বর্ন এ কিং: রূপালি পর্দায় বাদশাহ ফয়সাল

বর্ন এ কিং (Born a King) (2019) – পুরাই আনএক্সপেক্টেড একটা মুভি। সৌদি বাদশাহ ফয়সাল বিন আব্দুল আব্দুল আজিজের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের চিত্রায়ন।

সিনেমার কাহিনী ১৯১৯ সালের। সে সময় ব্রিটিশ সরকার আব্দুল আজিজ বিন সৌদকে ব্রিটেন সফরের নিমন্ত্রণ জানায়। কিন্তু আব্দুল আজিজ তখন শেরিফ হুসেইনের সাথে যুদ্ধের আশঙ্কায় দেশ ত্যাগ করার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। তার পরিবর্তে তিনি ইংল্যান্ডে পাঠান তার ছেলে, ভবিষ্যত বাদশাহ ফয়সালকে। সে সময় বাদশাহ ফয়সাল ছিলেন মাত্র ১৪ বছর বয়সী!

প্রিন্স ফয়সালের ইংল্যান্ড সফরের আয়োজনের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ছিল ব্রিটিশ ইন্টালিজেন্স অফিসার জন ফিলবি (পরবর্তীকালের ডাবল এজেন্ট কিম ফিলবির বাবা)। সে চাইছিল আলে-সৌদের হাতে পুরো সৌদি আরবের ক্ষমতা তুলে দিতে। অন্যদিকে একই সময়ে আরেক ইন্টালিজেন্স অফিসার, লরেন্স “অফ অ্যারাবিয়া” লবিয়িং করছিল সৌদদের প্রতিদ্বন্দ্বী শেরিফ হুসেইনের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য।

তাদের এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই কিশোর ফয়সাল ইংল্যান্ডে গিয়ে উপস্থিত হয়। ইংল্যান্ড ছিল তার জন্য রূপকথার জগতের মতো। সারাজীবন একটা পাকা বাড়ি, পাকা রাস্তা না দেখা ফয়সাল যখন বিশাল বিশাল দালান, রেলগাড়ি, হোটেলের দামী স্যুইট দেখে, তখন সে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়।

ইংল্যান্ডে প্রিন্সেস ম্যারির সাথে ফয়সালের সুন্দর, বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে (এই অংশটা ফিকশনাল কী না, নিশ্চিত না)। কিন্তু সেখানে প্রধানত অনিশ্চয়তার মধ্যেই তার দিন কাটতে থাকে। লর্ড কার্জন কি তার সাথে শেষ পর্যন্ত দেখা করবে? সে কি কার্জনকে কনভিন্স করতে পারবে? যদি না পারে, তাহলে ফিরে গিয়ে বাবার কাছে মুখ দেখাবে কীভাবে?

শেষ পর্যন্ত কার্জনের সাথে ফয়সালের সাক্ষাৎ হয়। এবং কিশোর ফয়সাল কার্জনকে বোঝাতে পারে, শেরিফ হুসেইন না, তার বাবাই পারবে পুরো সৌদি আরবকে একত্রিত করতে। তার ভাষায়, শেরিফ হুসেইন এবং তার ছেলেদের হাতে দুই নদীর (টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস) মধ্যের এলাকা, শাম আর জর্ডান ছেড়ে দিন, কিন্তু জাজিরাতুল আরব আমার বাবার।

তার সাথে এই মিটিংয়ের পরেই কার্জন তাকে দ্বিতীয়বার মিটিংয়ের জন্য ডেকে পাঠান। এবারের মিটিং হয় চার্চিল এবং স্বয়ং রাজা জর্জের সাথে। এবং এই মিটিংয়ের পরেই ব্রিটিশরা আব্দুল আজিজকে নাজদের সুলতান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা পরবর্তীতে সমগ্র আরব উপদ্বীপকে একত্রিত করে “সৌদি আরব” রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এবং সেই প্রতিষ্ঠা্র ঘোষণাও দেন বাদশাহ ফয়সাল।

সিনেমাটা দারুণ। বিশেষ করে ১৯১৯ সালের আরবের যে চেহারা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, মাটির তৈরি বাড়িঘরের শহর, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সেই শহরের সরু অলিগলির মধ্য দিয়ে ছুটাছুটি করা, সেটা দুর্দান্ত। প্রিন্সেস ম্যারির সাথে ফয়সালের ঘোড়দৌড়ের একটা দৃশ্য আছে, ওটাও চমৎকার। ইতিহাসে কিছুটা পক্ষপাতিত্বের কথা মনে হতে পারে, কিন্তু সিনেমা হিসেবে হাইলি রেকমেন্ডেড।

বুকমার্ক করে রাখতে পারেন, কিন্তু এখন সম্ভবত দেখতে পারবেন না। মাত্র কয়েকদিন আগে রিলিজ পেয়েছে। টরেন্টে ৩.৫ গিগার একটা প্রিন্ট আছে, কিন্তু সেটা আরবি ডাবিং। এবং ইংরেজি সাবটাইটেল এখনও কোথাও আসেনি। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আরবিটাই দেখে ফেলেছি। যারা আরবি বোঝেন, তারা দেখতে পারেন, কিন্তু তারপরেও সৌদি (খালিজি) আরবি অ্যাকসেন্ট বুঝতে কষ্ট হয়।

আইএমডিবি রেটিং 7.5।

আমার লেখা সবগুলো মুভি-রিভিউ পাবেন এই লিঙ্কে

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *