ঘাসান কানাফানি: এক বলিষ্ঠ কণ্ঠের বিপ্লবী

৭২ বছর আগের এই দিনে (১৫ই মে) ইসরায়েল তার অস্তিত্বের ঘোষণা দেয়, আর সেদিন জায়নিস্টরা দল বেঁধে আক্রমণ করে ফিলিস্তিনের আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রামগুলোতে। ৭ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা হয়। তাদেরই একজন ছিলেন ১২ বছর বয়সী বালক গাসসান কানাফানি।

পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি হারিয়ে তার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল প্রথমে লেবাননে, পরে সিরিয়ায়। দামেস্ক ইউনিভার্সিটি পড়াশোনা করেছেন সাহিত্য নিয়ে। নিজেও বেড়ে উঠেছেন সাহিত্যিক হিসেবেই। কিন্তু ভুলে যাননি তার আত্মপরিচয়ের কথা।

ভার্সিটিতে থাকতেই গাসসান কানাফানি যোগ দেন রাজনীতিতে। জর্জ হাবাশের হাত ধরে। সেই জর্জ হাবাশ, যিনি ৬৭ সালের যুদ্ধের পর গড়ে তোলেন মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট বিপ্লবী সংগঠন PFLP, যদিও সিভিলিয়ান ক্যাজুয়ালিটির তোয়াক্কা না করায় তাদের গায়ে সন্ত্রাসীর তকমাও আছে।

এই সেই PFLP, পপুলার ফ্রন্ট ফর লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন, যারা ত্রাস সৃষ্টি করেছিল ইসরায়েলিদের বুকে। সেই PFLP, যাদের স্পেশালাইজেশন ছিল বিমান ছিনতাই, যাদের সদস্য ছিল কিংবদন্তী বিমান হাইজ্যাকার লায়লা খালেদরা।

গাসসান কানাফানি অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেননি, তিনি যুদ্ধ করেছেন কলম হাতে। তিনি ছিলেন PFLP-এর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আল-হাদাফ তথা দ্য গোল-এর সম্পাদক। পূর্ববর্তী উচ্চ বেতনের নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি যোগ দিয়েছিলেন এই ম্যাগাজিনে।

তার কলমের জোরেই এই ম্যাগাজিন এবং PFLP-এর সংগ্রামের গল্প আরব বিশ্বের গণ্ডি ছাড়িয়ে পশ্চিমা বিশ্বেও জনপ্রিয়তা পায়। জনপ্রিয়তা পান তিনিও। পশ্চিমা সাংবাদিকদের সাথে তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরের সাক্ষাৎকারের ক্লিপগুলো আজও সমানভাবে জনপ্রিয়।

ইংলিশ সাবটাইটেলসহ উপরের ভিডিওটি দেখতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে

কানাফানির এ জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারেনি ইসরায়েল। ১৯৭২ সালে বৈরুতে গাড়ি বোমা হামলায় তাকে হত্যা করে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।

কিন্তু তার লিগ্যাসি মুছে ফেলা যায়নি। আজও আরব বিশ্বের হাজার হাজার ফেসবুক আইডির প্রোফাইল পিকচারে কানাফানির ছবি ভাসে। টাইমলাইন ফটোতে তার পত্রিকা অফিসের ছবি দেখা যায়। তার বিভিন্ন লেখা মানুষ আজও কোট করে।

তার কয়েকটি স্মরণীয় উক্তি:

১। The Palestinian cause is not a cause for Palestinians only, but a cause for every revolutionary, wherever he is, as a cause of the exploited and oppressed masses in our era.

২। Imperialism has layed its body over the world, the head in Eastern Asia, the heart in the Middle East, its arteries reaching Africa and Latin America. Wherever you strike it, you damage it, and you serve the World Revolution.

৩। Do not believe that man grows. No: he is born suddenly-a word, in a moment, penetrates his heart to a new throb. One scene can hurl him down from the ceiling of childhood on to the ruggedness of the road.

ফিলিস্তিন বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা একসাথে পাবেন এই লিঙ্কে

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *