মুভি রিভিউ
-
আসগর ফরহাদির এ হিরো
দেখলাম ইরানি পরিচালক আসগর ফরহাদি পরিচালিত মুভি A Hero (2021)।
আসগর ফরহাদির আমি হিউজ ফ্যান। যেই লোক মাত্র সাতটা (এখন নয়টা হয়েছে) মুভি বানিয়ে তিনবার অস্কারে যায় এবং দুইবার অস্কার পায়, তাও বয়স চল্লিশ পেরুনোর আগে, তার ফ্যান না হয়ে উপায় কী?
আসগর ফরহাদির সবগুলো মুভিই দেখে শেষ করেছি। ইনক্লুডিং সে ফেমাস হওয়ার আগেরগুলো। এবং আমার মতে, সে বিদেশের সেটিংয়ে না গিয়ে ইরানের পটভূমিতে সিনেমা বানালেই তার বেস্টটা দিতে পারে।
-
ফটোকপিয়ার: পার্টি সংস্কৃতি এবং যৌন নিপীড়নের গল্প
দেখলাম নেটফ্লিক্সের ইন্দোনেশিয়ান মুভি ফটোকপিয়ার (Photocopier (2021)) পাওয়ারফুল কাহিনী। ক্রাইম, থ্রিলার, মিস্ট্রি জনরার।
ভার্সিটিতে পড়ুয়া এক মেয়ে, সুরিয়ানি তার নাট্যদলের সদস্যদের সাথে পুরস্কার পাওয়া উদযাপন করতে যায়। সেখানে সবার পাল্লায় পড়ে ড্রিংক করে অচেতন হয়ে পড়ে। রাত তিনটার সময় এক ড্রাইভার তাকে অচেতন, মাতাল অবস্থায় ঘরে পৌঁছে দিয়ে যায়।
পরদিনই কীভাবে যেন নেটে তার ড্রিঙ্ক করে অচেতন হয়ে পড়ে থাকার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ফলে তার ভার্সিটির স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যায়। ওদিকে রাত তিনটা বাজে অপরিচিত পুরুষ মাতাল অবস্থায় ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কারণে পড়া-প্রতিবেশীরাও নানান কথা বলতে থাকে। মুসলমান মেয়ে হয়ে এরকম আচরণ করায় সুরিয়ানিকে তার বাবা ঘর থেকে বের করে দেয়।
-
নেটফ্লিক্সের গাদ্দাফি এপিসোড: কতটুকু সত্য? কতটুকু প্রপাগান্ডা?
নেটফ্লিক্সের How to Become a Tyrant এর পঞ্চম পর্বটা সাবেক লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফিকে নিয়ে – কীভাবে গাদ্দাফি পুরো সমাজব্যবস্থাকেই নতুন করে গড়ে তুলেছিল।
এপিসোডটা মোটের উপর ভালো। এটার শুরুটাও ভালো ছিল। এখানে স্বীকার করা হয়েছে, গাদ্দাফি শুরুতে জেনুইনলিই মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটা রাষ্ট্রের জনগণকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে নিজেই নিজেকে দেশের জন্য অপরিহার্য্য বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল।
গাদ্দাফির যে সমালোচনাগুলো করা হয়েছে, তার অনেকগুলোই জেনুইন। গাদ্দাফি আসলেই সব ধরনের প্রেস ফ্রিডম, ট্রেড ইউনিয়ন, স্টুডেন্ট ইউনিয়ন – সোজা কথায় সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সব ধরনের উপায়কে নিষিদ্ধ করেছিল। এবং ৭৬ সালের ৭ই এপ্রিল সত্যিসত্যিই ছাত্র আন্দোলনের আয়োজকদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল।
-
যেভাবে একজন স্বৈরাচরী হবেন: নেটফ্লিক্সের ডকু সিরিজ
দেখলাম নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টারি মিনি-সিরিজ, How to Become a Tyrant (2021)। যদিও কিছু ক্ষেত্রে বায়াসড এবং ওভার সিমপ্লিফিকেশনের দোষে দুষ্ট, তারপরেও ওভার অল দুর্দান্ত একটা ডকুমেন্টারি। অতি অবশ্যই মাস্ট-ওয়াচ।
আপনার আশেপাশের নতুন নতুন স্বৈরশাসকদের দিকে তাকালে আপনি প্রায়ই দেখবেন, তাদের মধ্যে ক্লাসিকাল স্বৈরশাসকদের অনেক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। একদিকে তারা কবিতা লিখতে পছন্দ করে, ফুল ভালোবাসে, শিশুদেরকে আদর করে, জনগণের চিন্তায় তাদের রাতে ঘুম আসে না।
অন্যদিকে তারা নিজেদের নামে দেশের সবকিছুর নামকরণ করে, নির্লজ্জভাবে দেশের ইতিহাস বিকৃত করে, গুম-খুনের রাজত্ব কায়েম করে, কৃত্রিম শত্রু তৈরি করে দেশের সব সমস্যার জন্য তাদেরকে দায়ী করে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, দেশের ভেতরে সঙ্কট বেড়ে গেলে কৃত্রিমভাবে নতুন সঙ্কট করে জনগণের দৃষ্টি সেদিকে ফেরানোর চেষ্টা করে।
-
ঊনলৌকিক: অসাধারণ একটা অতিপ্রাকৃতিক অ্যান্থলজি ওয়েবসিরিজ
মহানগর না, এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে ফেভারিট বাংলা অ্যান্থলজি ওয়েব সিরিজ “ঊনলৌকিক“।
“চরকি” অ্যাপে রিলিজ হওয়া সিরিজটা সুপারন্যাচারাল ঘরানার। পাঁচটা এপিসোড। প্রতিটার কাহিনী ভিন্ন ভিন্ন – যেটাকে অ্যান্থলজি বলে। এপিসোডগুলো মাত্র ২৩ মিনিট করে। প্রতিটাই সুন্দর, তবে তৃতীয় এবং পঞ্চম এপিসোড দুটো একটু বেশিই ভালো লেগেছে।
গল্পগুলো চমৎকার। রচনায় শিবব্রত বর্মন। প্রথম এপিসোড “মরিবার হলো তার স্বাদ”-এর কাহিনী নেওয়া হয়েছে প্রথম আলোতে প্রকাশিত একই নামের তার একটি ছোট গল্প থেকে। এছাড়া “মিসেস প্রহেলিকা” এবং “দ্বিখণ্ডিত” এপিসোড দুটির কাহিনী নেওয়া হয়েছে তার “বানিয়ালুলু” নামের বই থেকে।
-
ডার্ক ওয়াটার্স: কর্পোরেট বিষের বিরুদ্ধে লড়াই
বই অবলম্বনে মুভি তো সেই প্রাচীন কাল থেকেই নির্মিত হয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লং রিড আর্টিকেল অবলম্বনেও বেশ কিছু চমৎকার মুভি নির্মাণের ট্রেন্ড শুরু হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিনের লং রিড আর্টিকেল “The Lawyer Who Became DuPont’s Worst Nightmare” অবলম্বনে তৈরি Dark Waters (2019) মুভিটা সেরকমই একটা মুভি। জঁনরা লিগ্যাল থ্রিলার। এবং অফকোর্স বেজড অন ট্রু স্টোরি।
-
দ্য ম্যান হু সোল্ড হিজ স্কিন: অদ্ভুত সুন্দর একটা আরব মুভি
রাক্বা, সিরিয়া, ২০১১।
লোকাল বাসে করে যাওয়ার সময় এক তরুণী আবির তার প্রেমিক স্যামকে ভালোবাসার কথা বলে ফেলে। আবেগে আপ্লুত হয়ে স্যাম সেখানেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে। বাসভর্তি মানুষের সামনে বিয়ের ঘোষণা দিতে গিয়ে উচ্চারণ করে বসে নিষিদ্ধ কিছু শব্দ – বিপ্লব, স্বাধীনতা।
এই ঘটনাই পাল্টে দেয় স্যাম এবং আবিরের জীবনকে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাবাহিনী স্যামকে তুলে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরিচিত এক পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে পালাতে পারলেও সিরিয়ায় থাকা তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্ডার দিয়ে পালিয়ে সে চলে যায় লেবাননে। আর ওদিকে পরিবারের চাপে অন্য এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে বেলজিয়ামে চলে যায় আবির।
-
দ্য কুরিয়ার: ওলেগ পেনকভস্কিকে নিয়ে তৈরি স্পাই ড্রামা
ওলেগ পেনকভস্কি। স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেওয়া এক সোভিয়েত মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার।
কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের প্রাক্কালে ওলেগ পেনকভস্কি স্বেচ্ছায় দুই আমেরিকান ছাত্রের মাধ্যমে মার্কিন দূতাবাসে বার্তা পাঠায়, তার কাছে গোপন তথ্য আছে, সেগুলো সে আমেরিকানদের কাছে পাচার করতে আগ্রহী। আমেরিকানদের জন্য সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো কঠিন ছিল। কাজেই তারা ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের শরণাপন্ন হয়।
দুই গোয়েন্দা সংস্থা মিলে এক ব্রিটিশ ব্যবসায়ীকে রিক্রুট করে, যার কাজ ছিল ব্যবসায়িক কাজে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে পেনকভস্কির সাথে দেখা করা এবং সেই সুযোগে গোপনে বার্তা আদান প্রদান করা। সোজা কথায় কুরিয়ার বা বার্তাবাহক হিসেবে কাজ করা।