আবু মোহাম্মদ আল-মাসরির প্রোফাইল: ২০২০ বেস্ট আর্টিকেলস

১৯৯৮ সালের শেষের দিকে আল-কায়েদার এক মিসরীয় জিহাদি নেতা আফ্রিকা থেকে আফগানিস্তানে উপস্থিত হয়। এর আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সে সোমালিয়া, কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়ায় দায়িত্ব পালন করেছিল।

তার দ্বারা প্রশিক্ষিত সোমালিয়ান গেরিলাই ব্ল্যাক হক ডাউন করে মার্কিন সেনাদের লাশ মোগাদিশুর রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এবং তার পরিকল্পনাতেই সংঘটিত হয়েছিল ইস্ট আফ্রিকা এম্বাসী বম্বিং, যেই সন্ত্র‌াসী হামলায় নিহত হয়েছিল দুই শতাধিক, আহত হয়েছিল চার সহস্রাধিক, যাদের অধিকাংশই ছিল আফ্রিকান সিভিলিয়ান।

তার নাম ছিল আবু মোহাম্মদ আল-মাসরি।

আফগানিস্তানে পৌঁছার পরপরই ঐ আবু মাসরির কানে আসে, এক জর্ডানিয়ান-ফিলিস্তিনি আল-কায়েদা নেতা সন্দেহজনক আচরণ করছে। তাকে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে দেখা গেছে এবং রেডিওতে সাঙ্কেতিক ভাষায় কথা বলতে শোনা গেছে। আবু মাসরি নিজের অধীনস্ত লোকদেরকে পাঠিয়ে ঐ নেতাকে ধরে আনে এবং জিজ্ঞাসাবাদের পর তার মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে, সে আসলে জর্ডানীয়ান স্পাই!

সত্যিকার গুপ্তচরদের কাহিনী নিয়ে আমার লেখা বই “স্পাই স্টোরিজ” এখন আপনি পড়তে পারবেন অনলাইনেই। অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে। এই লিঙ্কে গিয়ে ইমেইল আইডি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে এরপর বিকাশ, রকেট বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মাত্র ৯৯ টাকা পরিশোধ করলেই আপনি পেয়ে যাবেন পুরো বইটি। পড়তে পারবেন মোবাইল এবং কম্পিউটার ব্রাউজার উভয় প্লাটফর্ম থেকেই। আর হার্ডকপি কিনতে চাইলে রকমারি তো আছেই।

এরকম ক্ষেত্রে আল-কায়েদার বা অধিকাংশী জিহাদী গ্রুপের প্র্যাকটিস ছিল ঘটনাস্থলেই গুলি করে মেরে ফেলা। কিন্তু ঐ স্পাই আবু মাসরিকে বলে, যদি তাকে সুষ্ঠুভাবে বিচারের আশ্বাস দেওয়া হয়, তাহলে সে সব তথ্য দিয়ে দিবে। আবু মাসরি তাতে রাজি হয়। তার দৃষ্টিতে প্রতিশোধের চেয়ে তথ্যের গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। সে তাকে ঘটনাস্থলেই হত্যা না করে হাত-পা বেঁধে নিজের গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে কাবুলের দিকে রওনা করে, সরাসরি বিন-লাদেনের সাথে দেখা করার জন্য।

দলের সবাই অবশ্য তার এ সিদ্ধান্তের সাথে একমত ছিল না। আল-কায়েদার সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান, আরেক মিসরীয় নেতা, সাইফ আল-আদেলের ইচ্ছা ছিল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য তাকে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা। সে তার অনুগত একটা দলকে নিয়ে আবু মাসরির গাড়ির পিছু নেয়, স্পাইটাকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা করার জন্য।

লোগারের কাছাকাছি পৌঁছার পর আবু মাসরি অদ্ভুত এক কাজ করে বসে। সে গাড়ি থামিয়ে সরাসরি সাইফ আল-আদেলের দলটার দিকে এগিয়ে যায়। এবং তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বলে, তারা নিজেরা আফগানিস্তানের শাসক না। দেশটার শাসনের ভার তালেবানদের হাতে। এবং বিন-লাদেন নিজেও তালেবান প্রধান মোল্লা ওমরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে। কাজেই কাউকে যদি শাস্তি দিতেই হয়, সেটা তালেবান দিবে, আল-কায়েদা না।

পদ অনুযায়ী সাইফ আল-আদেল ছিল আবু মাসরির চেয়ে সিনিয়র। কিন্তু তার যৌক্তিক তর্কের সামনে মাথা গরম সাইফ আল-আদেলকে হার মানতে হয়। সে পিছিয়ে আসে এবং ফিরে যায়। আবু মাসরি শেষ পর্যন্ত বিন লাদেনের সাথে সাক্ষাৎ করে তার সাথে পরামর্শ করে স্পাইকে তুলে দেয় তালেবানের হাতে। তালেবান তার বিচার করে এবং পরবর্তীতে মুক্তিও দেয়।

২০০১ সালে আফগানিস্তান দখলের পর এফবিআইর প্রথম টিমের সাথে সেখানে যখন স্পেশাল এজেন্ট আলি সুফান সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন, তখন সেখানে আল-কায়েদার পরিত্যাক্ত ঘাঁটিগুলো থেকে পাওয়া ডকুমেন্টগুলো থেকে তিনি দেখতে পান, আবু মাসরি ছিলেন আল-কায়েদার হায়ারার্কিতে সপ্তম শীর্ষ নেতা। কিন্তু উপরের যে ঘটনা, সেটা থেকে দেখা যায় তার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং আরো উচ্চপদস্থ নেতাদেরকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা ছিল অন্য অনেকের চেয়ে বেশি।

পড়ুন এরকম আরেকটি লং রিড আর্টিকেলের রিভিউ: দ্য অ্যাভেঞ্জার: লকারবি বম্বমেকারের সন্ধানে

বিন-লাদেনসহ শীর্ষ বেশ কিছু নেতার মৃত্যুর পর, বর্তমান আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরিও যখন মৃত্যুপথযাত্রী, তখন গত বছর নভেম্বরে এই আবু মোহাম্মদ আল-মাসরিকে নিয়েই বিশাল একটা প্রোফাইল তৈরি করেন এই সাবেক এফবিআই এজেন্ট আলি সুফান। তার যুক্তি অনুযায়ী, জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর আল-কায়েদার আমির হিসেবে এই আবু মাসরিই দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

আলি সুফানের অন্যান্য লেখার মতোই একটাও অসাধারণ একটা লেখা। প্রচুর অজানা তথ্যে এবং সেই সাথে উপযুক্ত বিশ্লেষণে পরিপূর্ণ। এই বছর পড়া বেস্ট আর্টিকেলগুলোর মধ্যে নিঃসন্দেহে এটাকে উপরের দিকে রাখব। আর্টিকেলটা বিশাল। পড়তে ৪৫-৫০ মিনিটের মতো সময় লাগবে।

যদিও আলি সুফান সঠিকভাবেই তথ্য দিয়েছিলেন, আবু মাসরি তখন ইরানে নজরবন্দী অবস্থায় জীবন-যাপন করছিল, কিন্তু তার ভবিষ্যদ্বাণী – জাওয়াহিরির মৃত্যুর পর সে হবে আল-কায়েদার প্রধান – আর সত্য হওয়ার উপায় নাই। কারণ গত অক্টোবরে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তেহরানের রাস্তায় আবু মাসরিকে এবং তার মেয়েকে চলন্ত মোটর সাইকেল থেকে গুলি করে হত্যা করে।

আর্টিকেলটার লিঙ্ক: https://ctc.usma.edu/next-line-lead-al-qaida-profile-abu-muhammad-al-masri

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *