বিশ্ব রাজনীতি
-
হাশেমী রাজবংশ: উত্থান এবং বিস্তার
বর্তমান যে আরব বিশ্ব, তার প্রতিষ্ঠার মূলে আছে দুটি রাজবংশ – সৌদ রাজবংশ এবং হাশেমী রাজবংশ।
সৌদ রাজবংশ সম্পর্কে তো সবাই জানে, কিন্তু সৌদরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাশেমী রাজবংশ ছিল সৌদদের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান “সৌদি আরব” তো বটেই, সিরিয়া, থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত সমগ্র আরব ভূমিই তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল।
-
ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস: আরব বিশ্বের ভেঙে পড়ার গল্প
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে, আরব স্বৈরাচারদের উত্থান-পতন নিয়ে, রাষ্ট্রগুলোর ভাঙ্গাগড়া নিয়ে গত কয়েক বছরে অনেক বই লেখা হয়েছে। এর মধ্যে জটিল তাত্ত্বিক বই যেমন আছে, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদদের লেখা বই যেমন আছে, তেমনি আছে সংবাদ সংগ্রহ করতে মধ্যপ্রাচের দেশে দেশে, যুদ্ধের ময়দানে ময়দানে ঘুরে বেড়ানো সাংবাদিকদের লেখা, যারা সঙ্কটগুলো দেখেছেন খুবই কাছ থেকে, যারা কথা বলেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারের সাথে, প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের সুখ-দুঃখ।
-
ইরাকের কুয়েত দখল এবং তার ফলাফল
আগস্টের ২ তারিখে কুয়েত দখল করে নেওয়ার পর ১৯৯০ সালের এই দিনে (২৮ আগস্ট) ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঘোষণা দেন, কুয়েত হচ্ছে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ।
কুয়েত দখলের পূর্বে সাদ্দামের সাথে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সাদ্দাম এমনকি কুয়েত দখলের পরিকল্পনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও জানিয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেছিলেন, এটা ইরাকের নিজস্ব ব্যাপার। আমেরিকার এ ব্যাপারে কোনো বক্তব্য নেই।
তার এই বক্তব্যকেই গ্রিন সিগন্যাল হিসেবে ধরে নিয়ে সাদ্দাম কুয়েত দখল করে বসেন। আর সাথে সাথে আমেরিকা তার অবস্থান পাল্টে ফেলে। সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে মিলে তারা শুরু করে উপসাগরীয় যুদ্ধ।
এই যুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনী প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। ইচ্ছাকৃতভাবে বিমান হামলা করে ইরাকের সিভিলিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যুদ্ধে সরাসরি নিহত হয় অন্তত ২৫ থেকে ৫০ হাজার ইরাকি। কিন্তু যুদ্ধের পরবর্তী দিনগুলোতে অবরোধের কারণে, পুষ্টিহীনতায়, চিকিৎসার অভাবে মারা যায় লক্ষ লক্ষ ইরাকি।
সাদ্দামের কুয়েত দখলের কারণেই সৌদি আরব মার্কিন সেনাদেরকে নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানায়। আর আরবের পবিত্র ভূমিতে মার্কিন সেনাদের এই উপস্থিতির প্রতিক্রিয়াই পরবর্তী দিনগুলোতে ওসামা বিন লাদেন এবং আল-কায়েদার উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কুয়েত দখলের মাধ্যমে সাদ্দাম এবং সেই দখলে সম্মতি দিয়ে, পরে পাল্টা অবস্থান নিয়ে আমেরিকা যে অন্যায় করেছিল, সেই অন্যায়ের খেসারত আজও দিয়ে যাচ্ছে ইরাক এবং আরব বিশ্বের সাধারণ জনগণ।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে আমার সবগুলো লেখা পাবেন এই লিঙ্কে। আর রেগুলার আপডেট পেতে চাইলে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস ও রাজনীতি পেজটিতে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
-
মোহাম্মদ বিন সালমান বনাম সুলতান বিন তুর্কি: এক রাজকীয় কিডন্যাপিংয়ের কাহিনী!
প্রিন্স সুলতান বিন তুর্কি এর আগেও একবার কিডন্যাপ হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে। সে সময় তাকে কিডন্যাপ করেন তার চাচাতো ভাই, সৌদি রাজপুত্র আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ। মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৬ সালে তিনি আবারও প্রায়ই একই পদ্ধতিতে দ্বিতীয়বার কিডন্যাপ হন। এবার তাকে কিডন্যাপ করেন তার আরেক চাচাতো ভাই, আরেক রাজপুত্র, মোহাম্মদ বিন সালমান!
সম্পূর্ণ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে রোর বাংলায়। পড়তে পারেন এখান থেকে। নিচে চুম্বক অংশ দেওয়া হলো:
-
গাদ্দাফির দৃষ্টিতে ইরাক আক্রমণের ফলাফল
২০০২ সালের অক্টোবরে, ইরাক যুদ্ধের ছয় মাস আগে, নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক স্কট অ্যান্ডারসন (Scott Anderson) লিবীয় নেতা মোয়াম্মার আল-গাদ্দাফির একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণের জন্য সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ততা, গণবিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদনসহ একের পর এক নানা অজুহাত তৈরি করছিল।
স্কট অ্যান্ডারসন ঐ সাক্ষাৎকারে গাদ্দাফিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “আমেরিকা যদি আসলেই ইরাক আক্রমণ করে, তাহলে কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে?”
দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে গাদ্দাফি তার স্বভাবসুলভ নাটকীয় ভঙ্গিতে দীর্ঘ বিরতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তর যেন তার তৈরিই ছিল। বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “বিন লাদেন।”
গাদ্দাফি বলেছিলেন,
কোনো সন্দেহ নেই ইরাক আক্রমণ করলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আল-কায়েদা। ইরাক হয়ে উঠবে আল-কায়েদার আক্রমণের স্টেজিং গ্রাউন্ড। কারণ সাদ্দামের সরকার যদি ধ্বসে পড়ে, ইরাকে অরাজকতা নেমে আসবে। যদি সেটা ঘটে, তাহলে আমেরিকার উপর আক্রমণ জিহাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সে সময় কেউ গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু এখন অনেক বিশ্লেষকই এ ব্যাপারে একমত যে, আফগানিস্তান যুদ্ধের পর যে আল-কায়েদা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, বা অন্তত আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল, ইরাক যুদ্ধই তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে গত এক দশকের যে সঙ্কট, দেশে দেশে গৃহযুদ্ধ, আল-কায়েদা ও আইসিসের উত্থান, তার সব কিছুর মূলে আছে ২০০৩ সালে আমেরিকার ইরাক আক্রমণ।
স্কট অ্যান্ডারসনের লেখা বই “ফ্র্যাকচার্ড ল্যান্ডস” থেকে। বইটির রিভিউ পড়তে পারেন এখান থেকে।
-
ডোভিড ওয়েইজ: ইসরায়েলের ধ্বংস চান যে ইহুদী ধর্মগুরু!
এই ভদ্রলোকের নাম ইসরোয়েল ডোভিড ওয়েইজ (Yisroel Dovid Weiss)। তিনি একজন ইহুদী ধর্মগুরু। ওয়েইজ হচ্ছেন বিশ্বের হাজার হাজার ইহুদীদের মধ্যে একজন, যাদের অবস্থান ইসরায়েল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, জায়নিজমের বিরুদ্ধে।
ওয়েইজের মা পোলিশ। এবং তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই নাৎসিদের হাতে গণহত্যার শিকার হয়েছিল। তারপরেও ওয়েইজ মনে করেন, ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা একটা ভয়াবহ ধরনের অন্যায়।
এবং এর জন্য তিনি শুধু ওয়ান স্টেট বা টু স্টেট সল্যুশন চান না। তিনি চান ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রের বিলুপ্তি। তিনি চান রাষ্ট্রটা থাকবে ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে, ইহুদীরা তাদের পাশাপাশি, তাদের অধীনে শান্তিতে বসবাস করবে।
তার বক্তব্যে পক্ষে তিনি তাওরাত থেকেই যুক্তি দেন। তার দাবি, ইসরায়েলেও যারা অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, ধর্মগুরু, তারা নিজেদের বাড়িতে ইসরায়েলের পতাকা ওড়ায় না, নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকে সেনাবাহিনীতে দেয় না। কারণ তারা জানে ইহুদী ধর্মের দিক থেকেও এটা বড় ধরনের অন্যায়।
অথচ আমাদের মুসলমানদের রাষ্ট্রগুলোর নেতারাও সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের পক্ষে সাফাই গাইছে!
আল-জাজিরার সাথে তার একটি সাক্ষাৎকার আছে। দেখতে পারেন এখান থেকে।
ফিলস্তিন-ইসরায়েল বিষয়ক আমার সবগুলো লেখা পড়ুন এখান থেকে।
-
যেদিন ইসরায়েল নিজেদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়েছিল!
২০০৫ সালের আজকের এই দিনটি (২২ আগস্ট) ছিল ফিলিস্তিনের গাজাবাসীদের জন্য আনন্দের একটি দিন। দীর্ঘ ৩৮ বছরের দখলদারিত্বের পর এদিন গাজা থেকে সর্বশেষ ইসরায়েলি সেটেলমেন্ট উচ্ছেদ করা হয়।
এই “ডিসএনগেজমেন্ট”-এর ঘটনা ঘটে ২০০০ সাল থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পরিপ্রেক্ষিতে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ইসরায়েল গাজা থেকে নিজেদের অবৈধ বসতিগুলো এবং সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়। যেসব ইহুদী সেটলার যেতে চায়নি, তাদেরকে সৈন্যরা জোর করে উচ্ছেদ করে।
গাজার মোট ২১টি সেটেলমেন্টের প্রায় ৮,০০০ সেটলারকে সে সময় উচ্ছেদ করা হয়। যাওয়ার সময় সৈন্যরা বুলডোজার দিয়ে সেটলারদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় যেন ফিলিস্তিনিরা সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে।
যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি, গাজা পরিণত হয়েছে উন্মুক্ত কারাগারে, তারপরেও ইসরায়েলিদেরকে উচ্ছেদ করতে পারাটা ছিল বড় একটা অর্জন।
-
আসাদ-মাখলুফ দ্বন্দ্বের পটভূমি
লিবিয়ার পরিস্থিতি খারাপ বলে ওদিকে সিরিয়াতে যে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেদিকে নজরই দেওয়া হয়নি। সিরিয়াতে বাশার আল-আসাদের সাথে রামি মাখলুফের সম্পর্কের এতটাই অবনতি ঘটেছে যে, সরকার রামি মাখলুফের সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তার ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে সিরিয়া শাসন করছিল দুইটা পরিবার – আসাদ পরিবার এবং মাখলুফ পরিবার। হাফেজ আল-আসাদের স্ত্রীর নাম ছিল আনিসা মাখলুফ। মাখলুফরা হচ্ছে তারই আত্মীয়-স্বজনরা। সিরিয়ার প্রায় সব ব্যবসা-বাণিজ্য এই দুই পরিবারের হাতে। এবং বলতে গেলে বেশিরভাগই মাখলুফদের হাতে। কারণ হাফেজ উঠে এসেছিল দরিদ্র কৃষক পরিবার থেকে, কিন্তু আনিসা ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী।