-
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির শাসনামল
১৯৬৯ সালের এই দিনে (১লা সেপ্টেম্বর) মাত্র ২৭ বছর বয়সী এক যুবক লিবিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলেন। সেই যুবক, ক্যাপ্টেন মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির শাসনামল স্থায়ী হয় পরবর্তী ৪২ বছর পর্যন্ত।
টেকনিক্যালি গাদ্দাফি নিজে সেদিন ফিল্ডে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি আগে থেকে সবকিছুর আয়োজন করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু অভ্যুত্থানের দিন তিনি বাকি সবাইকে দায়িত্ব দিয়ে বিশ্রাম নিতে চলে গিয়েছিলেন। সকালবেলা তিনি যখন ঘুম থেকে ওঠেন, ততক্ষণে অভ্যুত্থান ঘটে গেছে।
-
প্রত্যাবর্তন – হিশাম মাতার
২০১১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্তও আমি (হিশাম মাতার) ভাবতে পারিনি, জীবনে কখনও লিবিয়ায় ফিরে যেতে পারব।
সে সময় আমি সবেমাত্র লন্ডন ছেড়ে নিউইয়র্কে গিয়ে উঠেছিলাম। আমার বাবা-মা প্রথম এই শহরটিতে এসেছিলেন ১৯৭০ সালের বসন্তকালে, যখন আমার বাবাকে জাতিসংঘে লিবিয়া মিশনের প্রথম সচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই শরৎকালেই আমার জন্ম।
তিন বছর পর, ১৯৭৩ সালে আমরা ত্রিপোলিতে ফিরে যাই। এরপরেও আমি চার কি পাঁচবার নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম, কিন্তু প্রতিবারই সংক্ষিপ্ত সফরে। কাজেই ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে যদিও আমি আমার জন্মস্থানেই গিয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু এটি ছিল আমার কাছে প্রায় সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি শহর।
-
গাদ্দাফির শাসনামলের ১০টি অবিশ্বাস্য সুবিধা: কতটুকু বাস্তব, কতটুকু প্রপাগান্ডা?
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির গুণগান সম্বলিত একটি ভাইরাল লিস্ট পাওয়া যায় ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইটে, যেখানে গাদ্দাফির শাসনামলে লিবিয়ানরা কত সুখে-শান্তিতে ছিল, সেটি বোঝানোর জন্য ১০টি বা ১২টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়।
লিস্টটি অত্যন্ত জনপ্রিয়, দুদিন পরপরই কেউ না কেউ এটি শেয়ার করে, এবং অবধারিতভাবে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কেউ না কেউ আমাকে সেখানে ট্যাগ করে এর সত্যতা জানতে চায়। অনেক দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত এর সত্যতা যাচাইমূলক একটি লেখা লিখেই ফেললাম।
-
গাদ্দাফির লিবিয়ায় ফিলিস্তিন (ফটোব্লগ)
আমাদের পুরো শৈশব-কৈশোরে আমরা টিভিতে “ইসরায়েল” নামটা শুনিনি। শুনেছি শুধু “ফিলিস্তিন” বা “দখলকৃত ফিলিস্তিক”।
ছোটকালে আমরা শুধু লিবিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন আল-জামাহিরিয়াই দেখতে পারতাম। বিটিভি দেখার সৌভাগ্য হয় নাই, বাট ধারণা করছি জামাহিরিয়া ছিল বিটিভিরই লিবিয়ান ভার্সন। সারাদিন শুধু গাদ্দাফিকেই দেখানো হতো।
সংবাদেও কোনো বৈচিত্র্য ছিল না। গাদ্দাফি কোথায় গিয়েছে, কী করেছে, কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে ফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছে – শুধু সেগুলোরই ম্যারাথন বিবরণ।
-
গাদ্দাফি যেভাবে আমেরিকার উপর বাটপারি করে ক্যু করেছিলেন
মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফি ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর, রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসির বিরুদ্ধে এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
রাজা ইদ্রিস আল-সেনুসিকে হাতে রাখার জন্য সিআইএ তাকে টাকা দিত। কিন্তু ইদ্রিস বৃদ্ধ হয়ে পড়ে পড়েছিলেন। দক্ষতার সাথে নিজের প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারছিলেন না। আমেরিকার কথামতো কাজ করতে পারছিলেন না। ফলে ১৯৬৯ সালে সিআইএ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করবে।
কিন্তু সিআইএর জানা ছিল না, একই সময়ে এক তরুণ আর্মি ক্যাপ্টেন, মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিও অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এবং সিআইএর ক্যুয়ের শিডিউলের কয়েকদিন আগেই গাদ্দাফি ইদ্রিসের বিরুদ্ধে ক্যু করে বসেন।
কত অজানা রে 🙂
তথ্যসূত্র: Joseph J. Trento এর লেখা বই Prelude to Terror
লিবিয়া এবং গাদ্দাফি বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়তে পারেন এখান থেকে। আর বিভিন্ন বইপত্র থেকে পাওয়া আকর্ষণীয় বিভিন্ন তথ্য অবলম্বনে আমার বিভিন্ন লেখা পাবেন এই লিঙ্কে।
-
জাতিসংঘের প্রতিনিধির পদত্যাগ: লিবিয়ার শান্তি কি তবে আরো পেছাল? (প্রথম আলোতে প্রকাশিত)
আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করার পর গত ২ মার্চ, সোমবার বিকেলে হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন লিবিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ঘাসান সালামে। তার পদত্যাগের ঘোষণাটি এমন এক সংকটময় মুহূর্তে এলো, যখন ১১ মাস ধরে চলা ত্রিপোলির গৃহযুদ্ধে এক অনিশ্চিত এবং ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি বিরাজ করছিল।
সোমবার বিকেলে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে আরবিতে টুইট করে সালামে জানান, স্বাস্থ্যগত কারণে তার পক্ষে আর এই চাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, ফলে তিনি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ৬১ বছর বয়সী সালামের পদত্যাগের পেছনে তার শারীরিক সুস্থতা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লিবিয়ার রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষ করলে সন্দেহ হয়, সালামে হয়তো লিবিয়ার পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়েই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
-
ফ্রান্স: বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান নিও কলোনিয়াল পরাশক্তি
ফ্রান্স হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান নিও কলোনিয়াল পরাশক্তি।
ভাগ্যবান এই কারণে, অধিকাংশ মানুষ সারাদিন আমেরিকা আর ইসরায়েলকেই গালাগালি করে। গত কয়েক বছরে অবশ্য সিরিয়া আর শিংজিয়াংয়ের কারণে রাশিয়া এবং চীনকেও অনেকে গালাগালি করা শুরু করছে। কিন্তু ফ্রান্সের নাম কারো মুখে শোনাই যায় না। অথচ ফ্রান্সের অন্যায় এদের কারো চেয়ে কোনো দিক থেকে কম না। ফ্রান্সই একমাত্র সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি, যারা এখনও তাদের সাবেক উপনিবেশগুলোকে প্রায় আগের মতোই শোষণ করে যাচ্ছে।
ফ্রান্স টিকেই আছে আফ্রিকাকে শোষণ করার মধ্য দিয়ে। এটা গোপন কিছু না। সময়ে সময়ে ফরাসিরা নিজেরাও এটা স্বীকার করে। সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেঁরা ১৯৫৭ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আফ্রিকার উপর নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে না পারলে একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে ফ্রান্সের কোনো জায়গা থাকবে না। পাঁচ দশক পর তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক ২০০৮ সালে সেটা আবারও নিশ্চিত করে বলেছিলেন, আফ্রিকা না থাকলে ফ্রান্স তৃতীয় বিশ্বের তালিকায় ছিটকে পড়ত। তিনি পরিষ্কারভাবেই স্বীকার করেছিলেন, ফ্রান্সের ব্যাঙ্কগুলোতে যে টাকা আছে, তার একটা বড় অংশ এসেছে আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোকে শোষণ করার মধ্য দিয়ে।
-
মস্কো সিজফায়ার ভেস্তে যাওয়ার পর বিবিসি বাংলার সাথে আমার সাক্ষাৎকার
গত ১৩ই জানুয়ারি রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে লিবিয়ার বিবাদমান দুই পক্ষের মধ্যে একটা সিজফায়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু জাতিসংঘ সমর্থিত সরকার জিএনএর প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সাররাজ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও বিদ্রোহী সেনাবাহিনীর প্রধান খালিফা হাফতার স্বাক্ষর না করেই ফিরে যান। এর ফলে লিবিয়ার ভবিষ্যত পুনরায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়ল।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশীদের অবস্থা নিয়ে ১৪ তারিখে বিবিসি বাংলার সাথে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছি। শুনতে পারেন নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে।