বই রিভিউ
-
২০১৯ সালে পড়া সেরা ৫টি বই!
বছরের শুরুতে গুডরিডসের রিডিং চ্যালেঞ্জে ৩০টা বইয়ের টার্গেট সেট করেছিলাম। এখন পর্যন্ত পড়েছি সাড়ে ২৯টা।
লেটেস্ট ট্রেন্ড হচ্ছে বছরজুড়ে পড়া সেরা ৫টা বইয়ের নাম শেয়ার করা। আমাকে মেনশন করেছেন ফেসবুক ফ্রেন্ড Imtiaz Mirza ভাই।
যেহেতু মাত্র ৩০টা পড়েছি, তাই বেছে বেছে ভালোগুলোই পড়ার চেষ্টা করেছি। এখান থেকে সেরা ৫টা বের করা কঠিন। র্যান্ডমলি ৫টার নাম বলে দিচ্ছি। অধিকাংশেরই রিভিউ আগেই দিয়েছি, তাই নতুন করে বেশি কিছু বলছি না। সবগুলো রিভিউ একত্রে পাওয়া যাবে এই পাতায়।
-
ড্যানিশ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়ার ইসলাম গ্রহণ এবং লিবিয়া ভ্রমণের গল্প
ড্যানিশ পর্যটক এবং সাংবাদিক ক্নুদ হাম্বোকে বলা হয় ড্যানিশ লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া। কারণ আসল লরেন্সের মতোই তিনিও ভালো আরবি জানতেন। তাদের দুজনেরই আরবি সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ ছিল, দুজনেই মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল এলাকাজুড়ে ভ্রমণ করেছিলেন এবং ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের প্রতি শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মধ্যপ্রাচ্যের উপর লেখালেখি করেছিলেন এবং সর্বোপরি দুজনেই ছিলেন আরবদের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামের একনিষ্ঠ সমর্থক।
তবে যে জায়গায় ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং গুপ্তচর টি.ই. লরেন্সের চেয়ে ক্নুদ হাম্বো এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে তিনি আরব এবং মুসলমানদের প্রতি তার পূর্ববর্তী তাচ্ছিল্যকে অতিক্রম করে পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। এবং ১৯৩০ সালে লিবিয়া ভ্রমণ ওমর আল-মুখতারের সঙ্গী মুজাহেদিনদের সংগ্রামে প্রভাবিত হয়ে তিনি তাদেরকে সাহায্য করতে ব্রতী হয়েছিলেন।
-
কর্দোভার খ্রিস্টান শহিদরা: ডঃ ইয়াসির ক্বাদি
বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার ডঃ ইয়াসির ক্বাদি আজকে অদ্ভুত এবং চমৎকার একটা বিষয় নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছেন – “ক্রিশ্চিয়ান মার্টায়ার্স অফ কর্দোভা”। এই লেখাটা তারই অনুবাদ।
৮৫০ সাল থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েকশো বছর পর্যন্ত আন্দালুসে এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছিল। খ্রিস্ট ধর্মগুরুদের অনেকে সে সময় শহরের কেন্দ্রে অথবা মসজিদের সামনে গিয়ে উপস্থিত হতো, এরপর আল্লাহ্কে বা মুহাম্মাদ (সা)-কে প্রকাশ্যে জঘন্য ভাষায় গালাগালি করত।
তারা জানত এই ধরনের গালাগালির শাস্তি কারাগার অথবা মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু তারপরেও তারা এই কাজ করত। ধারণা করা হয় সে সময় এরকম কাজের জন্য প্রায় ৫০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, বা তাদের ভাষায় এরকম ৫০ জন খ্রিস্টান ধর্মগুরু “শহিদ” হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এমনিতে যারা সমাজের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সম্মানিত (তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে) হিসেবে বিবেচিত, কেন তারা এরকম অদ্ভুত আচরণ করত?
-
গাদ্দাফিকে উৎখাত করতে গিয়ে আমেরিকা যেভাবে ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছিল!
আশির দশকে আমেরিকা গাদ্দাফিকে হত্যার আয়োজন করছিল।
শুধু আমেরিকা বললে ভুল হবে। সেসময় বিভিন্ন দেশের সাথে গাদ্দাফির সম্পর্ক খারাপ ছিল। সিআইএর তথ্য অনুযায়ী আমেরিকা ছাড়াও ফ্রান্স, চাদ, মিসর, সুদান, মরক্কো, সৌদি আরব, এমনকি ইরাক পর্যন্ত গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আগ্রহী বিদ্রোহীদেরকে সাহায্য করে আসছিল।
গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম কারণ ছিল। ফ্রান্স এবং আমেরিকার প্রধান কারণ ছিল চাদের উপর গাদ্দাফির হস্তক্ষেপ। চাদ ছিল ফ্রান্সের কলোনি। স্বাধীনতার পরেও সেখানে ফ্রান্সের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। কিন্তু গাদ্দাফি যখন ১৯৭৮ সালে চাদের একটি অংশকে লিবিয়ার ভূখণ্ড দাবি করে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠান, তখনই প্রধানত ফ্রান্স এবং সেই সাথে আমেরিকা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সম্ভাবনা বিচরণ করতে শুরু করে।
-
পার্মানেন্ট রেকর্ড: এডওয়ার্ড স্নোডেনের আত্মজীবনী
এডওয়ার্ড স্নোডেনকে কি পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু আছে? মনে হয় না। এডওয়ার্ড স্নোডেন-অ্যাসাঞ্জরা হচ্ছে এই সময়ের বিপ্লবী গেরিলা, অস্ত্রের পরিবর্তে প্রযুক্তিই যাদের শেষ ভরসা।
পার্মানেন্ট রেকর্ড (Permanent Record) বইটা এডওয়ার্ড স্নোডেনের আত্মজীবনী। মিডিয়াতে আমরা স্নোডেনের ফাঁস করা তথ্যগুলো সম্পর্কেই বেশি আলোচনা শুনি, সেই তুলনায় ব্যক্তি স্নোডেন সম্পর্কে খুব বেশি আলোচনা শুনি না। যেটুকু শুনি, “লো লেভেল টেক কন্ট্রাক্টর টার্নড হ্যাকার”, সেটুকুও মার্কিন সরকারি ভাষ্য দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। এই বইটা স্নোডেন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের সেই ঘাটতিটুকুই পূরণ করবে।
বইটাতে স্নোডেনের ফাঁস করা মার্কিন গোয়েন্দাসংস্থাগুলোর গোপন তথ্য সম্পর্কে, কিংবা মার্কিন প্রশাসনের গোপন কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন এমন কোনো চাঞ্চল্যকর তথ্য নেই, যা আমরা জানি না। বইটার ফোকাস মূলত স্নোডেনের নিজের জীবন। ছোটকাল থেকে ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি পরিবারে তার বেড়ে ওঠা, অসাধারণ মেধাবী হিসেবে অল্প বয়সেই দক্ষ হ্যাকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা, কিশোর বয়সেই নিউক্লিয়ার ফ্যাসিলিটির সার্ভার হ্যাক করে তাদের কাছ থেকে চাকরির অফার পাওয়া – প্রতিটা অধ্যায়েই স্থান পেয়েছে তার জীবনের এরকম ইন্টারেস্টিং ঘটনাগুলো, যেগুলো এতদিন আমাদের কাছে অজানা ছিল।
-
অ্যানাটমি অফ টেরর: সন্ত্রাসবাদ নিয়ে এফবিআইর পদত্যাগী এজেন্টের অসাধারণ একটা বই
সাবেক এফবিআই স্পেশাল এজেন্ট আলি সুফানের লেখা অ…সাধারণ একটা বই। বিস্তারিত রিভিউ পরে কখনও দিবো, আপাতত আলি সুফানের পরিচয় এবং এই বইয়ের পেছনের কাহিনীটা বলি। আলি সুফান হচ্ছেন লেবানিজ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। ১৯৯৮ সালে তিনি ছিলেন সমগ্র এফবিআইর মাত্র ৮ জন আরবি ভাষা জানা এজেন্টের মধ্যে একজন। সে সময় আল-কায়েদা ইয়েমেনে মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস কোলের উপর আত্মঘাতী হামলা চালালে তাকে লীড ইনভেস্টিগেটর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
৯/১১ এর হামলার সময়ও আলি সুফান তদন্তের কাজে ইয়েমেনেই ছিলেন। সে সময়ই তিনি আগে থেকে ইয়েমেনে বন্দী থাকা বিন লাদেনের সাবেক ড্রাইভারের মুখ থেকে খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ বিভিন্ন টপ লেভেল আল-কায়েদা নেতার ৯/১১ এর হামলার সাথে সম্পৃক্ততার স্বীকারোক্তি আদায় করেন। কোনো রকম টর্চার ছাড়াই, দিনের পর দিন আলোচনা এবং জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে।
-
ইনসাইড দ্য ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স: দুঃসাহসী নারী গেরিলা জোহরা দ্রিফ এর আত্মজীবনী
ঔপনিবেশিক ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ, বিশেষ করে এই যুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের যুদ্ধের উপর নির্মিত দ্য ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স (The Battle of Algiers) সিনেমাটা হয়তো অনেকেই দেখেছেন। ঐ সিনেমায় যে তিন নারী গেরিলাকে দেখানো হয়েছিল, জোহরা দ্রিফ (Zohra Drif) ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। ইনসাইড দ্য ব্যাটেল অফ আলজিয়ার্স (Inside the Battle of Algiers: Memoir of a Woman Freedom Fighter) নামের এই বইটা তারই আত্মজীবনী।
বইটার ভূমিকা লিখেছেন বিখ্যাত কূটনীতিক লাখদার ব্রাহিমি, যিনি আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্বকালীন সময়ে ভার্সিটিতে জোহরার সহপাঠী ছিলেন। লাখদার ব্রাহিমি ছিলেন এক সময় আলজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে ২০১৪ সালে সিরিয়ার যুদ্ধের সময় সিরিয়ায় নিযুক্ত জাতিসংঘের এবং আরব লীগের বিশেষ দূত। বইটার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন Farrand G. Andrew।
-
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ: কিছু নির্মোহ পয়েন্ট
পড়লাম বহুল আলোচিত-সমালোচিত বই – আরিফ আজাদের প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ১ম পর্ব। এটাকে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদের ঠিক রিভিউ বলা যাবে না, এটা জাস্ট আবেগ বর্জিত কয়েকটা পয়েন্টে আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া:
১। বইয়ের কয়েকটা চ্যাপ্টার বেশ ভালো। বিশেষত যেসব চ্যাপ্টারে বিজ্ঞান নেই, শুধু দর্শন আছে, সেগুলো ভালো। সবচেয়ে ভালো সেসব অধ্যায়, যেগুলোতে কুরআনের মোজেজা বা কুরআন সম্পর্কে নাস্তিকদের সিলি প্রশ্নের জবাব তুলে ধরা হয়েছে। যেমন জুলকারনাইনের পঙ্কিল জলাশয়ে সূর্যাস্ত, নারী মৌমাছি, মুসা (আ) বনাম ইউসুফ (আ) এর বাদশাহ টাইটেল এগুলো।
এগুলো অবশ্য জানা বিষয়। আরিফ আজাদ নিজে আবিষ্কার করেননি, সেটা তিনি দাবিও করেননি। কোনো টপিকের উপর বিভিন্ন স্থানে থাকা তথ্য নিজের ভাষায় লিখে, একত্রিত করে বই প্রকাশ করাটাও কৃতিত্বের কাজ। আর আমরা যারা ব্লগে বিচরণ করে বড় হয়েছি, তাদের কাছে এগুলো জানা হলেও নতুন পাঠকদের অনেকের কাছেই অজানা হতে পারে। তারা এই টপিকগুলো থেকে উপকৃত হবে।