লিবিয়া যুদ্ধের ডায়েরি (৬ষ্ঠ পর্ব): দ্বিতীয় জীবন

শনিবার, ১৫ই অক্টোবর ২০১১

সারাদিন প্রচণ্ড যুদ্ধ চলল। সন্ধ্যার সময় যখন গোলাগুলির আওয়াজ কমে এলো, তখন আমাদের বাসা থেকে ছয়-সাতশো মিটার দূরে অবস্থিত রমজান আঙ্কেলদের এলাকা থেকে হঠাৎ আল্লাহু আকবার শ্লোগান শোনা যেতে লাগলো। আমাদের বুকের মাঝে রক্ত যেন ছলকে উঠল। তারমানে কি বিদ্রোহীরা আরও এগিয়ে আসছে? যুদ্ধ কি শেষ হয়ে আসছে?

মাগরিবের ওয়াক্তের প্রায় বিশ মিনিট পরে যুদ্ধ পুরোপুরি থামল এবং ঘরে আসার পর দীর্ঘ তিন সপ্তাহের মধ্যে এই দিন আমরা প্রথম কোনো আজান শুনতে পেলাম। মাগরিব এবং এশার মধ্যবর্তী সময়টাতেও আল্লাহু আকবার শ্লোগান শোনা যেতে লাগলো। বিদ্রোহীদের দুঃসাহস দেখে আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। কারণ আমাদের বাসার ঠিক পেছনেই তখনও গাদ্দাফি-বাহিনী অবস্থান করছিল।

লিবিয়া যুদ্ধের দুই পক্ষই লিবিয়ান, দুই পক্ষই মুসলমান, তাই দুই পক্ষেরই আল্লাহু আকবার শ্লোগান দেওয়ার অধিকার আছে। বরং গাদ্দাফি-বাহিনীর এই শ্লোগানটা আরও বেশি দেওয়ার কথা ছিল, কারণ তাদের দাবি অনুযায়ী তাদের যুদ্ধটা হচ্ছে ক্রুসেড – ইহুদী-খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গাদ্দাফি-বাহিনীর একমাত্র শ্লোগান হচ্ছে “আল্লাহ্‌, মোয়াম্মার, ওয়া লিবিয়া, ওয়া বাস” অর্থাৎ “আল্লাহ্, মোয়াম্মার (গাদ্দাফি), অ্যান্ড লিবিয়া, অ্যান্ড দ্যাটস অল‌”।

অপরদিকে বিদ্রোহীদের একমাত্র বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দুই আঙ্গুল দিয়ে বিজয় সূচক ভি চিহ্ন প্রদর্শন করা এবং সেকেন্ডে সেকেন্ডে আল্লাহু আকবার বলা। ওরা অবশ্য দুই আঙ্গুল দেখানোর অর্থ অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে। বলে দুইটা আঙ্গুলের অর্থ হচ্ছে নাস্‌র আও শুহাদা, অর্থাৎ বিজয় অথবা শাহাদাত।

রবিবার, ১৬ই অক্টোবর ২০১১

এদিন যুদ্ধ কিছুটা স্তিমিত হয়ে গেল। সকালের দিকে “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ” শোনা যাচ্ছিল, দুপুরের দিক থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে গেল। আমরা আবার হতাশ হয়ে পড়লাম। আর কতদিন দুই পক্ষের এরকম টম অ্যান্ড জেরি খেলা চলতে থাকবে? এদিকে আমাদের জমানো পানিও শেষ হয়ে আসছে। সাত দিন ধরে গোসল না করে আছি।

বিকেলের দিকে সবাই মিলে আমিনুর আংকেলদের বাসায় গেলাম। সবারই একই কথা – এভাবে আর থাকা সম্ভব না। পানি শেষ হয়ে গেলে তো না খেয়েই মরতে হবে। একদিন দল বেঁধে বেরিয়ে পড়া উচিত। হাঁটতে হাঁটতে বিদ্রোহীদের এলাকায় গিয়ে পৌঁছতে পারলে ওরা একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করবে।

কিন্তু কোন সময় রওনা দিব? এখন তো চব্বিশ ঘন্টাই গোলাগুলি হয়! তাছাড়া জায়গায় জায়গায় স্নাইপার লুকিয়ে আছে, মেশিনগান হাতে ওঁত পেতে আছে দুই পক্ষের যোদ্ধারাই। ইচ্ছে করে হয়তো গুলি করবে না, কিন্তু যদি দূর থেকে দেখে না চিনতে পেরে ভালোমতো যাচাই না করেই সন্দেহ করে গুলি করে দেয়? কারোই তো জানার কথা না, এই ভয়াবহ যুদ্ধের মধ্যেও এখানে এখনও কোনো সিভিলিয়ান আটকে পড়ে আছে! কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই আমরা ঘরে ফিরে এলাম।

সোমবার, ১৭ই অক্টোবর, ২০১১

লিবিয়া যুদ্ধের ঠিক আটমাস পূর্ণ হলো। সিরত যুদ্ধের পূর্ণ হলো একমাস দুইদিন। আর সেই সাথে শুরু হলো আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দিনটি।

সকাল নয়টা।

নাস্তা সেরেই আমি প্রতিদিনের মতো একবার দরজাটা খুলে বাইরের দিকে উঁকি দিলাম। দিয়েই দেখতে পেলাম গাদ্দাফি-বাহিনীর এক কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্য আতেফের বাড়ির ভেতর ঢুকছে। আমাকে দেখার আগেই আমি তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে গেলাম।

সকাল সাড়ে নয়টা।

আব্বু বলল, যে হারে প্রতিদিন মিসাইল এসে পড়ছে, তাতে বাইরের কাঠের দেয়াল আর টিনের ছাউনির তৈরি স্টোররুমটার উপরে যদি একটা এসে পড়ে, তাহলে সেটা তো ধ্বংস হবেই, সেখানে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা আমাদের কয়েক হাজার দিনার, স্বর্ণ-গয়নাসহ যাবতীয় সম্পত্তি সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। তাই সেগুলো সেখান থেকে তুলে এনে ঘরের ভেতরে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা উচিত।

আমি খুব একটা রাজি ছিলাম না, কারণ ঘরের ভেতরের ঢালাই ভাঙ্গা, নতুন করে ঢালাই দেওয়া বেশ সময়ের ব্যাপার। প্রচণ্ড শব্দ হবে, তাছাড়া নতুন ঢালাইয়ের রং পৃথকভাবে চেনা যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম। আব্বু গর্ত করতে শুরু করল। আমরা কিছু কাঠ আর একটা হাতুড়ি-বাটাল এনে পাশে রাখলাম, গাদ্দাফি-বাহিনী শব্দ শুনে দেখতে আসলে যেন বলতে পারি, আমরা লাকড়ির চুলায় রান্না করার জন্য কাঠ ফাঁড়ছি।

এদিন সকাল থেকেই যুদ্ধের শব্দে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছিলাম। আমাদের বাসার তিনদিকে তিনটা মেশিনগান ফিট করে গাদ্দাফি-বাহিনী নিয়মিত ফায়ার করত, তারমধ্যে একটা ছিল আমাদের বাসা থেকে ত্রিশ-চল্লিশ মিটার দূরে, ঠিক মুক্তাদের বাসার অপরদিকের বাড়িটার দোতলা।

এদিন সকালে কিছুক্ষণ সেখান থেকে ফায়ার চললেও হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল। অন্য দুটো অবশ্য থেমে থেমে চলতে লাগলো, কিন্তু আমার সন্দেহ হতে লাগলো সেগুলোর অবস্থানও ক্রমাগত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে হঠাৎ হঠাৎ থেমে থেমে টাশ, টাশ করে সিঙ্গেল কতগুলো নতুন ধরনের গুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। ধরে নিলাম এগুলোই হচ্ছে স্নাইপারদের গুলির আওয়াজ।

বেলা এগারোটা।

আব্বুর কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে গেল। আব্বু জায়গাটার উপরে ছোট একটা চৌপায়া টুল রেখে সেটার উপর কতগুলো চালের বস্তা রেখে দিল। এবার কিছুটা নিশ্চিত, তবে কেউ যদি নিচে উঁকি দেয় তাহলে মাটির রং-এর পার্থক্য বুঝতে এক মুহূর্তও দেরি হবে না।

বেলা সাড়ে এগারোটা।

কাজ শেষ হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই আমাদের বাসা থেকে একটু পশ্চিমে যেখানে সুদানি, মৌরিতানিয়ানসহ বিভিন্ন আফ্রিকান ব্যাচেলরদের কয়েকটা মেস ছিল, সেদিক থেকে জোরে জোরে বেশ কিছু মানুষের আল্লাহু আকবার ধ্বনি কানে আসতে লাগলো।

আমরা পুরাপুরি হতভম্ব হয়ে গেলাম। আল-জাজিরাতে শোনা বিদ্রোহীদের আল্লাহু আকবার শ্লোগান দেওয়ার স্টাইল এবং সুরের সাথে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। অর্থাৎ লিবিয়া যুদ্ধের বিদ্রোহীরা রকম এতনিনে আমাদের বাসার মাত্র ৫০ মিটারের মধ্যে ঢুকে গেছে!

কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? সকাল নয়টা বাজেও গাদ্দাফির সৈন্যকে আতেফের বাসায় আমি নিজে দেখেছি! কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই শব্দ আরো এগিয়ে আসতে লাগলো। উত্তেজনায় আমাদের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। আমার রুমের ভেতর মাটিতে শুয়ে আমরা মেইন গেটের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দরজার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নিচের ফাঁক দিয়ে একটা একটা করে নয়টা বুট গুণতে পারলাম। মাত্র নয়জন? নাকি আরো আছে?

কিন্তু কথা হচ্ছে এত দুঃসাহস এরা পেল কোথা থেকে? গাদ্দাফি-বাহিনীকে আরো দুই সপ্তাহ আগেও, যখন এলাকাটা পুরো তাদের দখলে ছিল, তখনও দেখেছি পা টিপে টিপে নিঃশব্দে দেয়াল ঘেঁষে ঘেঁষে হাঁটছে। আর এরা কিনা আজ এসেই এরকম বীরদর্পে রাস্তার মধ্যে দিয়ে চিৎকার করে আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিয়ে হাঁটছে!

দশ মিনিট পরে, আমাদের বাসার পূর্ব দিকের রাস্তা, যেদিকে গাদ্দাফি-বাহিনীর মূল ঘাঁটি, সেদিক থেকেও আল্লাহু আকবার ধ্বনি আসতে লাগলো। আমার সন্দেহ হতে লাগলো এরা কি আসলেই বিদ্রোহী, না কি এটা গাদ্দাফি-বাহিনীর নতুন কোনো চাল?

কিছুক্ষণ পর সুদানি মেসগুলোর দিক থেকে মানুষের চেঁচামেচির আওয়াজ আসতে লাগলো। কান পেতে শোনার চেষ্টা করে যতটুকু বুঝতে পারলাম, একজন আরেকজনকে ধমকে জিজ্ঞেস করছে, অস্ত্র কোথায় রেখেছ? গতকাল কোথায় ছিলে? এখানে কী কর? বুঝতে পারলাম সম্ভবত কোনো মার্সেনারি ধরা পড়েছে, নয়তো কোনো নিরীহ আফ্রিকানকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর প্রায় সাথে সাথেই মুক্তাদের বাসার সামনে থেকেও চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ কানে আসতে লাগলো।

দুপুর বারোটা।

আমাদের বাসার ঠিক সামনে থেকে ছয় সাতজন বিদ্রোহী যোদ্ধার কথাবার্তা আমাদের কানে আসতে লাগলো। শুনলাম একজন বলছে, ছাউয়ের ছাউয়ের! অর্থাৎ, ছবি তোল, ছবি তোল! এর পরপরই শুনলাম আরেকজন বলছে, মাত্ দির্‌শ জাহমা, কুল এতনিন খোশ বুইউত। অর্থাৎ, ভিড় করো না, প্রতি দুইজন করে বাড়িগুলোতে ঢুক।

আমি একবার ভাবলাম আব্বুকে বলি, আমরা আল্লাহু আকবার শ্লোগান দিতে দিতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে বলি আমাদেরকে উদ্ধার কর, তাহলে আশা করা যায় কোনো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক সাহস হলো না। যদি দরজা খুলতে দেখেই বিদ্রোহীদের কোনো স্নাইপার শূট করে দেয়? অথবা যদি তারা আমাদেরকে উদ্ধার না করে এখানেই রেখে চলে যায় এবং আমাদের বের হওয়ার দৃশ্যটা যদি গাদ্দাফি-বাহিনী দেখে থাকে, তাহলে পরদিন আমাদের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা কে দিবে?

দুপুর সাড়ে বারোটা।

বুড়ির বাড়ির দেয়াল টপকে কে যেন ভেতরে ঢুকল। প্রায় সাথে সাথেই বুড়ির বাড়ি থেকে আমাদের বাসায় ঢোকার যে কাঠের গেট, সেটাতে লাথির পর লাথির এসে পড়তে লাগলো। আতঙ্কে কয়েক সেকেন্ড আমরা কেউ নড়তে পারলাম না। তারপর আমি সংবিৎ ফিরে পেয়ে লাফিয়ে উঠলাম। আব্বুকে বললাম, যাই দরজা খুলে দেই। নাহলে দরজা ভেঙ্গে ঢুকতে হলে ওরা আরো ক্ষেপে যাবে।

আব্বু আমাকে যেতে না দিয়ে নিজেই এগিয়ে গেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো, সাদিক, অ্যাহনা বাংলাদেশী। অর্থাৎ, বন্ধু, আমরা বাংলাদেশী। যোদ্ধাদের লাথি দেওয়া এক মুহূর্তের জন্যও থামল না। সেই অবস্থাতেই চিৎকার করে বলতে লাগলো, তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে আস, তাড়াতাড়ি!

আব্বু দরজা খুলে দিলো। পেছনেই আমরা সবাই – আমি, তালহা, শাওন ভাইয়া। রাইফেল উঁচিয়ে ভেতরে ঢুকল দুই যোদ্ধা – দুজনের চেহারাই একই রকম, সম্ভবত দুই ভাই – ইয়া লম্বা-চওড়া, মুখে তালেবান স্টাইলের লম্বা দাড়ি। চেহারা দেখেই বুক কেঁপে ওঠে। দুজনের গায়েই কালো টিশার্টের উপর বড় করে বিদ্রোহীদের লাল-কালো-সবুজ বর্ণের পতাকা আঁকা, নিচে ইংরেজিতে লেখা “ফ্রি লিবিয়া”।

গত আটমাস ধরে শুধু টিভিতেই দেখেছি, এই প্রথম সরাসরি এই পতাকা দেখলাম। প্রচণ্ড ভয় এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়েও আমার মনের গভীরে কেমন যেন চাপা আনন্দ হতে লাগলো। নিজের দেশ না, কিছু না, শুধু যে দেশটায় ছোট থেকে বেড়ে উঠেছি সেই দেশের, সেই জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক, স্বাধীনতার প্রতীক। সেটাই বা কম কিসের!

ঘরে ঢুকেই দুজনে চিৎকার করে বলতে লাগলো, বের হও, এক্ষুণি বের হও! আমরা আমাদের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করলাম, তারা কোনো কথাই শুনল না। জিজ্ঞেস করতে লাগলো আর কে আছে সাথে, অস্ত্র কোথায়? একজন ঘরে ঢুকে চট করে ঘরটা চেক করে নিলো। আরেকজন আব্বুর আর আমার হাত শুঁকে দেখল বারুদের গন্ধ পাওয়া যায় কি না। যখন কিছুটা বোঝাতে পারলাম আমরা একেবারেই সাধারণ মানুষ, তখন একজন বলতে লাগলো, তোমরা কি পাগল? এই অবস্থার মধ্যে কেউ ঘরে থাকে? তাড়াতাড়ি বের হও!

আমরা খালি হাতে শুধু স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে যোদ্ধা দুইজনের সাথে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। বিদ্রোহীরা মনে হয় এলাকাটা চেনে না, কারণ তারা আমাদেরকে উল্টা দিক দিয়ে ঘুরিয়ে বের করল। ওমর কাসেমদের বাসার সামনে এসে দেখি বিশ-পঁচিশ জনের একটা গ্রুপ দাঁড়িয়ে-বসে অপেক্ষা করছে। প্রায় সবাই-ই ইয়ং বয়সী। সবার চেহারাই সাধারণ, আল-কায়েদার মত না। কয়েক জন সিগারেট খাচ্ছে, জুস খাচ্ছে, একজন আবার ভিডিও-ও করছে। আমার সাহস অনেকটাই ফিরে এলো। ভয়ের পরিবর্তে বরং আনন্দ হতে লাগলো। অবশেষে যুদ্ধ বোধহয় শেষ হতে যাচ্ছে!

ওমর কাসেমদের বাসার সামনে এসে দেখি বিশ-পঁচিশ জনের একটা গ্রুপ দাঁড়িয়ে-বসে অপেক্ষা করছে। প্রায় সবাই-ই ইয়ং বয়সী। সবার চেহারাই সাধারণ, আল-কায়েদার মত না। কয়েক জন সিগারেট খাচ্ছে, জুস খাচ্ছে, একজন আবার ভিডিও-ও করছে। আমার সাহস অনেকটাই ফিরে এলো। ভয়ের পরিবর্তে বরং আনন্দ হতে লাগলো। অবশেষে যুদ্ধ বোধহয় শেষ হতে যাচ্ছে!

আমাদেরকে দেখেই সবাই আল্লাহু-আকবার, আল্লাহু-আকবার শ্লোগান দিতে শুরু করল। আমরাও দুই আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের সাথে সুর মেলালাম। কয়েকজনে থাম্বস আপ দেখিয়ে বলতে লাগলো, বাঙ্গালা! মিয়া মিয়া! অর্থাৎ, বাঙ্গালিরা, তোমরা ভালো। দুয়েকজন আমাদের দিকে ছুটে এলো। এলাকার কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। একজন জিজ্ঞেস করল, গাদ্দাফি-বাহিনী কোথায় কোথায় আছে? আমরা একবারে নিখুঁত বর্ণনা দিয়ে দিতে পারতাম, কিন্তু গ্রুপ কমান্ডার, দাড়ি এবং চশমাওয়ালা ওয়্যারলেস হাতে থাকা লোকটা বলল, থাক ছেড়ে দেও। বেচারারা বাংলাদেশী, নিরীহ মানুষ, কিছু জানে না।

আমরা ওমরদের বাসার সামনে থাকতেই আট-দশটা বুলেট আমাদের মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে আমাদের থেকে পাঁচ-ছয় মিটার দূরে সালেম মেরোয়াহ্‌’র বাসার দরজায় বাড়ি খেল। আমরা ঝট করে মাথা নিচু করে ফেললাম।

বিদ্রোহীদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম আমাদেরকে এই মুহূর্তে ঘরে থাকতে দিবে না, পাশেই কোথাও নিয়ে যাবে। আব্বু সাহস করে বলে ফেলল, আমাদের সাথে কোনো কাগজপত্র নেই, অন্তত আইডি কার্ডগুলো বাসা থেকে নিয়ে আসি? গাদ্দাফি-বাহিনীর অসহযোগিতা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম, ভাবিনি রাজি হবে, কিন্তু ঠিকই রাজি হয়ে গেল। ছয় সাত জনের একটা দল এলো আমাদের সাথে। আমরা আইডি কার্ডগুলো নিয়ে নিলাম।

আব্বু আমাকে বলল, আমার ট্রাংকে থাকা দেশের ব্যাংকের কাগজপত্রগুলো বের করে সাথে নিয়ে নিতে। আমি মাত্র বের করে পাশে খাটের উপর রাখলাম, এমন সময় একজন যোদ্ধা আমাকে ডেকে নিয়ে গেল, তারা কামালের মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা আরপিজিটা খুঁজে পেয়ে গেছে।

আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, এটা কার অস্ত্র, আর কোথায় কোথায় লুকানো আছে? আব্বু করলা গাছের উপরে লুকিয়ে রাখা রাইফেলটাও দেখিয়ে দিলো। এরমধ্যে আরেকজন গিয়ে বুড়ির বাড়ির মাটির নিচ থেকে আরেকটা রাইফেল তুলে নিয়ে এলো। এদের চোখে বোধহয় জাদু আছে! আমরাও জানতাম না যে এখানে কিছু লুকানো আছে!

অস্ত্র খোঁজাখুঁজিতে সাহায্য করতে গিয়ে আমরা নিজেদের কাজ কিছুই করতে পারলাম না। কয়েকজন চেঁচামেচি শুরু করল, তাড়াতাড়ি কর! একজনে বলতে লাগলো, টাকা-পয়সা আর মোবাইল সাথে নিয়ে নাও। কিন্তু এত চেঁচামেচি আর টেনশনে আমাদের কারো মাথাই ঠিকমতো কাজ করছিল না।

আমার ট্রাংকের ভেতর ৭০০ দিনার (৩৫০০০ টাকা) ছিল, আমি ট্রাংক খুলে যখন টাকা বের করছি তখন দেখি আমার চারপাশে চারজন অস্ত্রধারী যোদ্ধা দাঁড়িয়ে আছে। বের করলে এখনই যদি থাবা দিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে? আমি তাই অন্যান্য কিছু কাগজপত্র সহ টাকাগুলো বইয়ের তাকের খাতা-বইয়ের ভেতরে ঢুকিয়ে দিলাম।

ততক্ষণে আবারও চিৎকার শুরু হয়ে গেল, তাড়াতাড়ি! আমরা বেরিয়ে এলাম। কেউই কিছু নিতে পারেনি। একমাত্র তালহা দুটো সাইডব্যাগ নিয়েছে, কী আছে সেগুলোর ভেতর, কে জানে? তালহা একটু ছোট বলে কেউ তাকে বিরক্ত করে নি, তার মাথাই সবচেয়ে ঠাণ্ডা ছিল। দেখছিলাম উল্টো সে-ই বিদ্রোহীদেরকে জিজ্ঞেস করছে, তোমাদের আসতে এত দেরি হলো কেন? আমরা কতদিন ধরে অপেক্ষা করছি! অন্যান্য ফ্রন্টের কী অবস্থা? বানিওয়ালিদ দখল করতে পেরেছ? সাইফ আল- ইসলামকে ধরতে পেরেছ? বিদ্রোহীরা দেখি তার সবগুলো প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাবও দিচ্ছে!

বিদ্রোহীরা আমাদেরকে নিয়ে আবার বেরিয়ে এলো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ করলাম, কিন্তু মেইন গেটটা বন্ধ করতে তারা নিষেধ করল। দুইজন যোদ্ধা আমাদের সাথে সাথে চলল আমাদেরকে নিরাপদে কোথাও পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তারা বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো আর কোন ফ্যামিলি এলাকায় আটকে আছে কি না? আমরা মুক্তাদের বাসাটা দেখালাম, কিন্তু বাসাটা খালি। কেউই কোনো উত্তর দিতে পারল না। একজন বলল, চিন্তা করো না, হয়তো অন্য গ্রুপ তাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।

বুঝলাম এরা অনেকগুলো গ্রুপ একইসাথে প্রতিটা অলিতে গলিতে ঢুকেছে। আরেকটু সামনে গিয়েই এর প্রমাণ পেলাম। ইশতেইলাদের বাড়ির সামনে আরো বিশ-ত্রিশজন, আরেকটু সামনে আরো দশ-পনেরো জন – এরকম প্রতিটা গলিতেই বিদ্রোহীরা ভর্তি। শুধু এই এলাকার ভেতরেই অন্তত দুই-তিনশ বিদ্রোহী।

আজ গোলাগুলি শুধু একদিক থেকেই আসছিল – গাদ্দাফি-বাহিনীর দিক থেকে। তারা অনেক দূর থেকে গুলি করছিল, মাঝে মাঝে রকেটও মারছিল। সেগুলো এসে আশেপাশেই পড়ছিল। ঘর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই রকম এতনিনের ভেতর থেকে কয়েকটা রকেট এসে কাছেই কোথাও পড়ল। আমরা মাথা নিচু করে ছুটতে লাগলাম।

প্রতিটা বিপজ্জনক গলি বা রাস্তা পার হওয়ার আগে যোদ্ধা দুজন আমাদেরকে থামিয়ে দিচ্ছিল, তারপর ওয়ান, টু, থ্রি বলে আমাদেরকে নিয়ে দৌড়ে পার হচ্ছিল। রাস্তায় যতগুলো গ্রুপের সাথে দেখা হচ্ছিল, সবগুলো গ্রুপের ইয়ং বয়সী ছেলেরা, যারা সম্ভবত যুদ্ধের আগে ভার্সিটির ছাত্র ছিল, আমাদেরকে লক্ষ্য করে ইংরেজিতে বলছিল, ইউ আর নাউ ইন সেইফ জোন! অথবা, কাম অন, ইউ আর ফ্রি নাউ! অথবা, ডোন্ট অরি, নো বডি ইজ গোয়িং টু হার্ট ইউ!

কিন্তু এরকম মুহূর্তে শান্ত থাকা কোনো স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সম্ভব না। মাথার উপর দিয়ে শাঁই শাঁই করে গুলি চলছে, আর আমরা মাথা নিচু করে দৌড়াচ্ছি। আব্বু এমনিতে খুবই শক্ত ধরনের মানুষ, কিন্তু সম্ভবত বয়স হয়েছে বলেই বিদ্রোহীরা ঘরে ঢুকার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম আব্বু পুরোপুরি ঘাবড়ে গেছে। আশপাশ থেকে কেউ একটা কথা বলছে, আব্বু সাথে সাথে চমকে উঠে তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। তারাও অবশ্য বুঝতে পারছিল। তাই বারবার বলছিল, ভয় পাচ্ছ কেন, আমরা তোমাদেরকে বাঁচানোর জন্যই এসেছি। তোমরাও মুসলিম, আমরাও মুসলিম।

একটা লম্বা গলির সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা। একপাশের দেয়ালটা খুবই নিচু, মাত্র কোমর পর্যন্ত। আর পেছন দিকে অনেক দূর পর্যন্ত ফাঁকা। রাস্তাটাও এবড়ো-থেবড়ো। মাথা অস্বাভাবিকভাবে নুইয়ে দ্রুত দৌড়াতে হচ্ছিল। আব্বুর মেরুদণ্ডে একটা অপারেশন করতে হয়েছিল বছরখানেক আগে, এমনিতেই দৌড়াতে পারে না, এখানে দৌড়াতে গিয়ে মারাত্মক একটা আছাড়া খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।

পড়ে গিয়ে আব্বুর নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়ে গেল। একেবারে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম, যে ভয়াবহ মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, তাতে ব্রেইনে না এফেক্ট করে বসে! যোদ্ধা দুজনও ফিরে এলো, জিজ্ঞেস করল গুলি খেয়েছে কি না? আমি বললাম, না, শুধু পড়ে গেছে আর ভয় পেয়ে গেছে। আব্বুকে উঠিয়ে আমি ধরে ধরে নিতে লাগলাম আর সান্ত্বনা দিতে লাগলাম।

আমাদেরকে উদ্ধার করছে মিসরাতার বিদ্রোহীরা
আমাদেরকে উদ্ধার করছে মিসরাতার বিদ্রোহীরা; এএফপির ফটোগ্রাফারের তোলা ছবি গেটি ইমেজসে। লাল টিশার্টে তালহা, নীল শার্টে আমি, পাশে আব্বু, তার পাশে শাওন ভাইয়া।

অবশেষে এসে পৌঁছলাম সবচেয়ে ভয়াবহ অংশটাতে। বিন হাম্মাল মসজিদের সামনে যে উঁচু ইলেক্ট্রিক্যাল অফিস, তার আড়ালে থোওয়ারদের (বিপ্লবীদের) মূল ঘাঁটি, আর অলি-গলির ভেতর দিয়ে আমরা এসে উপস্থিত হয়েছি তার সামনের মেইন রোডের অপর পাশে।

এই মেইন রোড ধরে পূর্বদিকে কয়েকশো মিটার সামনেই কয়েকটা ট্রাক আড়াআড়ি ফেলে দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা, সেই ব্যারিকেডের ওপাশ থেকে গাদ্দাফি-বাহিনী বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে চলছে। আমরা দেখতে পারছি গাদ্দাফি-বাহিনীর বুলেটগুলো ইলিক্ট্রিক্যাল অফিসের বিল্ডিংয়ে এসে বিল্ডিংটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে। মাথার উপর দিয়ে শিস কেটে উড়ে চলে যাচ্ছে, কারেন্টের পিলার, রাস্তার লাইটপোস্টে এসে বাড়ি খাচ্ছে, আশেপাশে মাটিতেও এসে পড়ছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়েই আমাদের রাস্তাটা পার হতে হবে।

আমরা রাস্তার এপাশে এসে দাঁড়াতেই উল্টোপাশের বিল্ডিংয়ের আড়াল থেকে কানে হেভি এয়ারফোন লাগানো একটা ছেলে বেরিয়ে এসে মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে বসে ট্রাকগুলো লক্ষ করে একটা আরপিজি মেরেই চট করে আড়ালে চলে গেল। সাথে সাথে প্রচণ্ড শব্দ আর ধোঁয়ায় চারদিক ভরে গেল।

তার পরপরই আরেকজন একটা লাইট মেশিন গান নিয়ে আড়াল থেকে বের হলো। তার পেছনে দুজন দাঁড়িয়ে রইল মেশিনগানের গুলির বেল্ট ধরে। বেরিয়েই সে মেশিনগান দিয়ে কভারিং ফায়ার করতে শুরু করল আর সাথে সাথে ওপাশ থেকে বাকিরা আমাদেরকে ইশারা করল রাস্তা পার হওয়ার জন্য। তালহা একটু ছোট, তাই একজন জন যোদ্ধা তালহার হাত ধরে দৌড়াতে শুরু করল। গুলি আসছিল বাম দিক থেকে, এই যোদ্ধা নিজে দাঁড়ালো বাম দিকে আর তালহাকে রাখল ডান পাশে। গুলি খেলে নিজে খাবে, তবুও আমাদেরকে রক্ষা করবে।

মেশিনগানের কান ফাটানো ফায়ারিং-এর কভারে আমরা মাথা নিচু করে প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। সে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা! রাস্তা যে এতো চওড়া হয়, সেটা জীবনে কখনও বুঝতে পারিনি। পায়ের নিচে লক্ষ লক্ষ বুলেটের খোসা, সেই খোসায় পা পিছলে পিছলে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা যেন অনন্তকাল ধরে দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি, রাস্তা যেন আর শেষ হচ্ছে না!

আশেপাশে কোথায় কী হচ্ছে কিছু জানি না, অন্যরা দৌড়াতে পারছে কি না সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, শুধু একটা ঘোরের মধ্যে আব্বুকে ধরে আমি দৌড়াতে লাগলাম। সবাই দৌড়ে পার হয়ে গেল কিন্তু আব্বু দৌড়াতে পারছিল না। আব্বুকে ধরে ধরে পার করতে গিয়ে আমিও দেরি করে ফেললাম। রাস্তা তখনও পাঁচ-ছয় মিটার বাকি, আর এমন সময় মেশিনগানের গুলির বেল্ট গেল শেষ হয়ে! আমার মনে হতে লাগলো এই বুঝি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত! বাকি পথটুকু বুঝি আর পার হতে পারব না! কিন্তু না, মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু পড়তে পড়তে অবশেষে নিরাপদেই জায়গাটা পার হয়ে এলাম।

রাস্তা পার হয়ে এসে থামতেই দেখি শত শত যুদ্ধের গাড়ি, হাজার হাজার বিদ্রোহী যোদ্ধা, অ্যাম্বুলেন্স, খাবারের গাড়ি, কোনো জিনিসের অভাব রাস্তার এই পাশের দুনিয়াতে নেই। চশমা পরা একটা ডাক্তার আমাদের দিকে ছুটে এলো। জিজ্ঞেস করতে লাগলো আব্বুর কী হয়েছে? কোনো চিকিৎসা লাগবে কি না? বললাম কিছু হয়নি, শুধু নার্ভাস হয়ে গেছে। সে জবাব দিল, ভয়ের কিছু নেই। ইউ আর কমপ্লিটলি সেইফ নাউ। উই উইল লুক আফটার ইউ।

কয়েকজন আমাদেরকে ধরে খাবারের গাড়ির দিকে নিয়ে গেল। সেখানে টুপি এবং চশমা পরা এক বৃদ্ধ আমাদের হাতে তুলে দিতে লাগলো প্যাকিং করা খাবার, ঠাণ্ডা পানির বোতল, জুসের প্যাকেট, দুধের প্যাকেট, যার কোনোটাই গত একমাস ধরে আমরা চোখে দেখিনি, জীবনে আর কোনোদিন দেখব সেই আশাও করি নি।

মনে হতে লাগলো রাস্তার ওপাশটা যেন জাহান্নাম, মধ্যের রাস্তাটা যেন পুল সিরাত, সেটা পাড়ি দিয়ে আমরা যেন জান্নাতে এসে পৌঁছেছি। খাবারের প্যাকেট হাতে নিয়ে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম এরপর আমাদেরকে কোথায় নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্তের জন্য।

১ম পর্ব: ব্যাট্‌ল ফর সিরত, ২য় পর্ব: বিদ্রোহীদের কবলে, ৩য় পর্ব: গন্তব্য অজানা, ৪র্থ পর্ব: নরকে প্রত্যাবর্তন, ৫ম পর্ব: মৃত্যুর প্রতীক্ষায়, ৬ষ্ঠ পর্ব: দ্বিতীয় জীবন, ৭ম পর্ব: বিদ্রোহীদের ঘাঁটিতে, ৮ম পর্ব: প্রতীক্ষিত পুনর্মিলন

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *