট হোয়েন দ্যা রেবেলস এন্টার্ড জাওইয়া, টুয়েন্টি ফাইভ কিলোমিটার্স ফ্রম দ্যা ক্যাপিটাল, দে সেইড, উই ডোন্ট নিড অ্যানি প্ল্যান। উই আর নিয়ার, অ্যান্ড উই নো উই ক্যান ক্যাপচার ত্রিপোলি। উই ফিল ইট। অ্যান্ড দে রিয়েলি ক্যাপচার্ড ত্রিপোলি উইথইন এ নাইট!”

“আই মেট ওয়ান অফ দেম, হি সেইড, আই ডোন্ট নো হাউ আই এন্টার্ড দ্যা গ্রিন স্কয়ার। উই ওয়্যার আউটসাইড অ্যান্ড সাডেনলি উই ফাউন্ড আওয়ার সেলভস ইন সাইন দ্য মার্টায়্যার্স স্কয়ার!”

বিকেল বেলা হঠাৎ করে কবির আঙ্কেলের সাথে দেখা হয়ে গেল। তিনি সিরতের মুজাম্মা হসপিটালে চাকরি করতেন, গত দশদিন আগে বিদ্রোহীরা ওখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। এরপর থেকে তিনি এখানেই আছেন। একটা কন্টেইনারে থাকেন, খাওয়া-দাওয়ার কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু ক্যান্টিনের কাজকর্মে টুকটাক হেল্প করতে হয়।

রাতের বেলা ক্যান্টিনের পরিচালক তথা এই পুরো ক্যাম্পটার পরিচালক খেইরি নিজে এসে আমাদেরকে বলে গেল, এটা এমনিতে আশ্রয়কেন্দ্র না, তবে আজ রাতের জন্য সমস্যা নেই, থাকা যাবে। কিন্তু আগামীকাল থেকে থাকতে হলে ক্যান্টিনের কাজে সাহায্য করতে হবে। আমরা সহজেই রাজি হয়ে গেলাম। ফ্যামিলি দুটোর জন্য একটু আড়ালে একটা তাঁবু খাটিয়ে দেওয়া হলো, আর আমরা চারজন, সাথে খান আর শাহীন পেলাম একটা কন্টেইনার।

পরদিন কাজে হাত দিয়ে দেখলাম, সিরতে যত সৈন্য যুদ্ধ করছে তার একটা অংশের জন্য এখানে প্রতিদিন খাবার তৈরি করা হয়। প্রায় ষোল-সতেরশো লোকের রান্না, সেগুলো প্যাক করা, বিশাল বিশাল হাড়ি পাতিল ধোয়া – সবই করছে ভলান্টিয়াররা। এদের মধ্যে বেশ কজন স্কুলের ছাত্রও আছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন যে হাজার হাজার বোতল পানি, জুস, দুধ, পনির, টুনা ফিশ যা কিছু আসে, তার সবই মিসরাতার বিভিন্ন ধনী লোকেরা, ব্যবসায়ীরা যুদ্ধের জন্য দান করছে। তাদের ভাষায় ফী সাবিলিল্লাহ্‌। সবার একটাই লক্ষ্য – গাদ্দাফিকে হটাও।

কাজে লেগে গেলাম আমরা। প্রথম দিন সুযোগ পেয়ে আমাদেরকে প্রচুর খাটাল, কিন্তু আমাদের অসন্তোষ বুঝতে পেরে পরিচালক খেইরি বলে দিলো, কাল থেকে তোমরা শুধু ধোয়াধুয়ির কাজে থাকবে, কেউ ডাকলেও অন্য কাজে যাবে না। বলবে খেইরি নিষেধ করেছে। তালহার অবশ্য কাজ করার দরকার নেই, কিন্তু তবুও সে খাবার প্যাকিং করার কাজে স্বেচ্ছায় যোগ দিলো।

কাজ করতে আমাদের মজাই লাগত। একটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধের যুদ্ধে আমরাও কিছু একটা করছি – এটা ভাবতেই গর্ব লাগত। কাজ চলার মধ্যেই হয়তো একজন চিৎকার করে ওঠে, তাকবির! সাথে সাথে বাকিরা সমস্বরে বলে ওঠে আল্লাহু আকবার! একবার শুরু হলে একটানা মিনিট পাঁচেক চলতেই থাকে।

শ্লোগানটার একটা আলাদা টান আছে, আমাদের মজাই লাগতে থাকে। সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা লক্ষ্য করলাম ক্যান্টিনের দরজার সামনেই মাটিতে গাদ্দাফির একটা ছবি বিছিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই প্রতিবার ঢুকতে বের হতে সেটা পাড়িয়ে যাচ্ছে।

এদিন ফ্রেঞ্চ লিবারেশন পত্রিকার সাংবাদিক লুক ম্যাথিউ এবং জার্মান নেভেস ডয়েচল্যান্ড পত্রিকার সাংবাদিক মার্টিন আমার সাক্ষাৎকার নিলো। মার্টিন অনেকটা রোবট টাইপের, ঠিকমতো প্রশ্নও করতে জানে না। অদ্ভুত অদ্ভুত অগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো। তবে লুক ঠিক মতোই প্রশ্ন করল। এছাড়া সে বেশ আন্তরিকও ছিল।

সে যখন শুনল যে গত তিনমাস ধরে দেশের কারো সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই, তারা জানেও না আমরা বেঁচে আছি না মারা গেছি, তখন নিজের ব্যয়বহুল স্যাটেলাইট ফোনটা বের করে কথা বলার জন্য আমার হাতে দিয়ে কফি খেতে চলে গেল। আমি সংক্ষেপে আমার খালাতো ভাই বাবুকে আমাদের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে দিলাম। তবে আম্মুরা এক জায়গায়, আমরা অন্য জায়গায়, কারো খবর কেউ জানি না – এটা ইচ্ছে করেই চেপে গেলাম। খামোখা দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়ে কী লাভ?

পরদিন এএফপির সেই সাংবাদিক মেয়েটার সাথে আবার দেখা হয়ে গেল। আমি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমার কথা মনে আছে? দেখা গেল আমার নাম, আব্বুর পড়ে যাওয়ার ঘটনা সবই তার মনে আছে। জানতে পারলাম তার নাম ডাফনে বেনোয়ে (Daphne Benoit)। আমাকে বলল, ইউ আর অন মাই স্টোরি, আই হ্যাভ অলরেডি সাবমিটেড ইট। সে আমাকে তার ইমেইল লিখে দিয়ে বলল, যুদ্ধ শেষ হলে তাকে ইমেইল করলে সে আর্টিকেলটা পাঠিয়ে দিবে।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে মেইল করার পর আর্টিকেলটা পাঠিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু দেখলাম নামগুলোকে সে খিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছে। আমার নাম ত্বোহা, আরবিতে তাহাও বলে অনেকে, লিবিয়ান পদ্ধতিতে আমার ফ্যামিলি নেম হয়ে দাঁড়িয়েছে আব্বুর শাহ‌জাহান নামের প্রথম অংশ শাহ। এখান থেকে সিলেক্ট করে ডাফনে আমার নামটা বানিয়েছে তাহা সাহা! হিরণ ভাইয়ের নামের পরিবর্তে লিখেছে আমিনুর আঙ্কেলের নাম, তাও সেটা লিখেছে মোহাম্মদ নূর‍!

এএফপির বরাত দিয়ে বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় ১৯শে অক্টোবর প্রকাশিত হওয়া ডাফনের সেই প্রবন্ধটার শিরোনাম ছিল, Terrified Bangladeshi Families Flee Sirte’s Hell!

সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় বিদ্রোহীদের চরিত্রের আরেকটা চমৎকার দিক লক্ষ্য করলাম। তারা সাংবাদিকের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েই সরে যাচ্ছে। নজরদারি করছে না। সাংবাদিকের সাথে যা খুশি তা বলার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আমার!

প্রতিটা সাংবাদিককেই আমি বলছিলাম যে আমাদের ফ্যামিলির এক অংশের কোনো খোঁজ এখনও পাইনি, তারা যদি সিরতে যায়, তাহলে যেন একটু মানুষজনকে জিজ্ঞেস করে, গার্বিয়াত এলাকায় কোন বাংলাদেশী ফ্যামিলি আছে কি না? সবাই-ই নোটবুকে টুকে নিলো, কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছিল আসলে কিছুই করবে না, স্টোরি লিখেই ব্যাপারটা ভুলে যাবে।

একমাত্র ডাফনেই যা একটু বাড়তি আগ্রহ দেখাল। সে তার নোট বুকে আমাকে দিয়ে ইংরেজিতে এবং আরবিতে গার্বিয়াত এলাকাটার নামের বানান লিখিয়ে নিলো। যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা কয়েকজন সৈন্যকেও বললাম আম্মুদের কথা, কিন্তু এইসব সৈন্য জীবনে কখনও সিরতে আসেনি। গার্বিয়াত বা রকম এতনিন কোনো এলাকার নামই তারা জানে না। তাদেরকে জিজ্ঞেস করছিলাম যুদ্ধ শেষ হওয়ার আর কত বাকি, তারা বলতে লাগলো মাত্র এক বর্গকিলোমিটার এলাকা বাকি আছে, দুদিনেই হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার, ২০শে অক্টোবর, ২০১১।

ত্রিপোলি দখলের ঠিক দুমাস পূর্ণ হলো। সেই সাথে শুরু হলো লিবিয়া যুদ্ধের সবচেয়ে স্মরণীয় দিনটি।

সকাল আটটার দিকে দীর্ঘ তিন সপ্তাহ পর পঞ্চাশ কিলোমিটার দূর থেকেই আমরা ন্যাটোর বোমার আওয়াজ পেলাম। ডাফনেকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কিছুই জানে না, এই মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। ক্যান্টিনের কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা বলল, না ন্যাটো না, বিদ্রোহীরাই মিসাইল মারছে।

আমি মনে মনে হাসলাম। ন্যাটো তো কখনও এদের বেশি কাছাকাছি মারেনি, তাই এখনও এদের শব্দজ্ঞান হয় নি, আর আমরা পুরো একটা মাস শব্দগুলো শুনতে শুনতে এক্সপার্ট হয়ে গেছি। কোনো সন্দেহ নেই এগুলোর ন্যাটোর বিমান হামলারই আওয়াজ!

সকাল এগারোটার দিকে একজন এসে বলল, আল-জাজিরা বলছে বিদ্রোহীরা সিরতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। কেউ অবশ্য তেমন গুরুত্ব দিলো না, জাজিরা যে বিদ্রোহীদের পক্ষে অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রচার করে, এটা এরাও জানে। সাড়ে এগারোটার দিক থেকে ফ্রন্টলাইন থেকে ফিরে আসা যোদ্ধাদের মুখ থেকে কিছুক্ষণ পরপর একেকটা সংবাদ পাওয়া যেতে লাগলো। কেউ বলছে, গাদ্দাফি সম্ভবত ধরা খেয়েছে, কেউ বলছে, গাদ্দাফি না, তার ছেলে মৌতাসেম। আবার কেউ বলছে জানা যায়নি কে, তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেউ ধরা খেয়েছে।

মৌতাসেম যুদ্ধের প্রথম থেকে সিরতে আছে এবং নিজেই যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, এটা সিরতের সবাই জানত। অনেকেই তাকে দেখেছেও। নবী স্যার, সৌরভ, খান এরাও দাবি করে তারা মৌতাসেমকে দূর থেকে দেখেছে। কিন্তু গাদ্দাফি সিরতে আছে, সিরতের লিবিয়ানরাও জীবনে কখনও কল্পনা করেনি।

দুপুর ঠিক একটার সময় আমি তালহাকে নিয়ে ক্যান্টিন এরিয়া থেকে বেরিয়ে হসপিটাল এরিয়ার সামনে গেলাম। সেখানেই আহত এবং মৃত যোদ্ধাদের আনা হয়। তাদের কাছেই লেটেস্ট সংবাদ পাওয়া যায়। ঠিক যখন আমার ঘড়িতে একটা বাজার শব্দ হলো, তখন হসপিটালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন যোদ্ধা, যে ওয়্যারলেসে কথা বলছিল, সে এবং তার পাশের জন্য লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে বলতে লাগলো, শিদ্দেনা গাদ্দাফি! হামদুলিল্লাহ্, শিদ্দেনা গাদ্দাফি! অর্থাৎ গাদ্দাফিকে আমরা ধরেছি।

উত্তেজনায় সে লাফাচ্ছিল, এর মধ্যেই তার মুখ থেকে আরো জানা গেল, তাকে একজন কমান্ডার ওয়্যারলেসে এই মাত্র জানিয়েছে, গাদ্দাফিকে রকম এতনিন থেকে ধরে ফেলা হয়েছে এবং তাকে এখন খামসিনের এই ক্যাম্পটার ভেতরেই নিয়ে আসা হচ্ছে।

সাথে সাথে ডাক্তার-নার্স, যোদ্ধা, স্বেচ্ছাসেবী সবাই যে উল্লাস শুরু করল, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। কয়েকজন লাফাতে লাগলো, কয়েকজন কোলাকুলি করতে লাগলো, বিশ-ত্রিশজন সাথে সাথে জায়গায় জায়গায় মাটিতে সেজদায় পড়ে গেল। কয়েকজন হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল, আর কাঁদার মধ্যে মধ্যেই বলতে লাগলো, হামদুলিল্লাহ্‌! হামদুলিল্লাহ্‌! হাউয়্যেলনা আত্‌তাগীয়া! অর্থাৎ, অত্যাচারীকে সরিয়েছি!

কে কার সাথে কোলাকুলি করছে, কোনো হিসেব নেই। আমাদেরকে জড়িয়ে ধরেও কয়েকজন হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। এদের কেউ হয়তো ছেলে হারিয়েছে, কেউ ভাই, কেউ বাবা। অনেকে হয়তো গত আটমাস ধরেই ঘর ছেড়ে যুদ্ধের ময়দানে ময়দানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ তাদের স্বপ্ন সফল হলো!

মিনিট দশেকের মধ্যেই ফ্রন্ট থেকে সৈন্যরা ফিরে আসতে শুরু করল। এসেই তারা সব ধরনের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আকাশের দিকে ফাঁকা ফায়ার করতে লাগলো। এরা অনেকেই গাদ্দাফিকে ধরার জায়গাটিতে উপস্থিত ছিল। একজন হেলমেট পরা সৈন্য (লিবিয়াতে এরকম হেলমেট পরা যোদ্ধা প্রায় দেখাই যায় না, বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ, তাদের হেলমেট পরার অভ্যাস নেই) আমাদের সাথে হাত মিলিয়ে কথা বলল। তার কাছ থেকে জানতে পারলাম গাদ্দাফিকে হয়তো মেরে ফেলা হয়েছে।

সে বলল, গাদ্দাফিকে একটা ড্রেনেজ সিস্টেমের পাইপের ভেতর থেকে চুল ধরে টেনে বের করা হয়, সে নিজে দেখেছে। সে হাসতে হাসতে বলল, গাদ্দাফি তার ভাষণে বলেছে আমাদেরকে দ্বার দ্বার (প্রতিটা দরজা), বেত বেত (প্রতিটা ঘর), জাংগা জাংগা (প্রতিটা ইঞ্চি) থেকে তার লোকেরা খুঁজে বের করবে। আর আমরা এখন তাকেই হোফরা হোফরা (গর্তে গর্তে) খুঁজে বের করেছি।

এর দশ মিনিট পরেই যোদ্ধাদের হাতে হাতে গাদ্দাফিকে ধরার ভিডিও দেখা যেতে লাগলো। আমরা যখন হুমড়ি খেয়ে ভিডিওটা দেখার চেষ্টা করছি, তখন হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একটা পিকআপ কম্পাউন্ড এরিয়াতে ঢুকল, তার সাথে সাথেই কম্পাউন্ডের মেইন গেটটা বন্ধ করে দেওয়া হলো। সবাই পিকআপটার পেছনে দৌড়াতে লাগলো, আমরাও সাথে দৌড় দিলাম। পিকআপের পেছনে কেউ একজন শুয়ে আছে, যে একবার কাছে গিয়ে দেখছে সেই আর দাঁড়াচ্ছে না, মুখ বিকৃত করে ঘুরে চলে আসছে।

এক সময় আমিও সামনে যাওয়ার সুযোগ পেলাম। গিয়ে দেখি রক্তে ভেজা আধমরা একটা মানুষ। মরার পথেই, এখনও একটু হাত নাড়াচ্ছে। মুখটা ঢাকা ছিল, এক মুহূর্তের জন্য সরালো। ঠিক চিনতে পারলাম না, তবে সবাইকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এ হচ্ছে গাদ্দাফির বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী, দীর্ঘকালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান, আবুবকর ইউনুস জাবের।

পাশেই হসপিটাল, কিন্তু কেউ চিকিৎসার নামও মুখে আনল না, যেভাবে পিকআপের পেছনে করে এনেছিল, সেভাবেই নিয়ে গেল। এভাবে করেই নাকি ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিসরাতা পর্যন্ত নেওয়া হবে।

মানুষের উল্লাস কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ল। লাশ কয়জনেই সহ্য করতে পারে, হোক না সেটা চিরশত্রুর লাশ। বিশ মিনিটের মধ্যেই আরেকটা গাড়ি এসে ঢুকল। এবার গাড়িটা যেখানে এসে থামল, আমরা ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। তাই মানুষের ভিড় এসে পৌঁছানোর আগেই আমরা দেখতে পেলাম। লম্বা একটা শরীর, সবুজ প্লাস্টিক ক্লথ, যেগুলো সাধারণত কনস্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহৃত হয়, তা দিয়ে ঢাকা। কিছুক্ষণ পরেই শরীর থেকে প্লাস্টিক সরাল। দেখেই চিনতে পারলাম – মৌতাসেম।

সুন্দর চেহারা, দাড়ি ভর্তি মুখ, কিছুটা শুকিয়ে গেছে। ঠিক গলার মধ্যে একটা বুলেটের গর্ত। জিন্সের প্যান্ট আর সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরনে, রক্তে আর বালিতে মাখামাখি জামাকাপড়। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম , পায়েও একটা গুলি খেয়েছে সে। বাকিরা বলল, পিঠেও নাকি একটা গুলির গর্ত আছে।

মৌতাসেমকেও একইভাবে ঘুরিয়ে নিয়ে গেল। বাতাসে যাতে প্লাস্টিক উড়ে না যায়, সেজন্য একটা লম্বা কাঠের টুকরা শরীর এবং মুখের উপরে ফেলে দিল একজন। কুকুর-বিড়ালের লাশও মানুষ আরেকটু যত্নের সাথে সৎকার করে!

গাদ্দাফিকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত এখানে আনা হলো না। শোনা যেতে লাগলো, গাদ্দাফিকে ঘটনাস্থলেই ক্ষিপ্ত যোদ্ধারা কিলিয়ে ঘুষিয়ে মেরে ফেলেছে। তার লাশ সিরত থেকে সরাসরি মিসরাতায় নিয়ে যাওয়া হবে।

বিকেলের দিকে গাদ্দাফিকে ধরার এবং মারার পুরো ভিডিও দেখতে পেলাম। সে এক বর্বরতার দৃশ্য, অমানবিকতার দৃশ্য। গর্ত থেকে চুল ধরে টেনে তুলে মুখে অনবরত ঘুষি, চড় আর লাথি মারছে যোদ্ধারা, রক্তে ভেসে যাচ্ছে গাদ্দাফির মুখের এক পাশ, সে অবস্থায়ই সে বলছে, হারাম’আলেক, হারাম’আলেক!

কয়েকজন অবশ্য বলছিল মেরো না, একে জীবিত রাখতে হবে, কিন্তু কে শোনে কার কথা? যোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম থেকেই গাদ্দাফির বিরুদ্ধে যেরকম ক্ষোভ দেখছিলাম, তাতে গাদ্দাফিকে ধরতে পারলে যে সেখানেই মেরে ফেলা হবে, সে ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু সেই হত্যাকাণ্ড যে এরকম অমানবিক হবে, সেটা ভাবতে পারিনি।

গাদ্দাফিকে হত্যা করার জন্য অসংখ্যবার দেশের ভেতর এবং বাহির থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই প্রায় অলৌকিকভাবে সে বেঁচে গেছে। সর্বশেষ এই বছরও ন্যাটোর বোমায় তার ছেলে সাইফ আল-আরাব এবং তিন নাতি-নাতনি মারা গেছে, কিন্তু একই বাসায় থেকেও সে বেঁচে গেছে। গত একমাস ধরে সে রকম এতনিনেই ছিল। কিন্তু হাজার হাজার মিসাইলেও তার কিছু হয় নি।

এমন কি, আজ সকালে সে যখন চল্লিশটা গাড়ির বহর নিয়ে সিরত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, তখন ন্যাটোর বোমায় সেখানের ১৩টা গাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এখানেও তার কিছু হয়নি। সে দৌড়ে বেরিয়ে পাইপের ভেতরে গিয়ে লুকায়। সম্ভবত তার নিয়তিই ছিল, এতো সহজে সে মরবে না। যাদের উপর সে সারা জীবন অত্যাচার করে এসেছে, তাদের আত্মীয়-স্বজনদের লাথি-ঘুষি খেয়েই সে মরবে।

বিকেলের দিক থেকেই সব সৈন্যরা একে একে সিরত থেকে ফিরে যেতে শুরু করল। কিন্তু এবার সিরতের দিতে যেতে লাগলো সাধারণ পিকআপে করে অস্ত্র হাতে অন্যান্য মানুষ, দেখলেই বোঝা যায় এরা যুদ্ধ করেনি। এরা সম্ভবত যাচ্ছে সিরত লুটপাট করতে। ক্যাম্পের জিনিসপত্র গোছগাছ করা শুরু হয়ে গেল। জানলাম যুদ্ধ শেষ, তাই পরশুদিন সকালেই ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমরা নিজেরাও সিরতে ফিরে যাওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।

১ম পর্ব: ব্যাট্‌ল ফর সিরত, ২য় পর্ব: বিদ্রোহীদের কবলে, ৩য় পর্ব: গন্তব্য অজানা, ৪র্থ পর্ব: নরকে প্রত্যাবর্তন, ৫ম পর্ব: মৃত্যুর প্রতীক্ষায়, ৬ষ্ঠ পর্ব: দ্বিতীয় জীবন, ৭ম পর্ব: বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে, ৮ম পর্ব: প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *