বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা

২০১৬ সালের ২২শে ডিসেম্বর বেশ মজার একটা ঘটনা ঘটে। সেদিন লিবিয়ার সাবহা থেকে ত্রিপোলি যাওয়ার পথে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটা বিমান ছিনতাই হয়ে যায়

প্লেনটাতে মোট ১১১ জন যাত্রী এবং ৭ জন ক্রু জন ছিল, যাদের মধ্য ৮২ জন পুরুষ, ২৮ জন নারী এবং ১ জন শিশু। জিম্মিদের মধ্যে লিবিয়ার পার্লামেন্ট এইচওআরের (হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ) একজন সদস্যও ছিলেন।

সাবহা থেকে যাত্রা শুরু করার কিছুক্ষণ পরেই দুইজন ছিনতাইকারী প্লেনটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তাদের হাতে ছিল বন্দুক এবং হ্যান্ড গ্রেনেড। তারা প্লেনটাকে মাল্টায় নিয়ে যেতে পাইলটকে বাধ্য করে। মাল্টায় অবতরণের পরপরই তারা প্রথমে নারী এবং শিশুদেরকে এবং পরে সব যাত্রীকে মুক্তি দিয়ে দেয়। ভেতরে থাকে শুধু পাইলট আর ক্রুরা।

আরো পড়ুন: লিবিয়ার আকাশে মার্কিন-রাশিয়ান ড্রোন উত্তেজনা!

ছিনতাইকারী দুইজন ছিল ২৪-২৫ বছর বয়সী যুবক। তারা ছিল দক্ষিণের কৃষ্ণাঙ্গ লিবিয়ান। শুরু থেকেই তাদের অপেশাদারিত্বের ব্যাপারটা চোখে পড়ছিল। জিম্মিদের অনেকেই লাইভ টুইট করছিল। এমনকি পাইলটও মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিল।

যাত্রীদেরকে মুক্তি দেওয়ার পর ছিনতাইকারীদের একজন সরাসরি Libyas Channel এর সাথে সাক্ষাৎকার দেয়। সে নিজেকে গাদ্দাফিপন্থী আল-ফাতাহ আল-জাদিদ নামের একটা পলিটিকাল পার্টির প্রধান দাবি করে বলে, তারা বিমান ছিনতাই করেছে তাদের পার্টির প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এবং প্রচারের জন্য! উল্লেখ্য ফাতাহ অর্থ বিজয়। গাদ্দাফি তার অভ্যুত্থানকে আল-ফাতাহ রেভোল্যুশন নামে অভিহিত করতেন।

আরো পড়ুন: ১৭ই ফেব্রুয়ারির বিপ্লব: গাদ্দাফীর পতনের জানা-অজানা ‌অধ‍্যায়

মালটায় অবতরণের পর থেকেই মাল্টিজ সেনাবাহিনী প্লেনটাকে ঘিরে রেখেছিল। ছিনতাইকারীরা মিডিয়ার মাধ্যমে ইউরোপের কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে। কয়েক ঘণ্টা জিম্মি নাটকের পর অবশেষে তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়। আত্মসমর্পণের আগে তাদের একজন দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে গাদ্দাফির সবুজ পতাকা উড়িয়ে সবাইকে দেখায়।

শেষপর্যন্ত ছিনতাইকারীরা যখন আত্মসমর্পণ করে, তখন দেখা যায়, যে পিস্তল আর গ্রেনেড দেখিয়ে তারা সবাইকে জিম্মি করেছিল, সেগুলো ছিল খেলনা পিস্তল আর গ্রেনেড!

সবচেয়ে মজার ব্যাপারটা জানা যায় পরের দিন। প্লেনটা হাইজ্যাক করে যখন মাল্টা এয়ারপোর্টে নিয়ে নামানো হয়েছিল, তখন সেই এয়ারপোর্টে অন্য একটা প্লেন হাইজ্যাকের ঘটনা নিয়ে একটা সিনেমার শুটিং চলছিল!

সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি সেভেন ডেজ ইন এনতেবে (7 Days in Entebbe) নামের ঐ সিনেমার ঘটনা ১৯৭৬ সালের, যখন ইসরায়েল থেকে ফ্রান্সে যাওয়ার পথে ৮ ফিলিস্তিনি গেরিলা একটা ইসরায়েলি বিমান ছিনতাই করে উগান্ডার এনতেবে বিমানবন্দরে অবতরণ করায়। পরে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাইয়ের নেতৃত্বে ইসরায়েলের একটা বিশেষ কমান্ডোবাহিনী সারপ্রাইজ অ্যাটাকের মাধ্যমে আট অপহরণকারী, ২০ উগান্ডান সেনা এবং ৩ জিম্মিকে হত্যা করার পর বাকিদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অপারেশনে নেতানিয়াহুর ভাইও নিহত হয়।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, সত্যিকারের হাইজ্যাকের কারণে পরিচালক হোসে পাদিলহো সিনেমার হাইজ্যাকের শুটিং বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল!

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *