স্যাটায়ার: এক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীর সৌদি সফর

এক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী গিয়েছে সৌদি আরবে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের আমন্ত্রণে।

আপনারা জানেন, মোহাম্মদ বিন সালমান তথা এমবিএস তার দেশকে আধুনিকায়ন করার চেষ্টা করছেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রাইভেটাইজ করার চেষ্টা করছেন। মানুষকে উদ্যমী করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারপরেও তেলের টাকায় আরাম-আয়েশে সারা জীবন কাটিয়ে অভ্যস্ত জনগণ ঝিমিয়েই আছে।

তো বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীকে পেয়ে এমবিএস তাকে বললেন, ইয়া আখি, অর্থাৎ হে ভাই, আপনি তো তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবী, কাজেই আপনার মাথায় তো পচ্চুর বুদ্ধি, আমাকে একটু বুদ্ধি দেন কীভাবে আমার দেশের মানুষকে উদ্যমী বানাতে পারি।

বুদ্ধিজীবী উত্তর দিলেন, শর্টকাটে মানুষকে উদ্যমী বানানোর একটাই উপায়। তাদেরকে পচ্চুর এনার্জি ড্রিঙ্ক পান করাতে হবে। তিনি এমবিএসকে পরামর্শ দিলেন, রাস্তায় রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে এনার্জি ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপন বসিয়ে দিতে। তাহলেই কয়েক মাসের মধ্যে মানুষ সুপার অ্যাকটিভ হয়ে যাবে।

বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিতে খুশি হয়ে এমবিএস তাকেই দায়িত্ব দিলেন এনার্জি ড্রিঙ্কের সুন্দর একটা বিজ্ঞাপন বানিয়ে দিতে। এরপর বুদ্ধিজীবীকে বিদায় দিয়ে তিনি ফিরে গেলেন তার ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর সিরিন ইয়াটে। ব্যস্ত হয়ে পড়লেন রাজকার্যে।

দুই সপ্তাহ পর এমবিএসের কাছে একটা ফোন এলো। ফোন করেছেন রিয়াদের গভর্নর, প্রিন্স ফয়সাল বিন বান্দার আল-সুলতান। গভর্নর জানালেন, এক বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী খুব সিম্পল একটা বিজ্ঞাপন ডিজাইন করে পাঠিয়েছে। এখন ক্রাউন প্রিন্সের অনুমতি পেলেই তিনি পুরো রিয়াদ এই বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড দিয়ে ভরিয়ে ফেলবেন।

এমবিএস ব্যস্ত মানুষ, ডিজাইন দেখার তার সময় নাই। তিনি ফোনেই জানতে চাইলেন বিজ্ঞাপনটা কীরকম। গভর্নর উত্তর দিলেন, খুবই সিম্পল। পাশাপাশি তিনটা ফ্রেমে তিনটা ছবি। প্রথমটাতে এক হতাশ, ভগ্নস্বাস্থ্য-বিশিষ্ট লোক শুয়ে আছে। দ্বিতীয়টাতে সে এনার্জি ড্রিঙ্ক খাচ্ছে। আর তৃতীয়টাতে সে পুরোপুরি ফিট, স্বাস্থ্যবান এবং উৎফুল্ল হয়ে গেছে।

এমবিএসের কেমন যেন একটু দ্যেজাঁভু হলো। তার মনে হলো, এরকম একটা গল্প তিনি আগে কোথাও শুনেছেন। সেই গল্পে এক পশ্চিমা আর্টিস্ট ঠিক এরকম একটা বিজ্ঞাপন বানিয়ে আরবের কোনো একটা দেশে প্রয়োগ করে। কিন্তু যেহেতু আরবদের সম্পর্কে তার বিশেষ কোনো ধারণা ছিল না, তাই স্বাভাবিকভাবেই সে সর্ববামে রেখেছিল হতোদ্যম মানুষের ছবি, এরপর ড্রিঙ্ক করার ছবি, এবং সর্বডানে উৎফুল্ল হওয়ার ছবি।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আরবরা সবকিছু পড়ে ডান দিক থেকে বাম দিকে। তাই তারা বিজ্ঞাপনটাকে উল্টোভাবে গ্রহণ করে। তাদের ধারণা হয়, উৎফুল্ল মানুষই বরং এনার্জি ড্রিঙ্ক খেলে দুর্বল হয়ে যায়। কাজেই তারা এনার্জি ড্রিঙ্ক খাওয়া আরও কমিয়ে দেয়।

এমবিএস বুঝে গেলেন এখানেও ঠিক একই জিনিস ঘটতে যাচ্ছে। কাজেই বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি গভর্নরকে নির্দেশ দিলেন, বিজ্ঞাপনটা মিরর করে এরপর পুরো সৌদি আরবের রাস্তা-ঘাটে বসিয়ে দিতে। এরপর এমবিএস বেরিয়ে পড়লেন দুই মাসের লম্বা বিদেশ সফরে। জ্যারেড কুশনারের সাথে সম্পর্কটা তাকে আবারও ঝালিয়ে নিতে হবে।

দুই মাস পরে সৌদি আরবে পা দিয়েই এমবিএসের চক্ষু চড়কগাছ। তার দেশের জনগণ আরও হতোদ্যম হয়ে গেছে। ব্যাপার কী? তদন্তে বেরিয়ে আসলো, বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডগুলো বসানোর পর এনার্জি ড্রিঙ্কের বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

এমবিএস প্রিন্স ফয়সালকে তলব করলেন। ক্রুদ্ধস্বরে তিনি জানতে চাইলেন, তার নির্দেশ মতো বিজ্ঞাপনগুলো কি মিরর করা হয়নি? করা হয়ে থাকলে এই অবস্থা কেন হলো?

প্রিন্স ফয়সাল ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলেন, তিনি বিজ্ঞাপনটা মিরর করেছেন ঠিকই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঐ বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীই বিজ্ঞাপনটা ডিজাইন করার সময় আরবদের মতো বাম দিক থেকে ডিজাইন করেছিল। এরপর সেটা মিরর করে দেওয়াতে এভরিথিং ব্যাক টু স্কয়ার ওয়ান হয়ে গেছে।

ক্ষুব্ধ এমবিএস এবার ফোন করলেন বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীকে – “তুই বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবী, তুই ডিজাইন করবি বাংলাদেশীদের মতো। তুই কেন আরবদের মতো ডান দিক থেকে ডিজাইন করে সবকিছু গড়বড় করে দিবি? হ্যাঁ? আরবদের সম্পর্কে এত বিশেষজ্ঞ হতে তোকে কে বলছে?”

বুদ্ধিজীবী আমতা আমতা করে দিলেন, “মিস্টার ক্রাউন প্রিন্স, আমি তো আসলে আরবদের মতো করে ডিজাইন করিনি। ইনফ্যাক্ট আরবদের সম্পর্কে আমার তেমন ধারণাও নাই। আমি শুধু দেখেছি আমাদের দেশের সবাই বাম দিকে থেকে ডিজাইন করে। তাই একটু ভাইরাল হওয়ার জন্য জাস্ট ডান দিক থেকে ডিজাইন করে দিয়েছি। আমার কী দোষ?”

=== === ===

উপরের অংশটি ছিল সৃজনশীল প্রশ্নের একটি উদ্দীপক। এবার এই উদ্দীপকের আলোকে নিচের প্রশ্নটির উত্তর দাও:
আলোচ্য বুদ্ধিজীবীর নাম কী?

— এক বুদ্ধিজীবীর সব বিষয়ে স্রোতের বিপরীতে অবস্থান নেওয়া প্রসঙ্গে।

Mozammel Hossain Toha
Mozammel Hossain Toha

জন্মের পর থেকেই লিবিয়ায় আছি। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছি একেবারে সামনে থেকে। আর সে কারণেই পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সত্ত্বেও আগ্রহ গড়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাস এবং রাজনীতিকে ঘিরে।

নিয়মিত লেখালেখি করছি সোশ্যাল মিডিয়ায়। আলোচনা করছি ইউটিউবে। এখন পর্যন্ত তিনটা বই প্রকাশিত হয়েছে: স্পাই স্টোরিজ, স্পাই স্টোরিজ ২ এবং গল্পগুলো সিরিয়ার

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *