Views: 328
এলি কোহেনের কথা মনে আছে? সেই ইসরায়েলি “সুপার স্পাই”, যাকে নিয়ে নেটফ্লিক্স The Spy নামে সিরিয়াল তৈরি করেছে? সেই এলি কোহেনকে নিয়েই গতকাল আল-জাজিরা একটা ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে। এবং এই ডকুমেন্টারির ভাষ্য নেটফ্লিক্সের “বেজড অন এ ট্রু স্টোরি” সিরিয়ালটার ভাষ্যের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সিরিয়ালে এলি কোহেনকে মহান বীর হিসেবে দেখানো হয়। সে নাকি প্রায় সিরিয়ার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারও হয়ে যাচ্ছিল। তার সাথে নাকি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আমিন আল-হাফেজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ৬৭ সালের যুদ্ধে জয়ের পেছনে নাকি তার বিশাল অবদান ছিল। এমনকি বাথ পার্টি যে ক্যু করেছিল, সেটাও নাকি তার অবদান ছিল। কিন্তু আল-জাজিরা বলছে, এ সবই অতিরঞ্জিত।
প্রথমত, ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে এলি কোহেন আর্জেন্টিনায় ছিল ছয় মাস। ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত। আর সে সময় মিলিটারি অফিসার আমিন আল-হাফেজ ছিল মিসরে। ১৯৬১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সিরিয়া যখন জামাল আব্দুল নাসেরের সাথের কোয়ালিশন ভেঙ্গে দেয়, তখন নাসের হাফেজ আল-আসাদ, আমিন আল-হাফেজ সহ টপ সিরিয়ান অফিসারদেরকে ৪০ দিন পর্যন্ত মিসরে আটকে রাখে।
নভেম্বরে মুক্তি পাওয়ার পর আমিন আল-হাফেজ প্রথমে সিরিয়ায় ফেরত যায়, এরপর তাকে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় ট্রান্সফার করা হয়। ততদিনে এলি কোহেন আর্জেন্টিনা থেকে লেবানন হয়ে সিরিয়াতে প্রবেশ করেছে। কাজেই সিরিয়ালে যে দেখানো হয় আর্জেন্টিনায় আমিন আল-হাফেজের সাথে কোহেনের বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল, এবং এরপর আমিন আল-হাফেজ প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেই বন্ধুত্বের খাতিরে কোহেনকে ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিল, ওগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সিরিয়ালে আরও দেখানো হয়েছিল, টপ মন্ত্রী এবং মিলিটারি অফিসারদের সাথে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে এলি কোহেন সিরিয়াতে ক্যু ঘটিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এটারও কোনো ভিত্তি নাই। বাস্তবে এলি কোহেনের উপর নির্দেশ ছিল সে যেন ভুলেও বেশি উপরের দিকের কারো সাথে সম্পর্ক স্থাপন না করে। কারণে তাহলেই সে কারো না কারো নজরে পড়ে যাবে, তার গোয়েন্দা পরিচয় ধরা পড়ে যাবে।
গোলান মালভূমিতে গিয়ে গাছ রোপণ করার পরামর্শ দিয়ে এলি কোহেন ইসরায়েলকে ৬৭ সালের যুদ্ধে জিতিয়ে দিয়েছিল বলে যে দাবি করা হয়, সেটাও অতিরঞ্জিত। কোহেনের পাঠানো কিছু গোয়েন্দা তথ্য অবশ্যই ইসরায়েলের কাজে লেগেছিল, কিন্তু গোলানে তার একটা ছবি দেখিয়েই যেরকম দাবি করা হয় তার সাথে সিরিয়ান টপ মিলিটারি অফিসারদের বন্ধুত্ব ছিল বলেই সে সেখানে যেতে পেরেছিল, সেটা মোটেও সত্য না। সে সময় যে কেউ গোলান মালভূমির ঐ জায়গা পর্যন্ত যেতে পারত।
মূল কথা হচ্ছে, ইসরায়েল এলি কোহেনকে যেরকম হিরো দাবি করে, বাস্তবে সে সম্ভবত সেরকম কিছু ছিল না। বরং সে সিরিয়ান মিলিটারি অফিসারদের হাতে ধরে পড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে ফাঁসিতে ঝুলেছিল, ইসরায়েলের জন্য যেটা ছিল চরম অপমানজনক। কে জানে, হতে পারে সেই অপমান ঢাকার জন্যই ইসরায়েল তাকে “সুপার স্পাই” হিসেবে দাবি করে।
আমেরিকান-ইসরায়েলিদের নিজেদের স্পাইদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত দাবি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার কিছু নাই। আর সেই দাবি যদি মুভি বা সিরিয়ালের হয়, তা যতই “সত্য ঘটনা অবলম্বনে” দাবি করুক, সেক্ষেত্রে আরও সন্দেহ করতে হবে।
উল্লেখ্য, আল-জাজিরা এই ডকুমেন্টারির মাধ্যমে “প্রথমবারের মতো” এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেছে। এর আগে সব জায়গায় কেবল তার গুণগানই ছিল। এলি কোহেনকে নিয়ে আমার এর আগের একটা লেখায়ও তাই সেগুলোই এসেছিল। কিন্তু তারপরেও নেটফ্লিক্সের সিরিয়ালে যে অতিরিক্ত হিরো হিসেবে দেখানো হয়েছে, সেটার তীব্র সমালোচনা করেছিলাম এই লেখায়।
আল-জাজিরার ডকুমেন্টারিটা দেখতে পারেন এখান থেকে: https://www.youtube.com/watch?v=eslMF69ISK8