Views: 43
নো ডিয়ার মিডিয়া অ্যান্ড সেক্যুলার ভাই-বেরাদার, আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য এয়ারপোর্টে ভিড় জমানো মরিয়া মানুষেরা “আফগান জনগণ” না। ওরা আফগান জনগণের খুবই খুবই খুবই ক্ষুদ্র একটা অংশ। এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে তালেবানকে স্বাগত জানাচ্ছে।
মূল আফগান জনগণ তারাই, যারা তালেবানকে কতটুকু সমর্থন করে সেটা পরে বোঝা যাবে, কিন্তু তারা অ্যাটলিস্ট আমেরিকা এবং তার পাপেট কাবুল গভর্নমেন্টের চেয়ে তালেবানের টেকওভারকে প্রেফার করে। এবং পুরো দেশজুড়ে অন্য কোথাও তারা এরকম উদ্বিগ্ন হয়ে পালানোর চেষ্টা করেনি, মরিয়া হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি বলেই তালেবানের পক্ষে বিনাযুদ্ধে, শান্তিপূর্ণভাবে মাত্র এক সপ্তায় পুরো দেশ জয় করা সম্ভব হয়েছে।
তাহলে এই মরিয়া হয়ে পালানোর চেষ্টা করা লোকগুলো কারা? হতে পারে এদের একটা অংশ পূর্বের সরকারের বিভিন্ন অপকর্মের সহযোগী, যারা এখন ধরা পড়ার ভয়ে ভীত। প্রতিটা সরকারেই এরকম কিছু মানুষ থাকে, যারা সরকারের অপকর্মের, জুলুমের সহযোগী হয়, এরপর সরকারের পতন ঘটলে না পালিয়ে তাদের কোনো উপায় থাকে না।
অথবা হতে পারে এই লোকগুলোর একটা অংশ জাস্ট সুযোগ সন্ধানী, সুবিধাভোগী। বিনা খরচে, বিনা চেকিংয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত, গরীব আফগানিস্তান ছেড়ে নিশ্চিত আমেরিকার জীবনে পাড়ি জমাতে চাচ্ছে। যেরকম প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রপথে ইতালিতে যেতে চায়।
কিন্তু এই সম্ভাবনা কম যে, এই লোকগুলো কাবুল সরকারের নীতি-নির্ধারণী কেউ, অথবা সেনাবাহিনী কমান্ডার ধরনের কেউ। ঐ ধরনের লোকদের সেফ প্যাসেজ আগেই রেডি করা থাকে।
এই ধরনের লোকদের, যারা নীতি-নির্ধারণী পদে ছিল, যারা শুরু থেকেই দখলদার বাহিনীকে সাহায্য করেছে, তাদের হয়ে কাজ করেছে, তাদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু এর বাইরে বিপুল সংখ্যক আফগান জনগণ, যারা জীবন ধারণের জন্য দখলদার বাহিনীর অধীনে বিভিন্ন চাকরি করেছে, সেটা হতে পারে সিকিউরিটি ফোর্সের নিচের দিকের চাকরিও – তাদের প্রত্যেকের বিচার করতে গেলে দেশ কখনোই আগাবে না। সেজন্যই দেখবেন তালেবান তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে।
যখন দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বাধে, তখন ব্যাপারগুলো অনেক সিম্পল থাকে। কিন্তু যখন দখলদারিত্ব এবং বিদ্রোহ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে, তখন ব্যাপারগুলো এরকম সিম্পল থাকে না। আপনি খোঁজ নিলে দেখবেন একই পরিবারের দুই ভাই – এক ভাই হয়তো কাবুল সরকারের সেনাবাহিনীতে চাকরি করে, আরেক ভাই হয়তো তালেবানের পক্ষে যুদ্ধ করে। দিনে দুইজন দুই পক্ষের হয়ে সার্ভ করছে, রাতে পাশাপাশি বসে খাবার খাচ্ছে।
নাহ কল্পনা না, লিবিয়াতে এ ধরনের ঘটনা নিজের চোখে দেখেছি। আমাদের বাড়িওয়ালাদের পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই ছিল গাদ্দাফির পক্ষে, দুই ভাই ছিল বিদ্রোহীদের পক্ষে। এবং বিদ্রোহীরা শহরে প্রবেশ করার পর প্রথম দুইদিন সত্যি সত্যিই এরকম ঘটেছে – দিনের বেলা দুই ভাই দুই বাহিনীর হয়ে গুলি চালিয়েছে বা গোপনে তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে, রাতে পাশাপাশি বসে খাবার খেয়েছে।
যুদ্ধ শেষে এসব ঘটনার বিচার করা যায় না। গণহারে শাস্তি দেওয়া যায় না। সেটা করতে গেলে কখনোই শান্তি আসে না। যুদ্ধ মানুষকে অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পথ বেছে নিতে বাধ্য করে। যে তালেবানের পক্ষে গেছে, এমন হতে পারে তার কোনো নিকটাত্মীয় মার্কিন বিমান হামলায় মারা গিয়েছিল। আর তার আরেক ভাই যে তালেবানের বিরুদ্ধে গেছে, এমন হতে পারে তার কোনো নিকটাত্মীয় তালেবানের আত্মঘাতী হামলায় “কোল্যাটেরাল ড্যামেজ” হিসেবে মারা গেছে। টপ লিডার আর কমান্ডারদের বাইরে এসব সাধারণ মানুষকে আপনি কীভাবে বিচার করবেন?
সেজন্যই তালেবান অত্যন্ত প্র্যাগমাটিকলি এদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। এবং তাদের এই অ্যাপ্রোচের কারণেই সাধারণ আফগানরা, এমনকি তালেবান-বিরোধীরাও আশ্বস্ত হয়েছে। এবং বিনাযুদ্ধে, নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে একের পর এক প্রভিন্সিয়াল ক্যাপিটালের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়েছে। রক্ষা পেয়ে গেছে দুই পক্ষেরই অগণিত প্রাণ।
এখন এতসব কিছুর পরেও অনেকে পালাতে চাইবে। অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু এটাকে “আফগান জনগণ” অভিহিত করে মায়াকান্না করাটা যেমন একদিকে মিডিয়ার ভণ্ডামি, তেমনি অন্যদিকে এটা নিয়ে হাসিঠাট্টা করাটাও (অনেকে প্লেন থেকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনায়ও হাসাহাসি করছে) অমানবিকতা।
কারণ আপনি জানেন না এখানে সবাই উচ্চ পর্যায়ের দালাল কিনা। এমনও হতে পারে তারা জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আমেরিকানদের অধীনে চারি করেছিল, এখন ভয় পাচ্ছে। অথবা এমনও হতে পারে তারা জাস্ট সুযোগ সন্ধানী। এবং এরকম সুযোগ সন্ধানী আপনার আশেপাশে বাংলাদেশীও কম নাই।
প্রতি বছর ৯০% মুসলমানের দেশ ছেড়ে, আল্লাহর উপর ভরসা না রেখে, মুসলমান দেশগুলোর আইন-কানুন ভেঙ্গে, হারাম পথে, পথে পথে একাধিকবার হারাম ঘুষ দিয়ে, কাফেরদের দেশ ইতালিতে যাওয়ার সময় সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুবরণ করে, আপনি কি তখনও হাসাহাসি করবেন?
আপনি যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন এখন পর্যন্ত তালেবান খুবই প্র্যাগমাটিক আচরণ করছে। বিপরীতে অসহিষ্ণুর মতো আচরণ করছে মিডিয়া এবং তাদের বাংলাদেশী ফ্যানবয়রা। এরা তালেবানের চেয়েও উগ্র, প্রতিশোধ-পরায়ণ। তালেবান সাধারণ ক্ষমা করে দিয়েছে, কিন্তু এরা ক্ষমা করতে আগ্রহী না।
তালেবানকে নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার তেমন কিছু নাই। তালেবান নারীশিক্ষা বন্ধ করে দিবে – এগুলো পশ্চিমাদের মায়াকান্না। আমেরিকার বম্বিংয়ে শুধু মেয়েদের না, ছেলেদের স্কুলও ধ্বংস হয়ে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে মেয়েদেরকে স্কুলে যেতে হলে হিজাব পরতে হবে কিনা, সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো খুবই নিম্নমানের হিপোক্রেসি।
তালেবান যদি বোরকা পরতে বাধ্য করে, সেটা কাবুলের ক্ষুদ্র এলিট সোসাইটির বাইরে বৃহত্তর আফগানিস্তানের ধর্মীয় প্র্যাকটিস, ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর বিভিন্ন ড্রেসকোডে বাধ্য করাটা নতুন কিছু না। সৌদি আরব-ইরানে তো কয়েক দশক ধরে ছিলই, লিবারেলিজম আর সেক্যুলারিজমের তীর্থস্থান ফ্রান্সেও আছে। সেখানে উল্টাটা – তারা হিজাব পরতে দিবে না, কারণ সেটা তাদের মূল্যবোধের সাথে যায় না।
তালেবান নিয়ে যেসব উদ্বেগ ছড়ানো হয়, তার অধিকাংশই অতিরঞ্জিত, অথবা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাদেরকে নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার বেশি কিছু নাই। বরং উদ্বিগ্ন হওয়ার আছে তাদের ফ্যানবয়দেরকে নিয়ে, যারা দৃশ্যমানভাবেই তালেবানের চেয়েও অনেক বেশি উগ্র, যারা তালেবানের নামে সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করতে পারে না, যারা প্লেন থেকে পড়ে মানুষের মৃত্যুতেও ব্যথিত হয় না, বরং উল্লাস করে। এদেরকে নিয়ে আসলেই উদ্বিগ্ন হওয়ার আছে এবং এদের কাছ থেকে সাবধান হওয়ার দরকার আছে।